Battle of Plassey: ক্লাইভ একজন লুটেরা, `ক্লাইভ অফ ইন্ডিয়া` কথাটার কোনও মানেই হয় না: রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়
জগৎ শেঠ ওই ব্যক্তির আসল নাম নয়। তিনি ছিলেন `ব্যাঙ্কার অফ দ্য ওয়ার্ল্ড`। বাংলায় সেটা জগতের শেঠ, তা থেকে `জগৎ শেঠ`। ১৬৫০ সালে তাঁদের বংশধর রাজস্থান থেকে মুর্শিদাবাদে আসেন। এঁরা মূলত মানি চেঞ্জার।
নিজস্ব প্রতিবেদন: ইতিহাস বলছে, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ঐতিহাসিক এই যুদ্ধ পলাশি নামক স্থানে সংঘটিত হয়েছিল, তাই এ যুদ্ধ পলাশির যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৭৫৭ সালের জুন ২৩ তারিখে, অর্থাৎ, ঠিক আজকের দিনে এই যুদ্ধ ঘটেছিল। যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন। এবং এই ঘটনার সূত্রেই ভারতে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সূচিত হয় বলে মনে করা হয়।
স্বাধীনতার ৭৫ বছরের ইতিহাসের বছরে পলাশির যুদ্ধের ২৬৫ বছর আলাদা করে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে পড়ল। কেননা, এদিনই দেখতে গেলে বাঙালির পরাধীনতার প্রথম লগ্ন সূচিত হয়েছিল। তাই স্বাধীনতার ৭৫ বছরে অন্য এক স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে তাকাল 'জি ২৪ ঘণ্টা'। এডিটর গৌতম ভট্টাচার্যের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বললেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর অধ্যাপক রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়। যাঁর অন্যান্য অনেক কাজের পাশাপাশি পলাশির যুদ্ধ নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায় বলেন, ক্লাইভ একজন লুটেরা। 'ক্লাইভ অফ ইন্ডিয়া' কথাটার কোনও মানেই হয় না। অক্সফোর্ডেও ব্রিটিশ কঙ্কোয়েস্ট অফ ইন্ডিয়া খুব রমরম করেই পড়ানো হত। যদিও এখন আর সেভাবে হয়তো হয় না। কিন্তু ক্লাইভকে মহিমান্বিত করে দেখানোর একটা চেষ্টা ইতিহাসে বরাবরই ছিল।
এরপর নানা শাখা-প্রশাখা বেয়ে আলোচনা জগৎ শেঠের দিকে ঘুরে যায়। রুদ্রাংশু বলেন, জগৎ শেঠ ওই ব্যক্তির আসল নাম নয়। তিনি ছিলেন 'ব্যাঙ্কার অফ দ্য ওয়ার্ল্ড'। বাংলায় সেটা জগতের শেঠ, তা থেকে 'জগৎ শেঠ'। ১৬৫০ সালে তাঁদের বংশধর রাজস্থান থেকে মুর্শিদাবাদে আসেন। এঁরা মূলত মানি চেঞ্জার। তারপর নানা ধরনের ব্যবসার শুরু। ব্যবসা ক্রমে বিশাল হয়ে দাঁড়ায়। তার মুনাফাও হয় বিশাল। শোনা যায়, দিল্লির মোঘল সম্রাটকে করস্বরূপ মোটা টাকা দিতেন জগৎ। ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। জগৎ শেঠ হুন্ডি কেটে দিতেন। সেই হুন্ডি নিয়ে জগৎ শেঠের লোক দিল্লি যেতেন। সেখানে তাঁর অন্য কোঠী থেকে টাকাটা ব্রিটিশকে দিয়ে দেওয়া হত।
এই ভাবে বাণিজ্যের জগতে ক্রমে জগৎ শেঠের প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে। এবং এই প্রতিপত্তি কায়েম হওয়ার পথে জগৎ শেঠ ব্যবসার নানা ক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করেন। কোথাও কোথাও ম্যানিপুলেশনও ছিল। কিন্তু বড় বিজনেস টাইকুন হয়ে ওঠায় ইংরেজ বা নবাব কোনও পক্ষই তাঁকে ঘাঁটাত না।
ব্যতিক্রম সিরাজ। সিরাজ এসে জগৎ শেঠদের সঙ্গে প্রথম দুর্ব্যবহার করেন, তাঁদের কাজকর্মের খোঁজও নিতে শুরু করেন। তিনি যে ম্যানিপুলেশনটা করছিলেন, সেটা বন্ধ করার কথা বলেন। ফলে জগৎ শেঠরা সিরাজের উপর বিরক্ত হন। আর সেটাই পরে বিদ্বেষে পরিণত হয়। তিনি যুদ্ধের আবহে ক্লাইভের সঙ্গেই ভিড়ে যান।