পুজা বসু দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সংসদের মনসুন সেশনের এক আলোচনায় বেশ মুগ্ধ হলাম। দীর্ঘ বাক বিতণ্ডায় বোঝা গেল, গম্ভীর মুখের সাংসদরা আদতে বেশ রসিক।  প্রশ্ন ছিল, কবে কলকাতার ইস্টওয়েস্ট মেট্রোর দরজা খুলবে শহরবাসীর জন্য? প্রশ্নের যা উত্তর দিলেন জনপ্রতিনিধিরা, তাতে মিল পেলাম বন্ধুদের আড্ডায় শোনা সেই গরু রচনার। যাই প্রশ্ন আসুক, উত্তরে থাকবে সেই গরুই। কারণ, ওটাই তো পড়া হয়েছে। ঠিক যেমনভাবে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে ধরলেন মমতার নাম, বা বেঙ্কাইয়া নাইডু ঢাল করলেন নরেন্দ্র মোদীকে. আদতে উত্তর থাকল অধরাই।  


মেট্রো রেল। মাটি ফুঁড়ে গড়গড়িয়ে চলা রেল আধুনিক সভ্যতার প্রতীক। ভারতে, এই শহরই সেই প্রথম গড়িয়েছে মেট্রোর চাকা। ১৯৮৪- তে সেই সুরঙ্গ পথের দিশা দেখিয়েছে 'পশ্চিমবঙ্গই'। মানতেই হবে, বাংলা যা আজ ভাবে, গোটা দেশ করে তার পর। আমার কথার মানে হল - ভাবনা চিন্তায় অগ্রগতি থাকলেও, কাজে বেশ কুড়ে আমরা। তাই মেট্রোর শুরুর শিরোপা অর্জন করলেও, শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটটা হাতছাড়া হয়েছে। পরে তৈরি হয়েও দেশের মধ্যে দিল্লির মেট্রো দুরন্ত। তাই জয়জয়কারও দিল্লির। পরিকল্পনা কিন্তু অনেক আছে পশ্চিম বঙ্গের। তার নমুনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে চারিদিকে। উত্তর- দক্ষিণ তো জুড়েছে আগেই, এবার পালা পূর্ব-পশ্চিমকে মেলানোর। দীর্ঘমেয়াদি এই পরিকল্পনার মেয়াদটা ঠিক কত, তার উত্তর নেই যদিও। তবে, কাজ চলছে। কখনও কাজে গতি বাড়ছে, কখনও কমছে। সমস্যার সমাধানের কোন পথ পাওয়া, বা জানা যাচ্ছে না।


২০০৮-সালেই পাশ হয় প্রস্তাব। কথা ছিল ২০১২-র মধ্যেই শুরু হবে চলাচল। কোথাও সুরঙ্গ করে, কোথাও আবার মাথার উপরে। হাওড়া থেকে শিয়ালদহ, বিবাদি বাগ হয়ে সল্টলেক সেক্টর ফাইভের মেট্রোর পথে পড়বে হুগলি নদীও। সেখানে মেট্রো আবার নামবে জলের নীচে। অর্থাত্ এই যাত্রা পথের বাড়তি আকর্ষণ। উত্সাহ তো ছিলই। বিশেষ করে চাকুরিরতদের। অফিস টাইমে মেট্রোর গতিতে এসি কোচে শিয়ালদহ বা ডালহাউসি পাড়া বা সেক্টর ফাইভে পৌঁছানো আম আদমির জন্য বিলাসিতা নিসন্দেহে।


নিয়ম মাফিক শুরু হয়েছিল খোড়াখুড়ির কাজ। যা গতি হারায় মাঝ পথেই। কখনও পুনর্বাসন-এর সমস্যা, তো কখনও জমি নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজিয়া। তার মধ্যে তো রাজনীতির চোখ রাঙানি আছেই. নিট ফল, এবরো খেবরো রাস্তা, কোথাও কোথাও ঢাউস হয়ে পড়ে থাকা আবর্জনার স্তুপ বা স্বাভাবিক গতিপথে বাধা। যেই যাত্রাই হতে পারত একটু স্বস্তির, তার জন্য যন্ত্রণা ভোগ এখন দ্বিগুণ। মন্ত্রীরা আশ্বাস দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু কাজ কতটা হচ্ছে তা বোঝার উপায় নেই। কারণ, প্রশ্নের সঠিক উত্তর নেই যে। ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো হবে। কিন্তু কবে হবে? সেটা তো জানা নেই। মানে সেই গরু রচনা। প্রশ্ন যা কিছুই হোক, উত্তর একটাই। অন্তত তেমনই মনে হল সাংসদদের উত্তরে।
 
এবার আসি এই বিষয়ে আমাদের জনপ্রতিনিধিদের রসবোধের ব্যাপারে। আগেই বলেছিলাম, সংসদে সিমিএমের মহম্মদ সেলিম জানতে চেয়েছিলেন কবে শরহবাসী পাবে প্রস্তাবিত প্রকল্প? উত্তরে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে ধরলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। সঙ্গে কৃতিত্ব দাবি করলেন। দলনেত্রীর নির্দেশে নাকি এগোচ্ছে কাজ। শুনেই রে রে করে ওঠেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী বেঙ্কইয়া নায়ডু। রেল তো কেন্দ্রের অধীনে। আর কেন্দ্রের সবকিছুই তো নরেন্দ্র মোদীর ইচ্ছায়। তাই তিনিই কৃতিত্বের দাবিদার। হায় রে, কলকাতা শহরের মেট্রোর নিত্যযাত্রীরা, একটু স্বস্তির আশার পরিবর্তে শেষ পর্যন্ত তাঁদের পাওনা হল শুধুই নেতা-মন্ত্রীদের কৃতিত্ব দাবির তরজা! সত্যি এই ঘটনায় কাজের কাজ কিছু না করতে পারলেও, অন্তত হাসিয়ে কিছুটা মন ভাল করলেন সাংসদরা।