কলকাতার নয়া পুরবোর্ডের পথচলার শুরুতেই ধাক্কা। প্রয়াত হলেন প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র ফরজানা আলম। তাঁর মৃত্যু উসকে দিল বেশ কয়েকটি প্রশ্ন। বিড়ম্বনায় তৃণমূল।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

পুরভোটের আগেই রাতারাতি তার ওয়ার্ড বদল হয়েছিল। সাধারণ কাউন্সিলর নন। মেয়র পরিষদ সদস্যও নন। তিনি ছিলেন বিগত পুরবোর্ডের ডেপুটি মেয়র। অথচ ওয়ার্ড বদলের আঁচ ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তিনি। যখন টের পেলেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এরপর বাংলা বনধের দিন ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের ব্লক অফিস, ৮ বাই ২ পাম অ্যাভিনিউয়ে তাকে মারধরের অভিযোগ উঠল সুব্রত মুখার্জির ঘনিষ্ঠ মাখন লাল দাসের বিরুদ্ধে।


যিনি সেই ব্লকে তৃণমূল কংগ্রসের সভাপতি। শাস্তি দুরস্ত। তাকে দলীয় স্তরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হল না। তখন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৭ দিন। দেখতে আসেননি কোনও তৃণমূল নেতা বা মন্ত্রী। সোমবার রাত ৯ টায় বেলভিউতে নেতা-মন্ত্রীদের ভিড় তাই আগুনে ঘি ঢেলেছে।


কি কারণে মৃত্যু হল তার?  এই মৃত্যু স্বাভাবিক? নাকি ৩০শে এপ্রিলের মারধরে চোট পেয়ে আখেরে হৃদরোগে মারা গেলেন ৪৬ বছরের ফরজানা? স্বাভাবিক মৃত্যুর সার্টিফিকেট দিলেন ফিরহাদ হাকিম। তিনতিন বার মাখনলাল দাস কে নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও বাঁধা বুলি আউড়ে গেলেন অরূপ বিশ্বাস। দিল্লিতে দিদির কাছে চিকিত্সা করাতে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগে মাত্র ৩ দিনের জন্য গেছিলেন গ্রামের বাড়িতে। চিকিত্সা করাতে আর যাওয়া হলনা ফরজানা আলমের। শুধু থেকে গেল একটা মৃত্যু আর একরাশ বিতর্ক।


সে অর্থে রাজনীতির মানুষ ছিলেন না ফরজানা আলম। ২০১০ সালে ভোট জিতে ডেপুটি মেয়র। মূলত কুণাল ঘোষের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত কাছাকাছি ছিলেন কুণাল। ফলে গুরুত্ব পেয়েছিল ফরজানার মনোনয়ন। তবে পুরসভায় কাজের প্রথম দিন থেকেই মেয়রের সঙ্গে বনিবনা ছিল, এমনটা দাবি করবেন না কেউ। কিন্তু পাঁচ বছরে সরাসরি মুখ খুলতে দেখা যায়নি তাঁকে। কিন্তু গত পুরভোটে ওয়ার্ড বদল। এবং হার। তারপর দলীয় কর্মীদের হাতেই আক্রান্ত। নিজেকে আর সামলাতে পারেননি। সরাসরি আনেন গোষ্ঠীকোন্দলের অভিযোগ।


তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে ভয়ঙ্কর চাপে পড়ে গেল তৃণমূল। মেয়র অবশ্য অভিযোগ করেছেন, ফরজানার মৃত্যু নিয়ে যে রাজনীতি করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু এভাবে কি দলের গোষ্ঠীকোন্দলের অভিযোগকে খণ্ডাতে পারবেন তিনি? কারণ, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলে মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম নয়। বালির তপন দত্ত, নোয়াপাড়ার বিকাশ বসুর মতো উদাহরণ ভূরি ভূরি। মৃত্যুর পরেও ফরজানার অভিযোগ যে তাড়া করে বেড়াচ্ছে তৃণমূলকে। কীভাবে সামাল দেবে দল? তাঁর মরদেহ নিয়ে হয়ত মিছিল হবে। অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গেই হয়ত তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করবে তৃণমূল। কিন্তু মানুষের মন থেকে কি মুছে ফেলতে পারবে প্রাক্তন ডেপুটি মেয়রের অভিযোগ?