Gariahat Murder : রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নেই অপরাধে হাতেখড়ি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভিকির?
যে কোনও উপায়ে পয়সা হাতাতে মা ও ছেলে যে কতটা মরিয়া, তা আরও স্পষ্ট হয় গত বছর বাবা সুভাষ হালদারকে নির্মমভাবে খুনের চেষ্টার পর-ই।
পিয়ালি মিত্র : পরনে সব সময় হাল্কা রঙের ফরমাল শার্ট। ডার্ক কালার ট্রাউজার। পালিশ করা জুতো। হাতে ঘড়ি। চুল পেতে আঁচড়ানো। মুখে চোস্ত হিন্দি, ইংরেজি, বাংলা। এমনকি, পাড়া প্রতিবেশী থেকে আত্মীয়পরিজনদের সঙ্গেও হিন্দি বা ইংরেজিতেই কথা। ঠিক যেন কোনও কর্পোরেট অফিসের কর্মী। সেই সঙ্গে যে কোনও লোককে 'ইমপ্রেস' করার তুখোড় ক্ষমতা। হঠাৎ দেখলে বোঝার উপায় নেই যে ২৫-২৬ বছরের ভিকি হালদার আদতে টেনেটুনে মাধ্যমিকের গণ্ডি পাস করা। শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে সেটুকুই। কর্পোরেট কর্তা সুবীর চাকি খুনে মূল অভিযুক্ত ভিকি হালদারের এহেন হাবভাবের পরিচয় পেয়ে স্বভাবতই অবাক তদন্তকারী অফিসাররা।
তবে ছোটো থেকেই অসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভিকি। তদন্তকারীদের ভাষায়, ভিকি অত্যন্ত রুক্ষ স্বভাবের ও দিবাস্বপ্ন দেখে থাকে। নিজের স্বপ্ন বা উচ্চাকাঙ্খা পূরণ করতে সে যে কোনও কিছু করতেই পিছপা হবে না বা যে কোনও কিছু সে ঘটাতে পারে, তা তার করা পরপর অপরাধ থেকেই স্পষ্ট।
কেন এতটা উচ্চাকাঙ্খা?
জানা যাচ্ছে, ভিকির উচ্চাকাঙ্ক্ষার পিছনে রয়েছে তার পারিবারিক অভাব অনটন ও অশান্তি। ছোটো থেকে টানাটানির মধ্যে দিন কেটেছে ভিকির। বাবা সুভাস হালদার মা মিঠুকে সন্দেহ করতেন। সেই নিয়ে অশান্তি হত। তাই বহু বছর আগেই দুই ছেলেকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান মিঠু। কিন্তু সংসার চালাতে না পারায় ছোটো ছেলেকে বাপের বাড়ির দিয়ে দেন মিঠু। লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করে, বাড়ি বাড়ি জিনিস বিক্রি করে কোনওরকমে সংসার চালাতেন মিঠু। ওদিকে কোনওরকমে মাধ্যমিক পাস করে ভিকি। মাধ্যমিক পাসের পর কলকাতায় ছোটোখাটো কাজ শুরু করে ভিকিও।
কিন্তু ছোটোবেলায় কাটানো দরিদ্র অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার মরিয়া চেষ্টা ঘিরে ধরে তাঁকে। শর্টকাট উপায়ে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার বাসনা পেয়ে বসে ভিকিকে। এমনটাই অনুমান পুলিসের। ছেলের মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল মায়েরও। তাই সবসময় ছেলের কাজে মদত দিয়ে গিয়েছেন মিঠুও। যে কোনও উপায়ে পয়সা হাতাতে মা ও ছেলে যে কতটা মরিয়া, তা আরও স্পষ্ট হয় গত বছর বাবা সুভাষ হালদারকে নির্মমভাবে খুনের চেষ্টার পর-ই।
এখন ঘটনা হল একটা সুদীর্ঘ সময় বাবার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না তাঁদের। কিন্তু কয়েক বছর আগে মিঠু ও ভিকি জানতে পারে যে সুভাষ হালদারের কাছে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা রয়েছে। সেই টাকা হাতানোর জন্য-ই সুভাষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ায় ভিকি ও মিঠু। এরপরই সুভাষকে নিয়ে গত বছর সুবীর চাকির বাড়ি কিনতে গিয়েছিল ভিকি। যদিও সুবীর চাকি ভিকির প্রস্তাব মতো বাড়ির একতলা আলাদা করে বিক্রি করতে রাজি হননি। আর তারপর পরই বাবার টাকা হাতাতে সুভাষকে খুনের চেষ্টা করে মিঠু ও ভিকি।
আরও পড়ুন, কলকাতায় আগে বাস চলত ৭,৫০০, এখন নামছে দু'হাজার, CNG-তে বদলের প্যাকেজ-ভাবনা Firhad-র
প্রথমে মায়ের সঙ্গে মিলে বাবাকে খুনের চেষ্টা। তারপর গড়িয়াহাটে জোড়া খুন। তবে তদন্তকারীদের ধারণা, ভিকির অপরাধের রেকর্ড হয়তো এখানেই সীমাবদ্ধ নয়! তদন্তকারীরা বলছেন, নিজের যে 'ভাবনাচিন্তা বা আউটলুক' লোকের সামনে তুলে ধরত ভিকি, তার পিছনেও ছিল লোক ঠকানোর ফন্দি। এখন এই 'উচ্চাকাঙ্ক্ষী' ভিকি জালে ধরা পড়লেই খুনের প্রকৃত মোটিভ থেকে তার যাবতীয় কীর্তিকলাপের পর্দাফাঁস হবে। তাই তার খোঁজ হন্যে পুলিস।