সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, বাচিক শিল্পী 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ট্রোলিং ব্যাপারটা খুব পুরনো ব্য়াপার। এ সব সংসারে ছিল, সামাজিক স্তরে তো ছিলই। ছিল ব্যক্তিগত স্তরেও। মানুষ যে পেশায় যুক্ত সেখানেও তাঁকে ট্রোলড্ হতে হয়। 


তবে এখন ট্রোলিং (Trolling) বিশেষত, সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিং ব্যাপারটা তো একটা ব্যবসা-বাণিজ্যের পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে ওদের নিজস্ব 'অ্যালগরিদম'ও তৈরি হয়ে গেছে।  মানে, কতটা ট্রোলিং করা হবে, কী ভাবে ট্রোল করলে কী কী হবে--তার একটা হিসেব-নিকেশ। যা খুবই জটিল এক গণিত। আমার মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে এসব বোঝা কঠিন। 


আরও পড়ুন: প্রিয়জনকে হারিয়েও মহামারীতে মানুষের পাশে ছিলেন কবি, বলছে 'যুদ্ধজ্বর ও রবীন্দ্রনাথ'


তবে আমার ট্রোলড্ হওয়ার অভিজ্ঞতার ব্যাপারটা এখানে বলতে পারি। যেমন গত বছর যখন আমার কোভিড (covid) হয়েছিল তখন আমাকে ব্যাপক আকারে ট্রোলড হতে হয়েছিল। এবং তখন শুধু যে সাধারণ মানুষ এটা করেছিলেন তা কিন্তু নয়। বহু বিখ্যাত মানুষ-- ফিল্মমেকার থেকে শুরু করে গায়ক-গায়িকা পর্যন্ত নানা রকম অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেছিলেন। এমনকি শান্তিনিকেতন থেকেও আমাকে ট্রোলড হতে হয়েছিল। 


তবে সাধারণ ভাবে যেক্ষেত্রে আমাকে সব থেকে বেশি ট্রোলড হতে হয়, তা হল আমার পোশাক। আমার পোশাক নিয়ে মানুষের  অদম্য কৌতূহল। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেন, এটা ছেলেদের পোশাক না মেয়েদের। পাশাপাশি এটাও ঠিক, এ জন্য আমি প্রচুর প্রশংসাও পাই। অনেকেই আমার পোশাক নির্বাচন নিয়ে বা আমার জুয়েলারির রুচি নিয়ে অকুণ্ঠ প্রশংসা করেন। কিন্তু এ বিষয়ে ট্রোলাররা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাঁরা আমার যৌন প্রবৃত্তি মানে, আমার 'সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন' নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেন! 


আমার ট্রোলড হওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটা কথা বলার আছে। সেটা হল, আমাকে ট্রোলিংয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে ঋতুপর্ণ ঘোষের (Rituparno Ghosh) সঙ্গে আমার কী কী সাদৃশ্য বা বৈশাদৃশ্য সেটা নিয়ে বড় রকমের গবেষণা এবং তারই জেরে তৈরি হওয়া নানা মন্তব্য আমি নাগাড়ে পেতে থাকি। 


আর একটা কথা বলি। যেমন, এই কিছুদিন আগে আমি মৈনাক ভৌমিকের একটি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছিলাম। যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম তার নাম 'নাচু দে'। হ্যাঁ, সেটা নিয়ে ট্রোলড হওয়া হয়তো খুব আশ্চর্যের নয়-ও। তবে একটা মানুষ যখন একটা চরিত্রে অভিনয় করেন, তখন তো তাঁকে অনেকগুলি স্তর পেরিয়ে আসতে হয়। সেটা কিন্তু সাধারণ মানুষ বোঝেন না। ফলে ট্রোলিংয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটিকে দাগিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা থাকে। এই দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টাটাই কিন্তু ট্রোলিংয়ের একটা বড় ব্যাপার। আমার ট্রোলড হওয়ার অভিজ্ঞতা মোটামুটি এইটুকুই। 


আমি মনে করি, ট্রোলিং কিন্তু শুধু মাত্র এটা যাঁরা করছেন তাঁদের অসুস্থতারই নিদর্শন নয়, এর পিছনে এক বিরাট সামাজিক বৈষম্য়ের প্রভাব আছে। একজন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে হীনম্মন্যতায় ভুগতে-ভুগতে অন্যকে ট্রোল করেন, তাঁর নিজের ভেতরে যে 'ইনফিরিওরিটি কনপ্লেক্স' কাজ করে, তা থেকেই তিনি বা তাঁরা এটা করেন। তবে এটা মনোবিদেরা আমার থেকে অনেক ভাল ব্যাখ্যা করতে পারবেন। আমি এটুকুই বলব, ট্রোলাররা কিন্তু শুধুমাত্র নিছক মজা করার জন্য বা (কাউকে) 'একটু কটু কথা বলে দেখি কেমন লাগে'-- এটা ভেবেই ট্রোলিং করেন, তা নয়। তাঁদের এসব করার পিছনে একটা 'ডিপার সোশ্যাল রিজনিং' আছে।


এ ক্ষেত্রে জীবন আমাকে যে শিক্ষা দিয়েছে, তা হল, নীরবতা অবলম্বনের পাঠ, এড়িয়ে যাওয়ার পাঠ। এই সব ট্রোলারদের আমি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে চলি। আমার যদি কখনও মনে হয়, এটা নিয়ে আমার কিছু বলার দরকার, একমাত্র তখনই আমি কিছু বলি, না হলে বিষয়টাকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলি।  


(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)


আরও পড়ুন: শিল্পোদ্যোগী, ভাষাবিদ, গণিত-রচয়িতা এবং গদ্যকার-- নানা বাঙালির দ্যুতিতে উজ্জ্বল দিনটি