স‍ৌরভ পাল


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

অসাধারণ তাঁরাই, যারা সবথেকে কঠিন কাজটা সব থেকে সহজ ভাবে করতে পারে এবং সাধারণের মতো করতে পারে। যেমনটা বিরাট কোহলি, রজার ফেডারার, সেরেনা উইলিয়ামস, মাইকেল ফেলপস কিংবা উইসেন বোল্টরা করে এসেছেন এবং এখনও করছেন। ব্যপারটা খুব সহজ আর কি! বিরাট কোহলি ব্যাট করবেন আর শতরান হবে। রজার ফেডারার, সেরেনা উইলিয়ামসরা টেনিস কোর্টে নামবেন আর গ্র্যান্ড স্ল্যামটা পকেটে নিয়ে বাড়ি চলে যাবেন। বোল্ট দৌড়বেন আর ফার্স্ট হবেন। আর ফেলপস, সাঁতার তো নয় যেন জলে হাত বোলান এবং সোনা জেতেন। বাইরে থেকে সহজ মনে হলেও কাজটা আদৌ সহজ নয়। সৌরদ্বীপের কাছেও কাজটা সহজ ছিল না। তবে, ওই যে- আবারও বলতে হয়, অসাধারণ তাঁরাই, যারা সবথেকে কঠিন কাজটা সব থেকে সহজ ভাবে করেন। আসল কথাটা হল, ছবি তো সবাই তোলে, কিন্তু এই ভাবে তোলে কয় জনা?  


ইদানীং যারা  কুমারটুলি-তে পা রেখেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই দেখেছেন, কাশীমিত্র ঘাট থেকে শুরু করে পটুয়া পাড়ার বাথরুম পর্যন্ত ফটো শিকারিদের আনাগোনা ঠিক কতটা বেড়েছে! সঙ্গে অবশ্যই ‘জ্যান্ত দুর্গা’রা থাকছেন। সবাই দুর্গা সেজে আসছেন, ছবি তুলছেন আর ফেসবুকের মুখ বদলাচ্ছেন। যা ‘ডিপি চেঞ্জ’ হিসেবেই পরিচিত। হিসেব কষলে হয়ত দেখা যাবে কুমারটুলি-তে যত সংখ্যক দুর্গা প্রতিমা তৈরি হয় তার থেকে ছবি শিকারি আর জ্যান্ত দুর্গার সংখ্যাটা বেশি। এবং সেটা অবশ্যই আশ্বিনেই। এই ট্রেন্ডটা বছর চার, পাঁচেক ধরেই চলছে।


তবে এবার একটা আলাদা কিছু ঘটল। সেটা সৌরদ্বীপের হাত দিয়েই। বলা ভাল মাথা দিয়ে। মহারাজা মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজের বাণিজ্য বিভাগের  ছাত্রের (২০১৫ পাস আউট)  এক বছরের ভাবনা অবশেষে ভূমিষ্ঠ হল।



‘রণে, বনে, জলে জঙ্গলে যেখানেই তাঁকে স্মরণ করিবে, পাইবে’। বিপদে পড়লেও না পড়লেও, তাঁকে পাওয়া যায়।  দেখাও যায়। গোটা কুমারটুলি ঘুরে ছবি তুলেছেন সৌরদ্বীপ (ঘোষ)। চায়ের দোকান, ময়লা ফেলার ভ্যাট থেকে শুরু করে গঙ্গার ঘাট থেকে ফুটপাত- সৌরদ্বীপের ক্যামেরা ফোকাস করেছে ব্যস্ত নাগরিক জীবনকে। আর প্রতিটা ফ্রেমেই ধরা পড়েছেন দেবী দুর্গা। দেবী আছেন, তবে প্রকট ভাবে নয়। আলোকচিত্রীর পরিভাষায়, ‘দুর্গা-কে রাখা হয়েছে আউট অব ফোকাসে’।



সৌরদ্বীপ জানাচ্ছেন, “দু্র্গা কেবল কুমারটুলিতে আছে, বা মন্দিরেই আছে-এই ভাবনাটাকে ভাঙতে চেয়েছি। তিনি ক্যাফে কফি ডে-তেও থাকতে পারেন আবার লালু দা-র চায়ের দোকানেও থাকতে পারেন। আমাদের চোখের সামনেই তিনি আছেন। দুর্গা আছেন অন্তরালে”।



শনিবার সৌরদ্বীপ তাঁর ফটো সিরিজ ফেসবুকে পাবলিশ করেছেন। ইংরাজিতে যার নামকরণ করা হয়েছে ‘ দেবী: হার অমনিপ্রেজেনস’ (The Devi: Her Omnipresence)। সৌরদ্বীপের এই ‘অন্তরাল’ ভাবনায় ‘দেবীত্ব’ পেয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুচন্দা। আর সব শেষে, যার কথা না বললেই নয়।  সৌরদ্বীপের ক্যামেরায় যিনি দেবী হয়ে উঠেছেন সেই বঙ্গ তনয়ার রূপসজ্জায় ছিলেন তনয়।  তাঁর ছোঁয়াতেই 'মাটির তাল থেকে মৃণ্ময়ী' হয়েছেন দেবী দুর্গা।