মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের হস্তক্ষেপের পরেও বিল নিয়ে চূড়ান্ত হেনস্থা, মৃত্যু স্বাধীনতা সংগ্রামীর
সল্টলেক আমরি আইসিসিইউ-তে বিল করেছিল সাড়ে ৪ লাখ টাকা।
নিজস্ব প্রতিবেদন : ফের অমানবিক মুখ শহরের বেসরকারি হাসপাতালের। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের হস্তক্ষেপের পরেও রোগীকে ছাড়া নিয়ে টালাবাহানার অভিযোগ উঠল সল্টলেক আমরির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বিল মেটানো নিয়ে হেনস্থা করা হয় রোগীর পরিবারকে। আর এই টানাপোড়েনের জেরেই কার্যত বিনা চিকিত্সায় মৃত্যু হল সুধীর কৃষ্ণ দাস নামে এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর।
উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাটের বাসিন্দা ছিলেন সুধীর কৃষ্ণ দাস। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ৩০ মে সুধীর দাসকে সল্টলেক আমরিতে ভর্তি করা হয়। পরদিনই তাঁকে আইসিসিইউ-তে স্থানান্তরিত করে আমরি কর্তৃপক্ষ। এই কদিনে বিলের অঙ্ক সাড়ে ৪ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এই বিশাল পরিমাণ বিলের কারণে মহা ফাঁপরে পড়ে সুধীর দাসের পরিবার। আড়াই লাখ টাকা বিল মিটিয়ে দেয় তাঁরা। কিন্তু, আমরিতে রেখে চিকিত্সা চালানো তাঁদের পক্ষে নিদারুণ ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে।
এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয় সুধীর দাসের ছেলে। সব কথা শোনার পর মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে সাহায্য মেলে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের হস্তক্ষেপে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আইসিসিইউ-তে সুধীর দাসকে রাখার বন্দোবস্তও হয়ে যায়। কিন্তু আমরি থেকে রোগীকে ছাড়াতে গিয়েই পরিবারকে হেনস্থার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন, অ্যাপ ক্যাবের ভাড়া ভোগান্তির দিন শেষ, কড়া পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের
অভিযোগ, বকেয়া টাকা চেকের মাধ্যমে মেটাতে গেলে বেঁকে বসে আমরি কর্তৃপক্ষ। চেক নিতে অস্বীকার করে তারা। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের চিঠি দেখানোর পরেও মেলেনি কোনওরকম সহযোগিতা। এদিকে, এই টানাপোড়েনে ৫ ঘণ্টা কেটে যায়। শেষে পুলিসের হস্তক্ষেপে সুধীর দাসকে আমরি থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এনআরএস-এ ভর্তি করতে সক্ষম হয় তাঁর পরিবার। যদিও স্ট্যাম্প পেপারে পরিবারকে দিয়ে মুচলেকা লিখিয়ে নেয় আমরি কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধ নয়, দেওয়া হচ্ছে জলপড়া-তেলপড়ার দাওয়াই!
কিন্তু টানাপোড়েনের জেরে সুধীর দাসের স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটে। এদিন সকালে মৃত্যু হয় সুধীর দাসের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৭ বছর। এই ঘটনায় স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছে সুধীর দাসের পরিবার। স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সুধীর দাস। দীর্ঘদিন আলিপুর জেলে বন্দি ছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য পরিষেবায় বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে আরও মানবিক হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও যে হুঁশ ফেরেনি, এদিনের ঘটনায় আরও একবার তা প্রমাণিত হল।