ওয়েব ডেস্ক: নেপালে ভূমিকম্পে প্রাণ গিয়েছিল ৯হাজার মানুষের। কলকাতায় ভূমিকম্প হলে মৃতের সংখ্যা পৌছতে পারে ২২হাজারে। এমনই তথ্য উঠে এলো ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের সমীক্ষায়।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ভূমিকম্প হলে কলকাতার কোথায় কতটা ক্ষতি, তা বুঝতেই খড়্গপুর আইআইটি-কে সমীক্ষার দায়িত্ব দেয় কেন্দ্রের ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রক। তাতেই উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে,  ভূমিকম্পে সব চেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে সল্টলেক, রাজারহাট, নিউ টাউন, দমদম, সিঁথি, পাইকপাড়া, শ্যামবাজার, বেলেঘাটা, পার্ক স্ট্রিট,  কসবা, ঢাকুরিয়া, যাদবপুর, বেহালা, তারাতলা, মেটিয়াবুরুজ, আলিপুর,  হাওড়া, বানতলা ও বকডোবা। রাতে ভূমিকম্প হলে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে সল্টলেক, বেহালা, নিউ টাউন ও হাওড়ার কিছু অংশে।


মৃত্যু হতে পারে ২২ হাজার মানুষের, কারণ ৯৮% মানুষ সে সময় বাড়িতে থাকেন। দিনে ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে দমদম অঞ্চলের। মৃত্যু হতে পারে ১৮ হাজার মানুষের, আহতের সংখ্যা থাকবে ২ লক্ষেরও কাছাকাছি। বিকেল ৫ টা নাগাদ ভূমিকম্প হলে মৃতের সংখ্যা থাকবে ৩ হাজারের আশেপাশে। কারণ, এই সময় বেশিরভাগ মানুষ থাকেন ঘরের বাইরে।


এখানেই শেষ নয়। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্রও তুলে ধরেছে সমীক্ষা। সাড়ে পাঁচ লক্ষ বাড়ির ওপর সমীক্ষা চালানো হয়। দেখা গিয়েছে। কম্পনে ধুলিস্যাত্‍ হয়ে যাবে শহরের ২৬% বাড়ি। মারাত্মক ক্ষতি হবে ১৮% বাড়ির। মাঝারি ক্ষতি হবে ৩৪% বাড়ির। শহরের বস্তির কাঁচা বা আধা-পাকা বাড়ির ৬২% ধুলোয় মিশে যাবে। ভূমিকম্পের পর কলকাতার এক চতুর্থাংশ হাসপাতালে যাওয়ার সংস্থানই থাকবে না। অধিকাংশ হাসপাতাল মধ্য কলকাতা, সল্টলেক ও রাজারহাটে হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।


পুরনো কায়দায় তৈরি শহরের ১১% স্কুল কম্পনের ধাক্কা সহ্য করতে পারবে না। ভূমিকম্পের পর আশ্রয়স্থল হয় এই স্কুলবাড়িই। দমকল ও থানাগুলিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রভাব পড়বে হাইওয়ে, রেল, ফেরি, ব্রিড, বাস টার্মিনাসে। সমীক্ষকদের মতে,.. নিয়ম মেনে চললে এই ক্ষতিও আটকানো সম্ভব।


ভূমিকম্প নিয়ে কলকাতার ওপরই সমীক্ষা চালানো হল? কেনই বা বিপজ্জনক কলকাতা?


বেঙ্গল বেসিনের কাদামাটির স্তরের ওপর দাঁড়িয়ে কলকাতা। নেপালের ভূমিকম্পে কম্পন তো অনুভূত হয়েছিলই। ইম্ফল ভূমিকম্পে ইদানীংকালের মধ্যে সব চেয়ে বেশি কেঁপেছে কলকাতা। তাই কলকাতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ভূবিজ্ঞানীরা। উত্তরে ভূকম্পপ্রবণ হিমালয় এবং কলকাতার নীচে ইয়োসিন হিঞ্জ জোন। এছাড়াও কলকাতার আশেপাশে পিংলা, দেবগ্রাম-বোগরা, গড়ময়না-খণ্ডঘোষ, রাজমহল ফল্ট, ধাক্কা আসতে পারে পুরুলিয়া শিয়ার জোন থেকেও


বেঙ্গল বেসিন রয়েছে ৭.৫ কিলোমিটার পুরু কাদামাটির স্তরের ওপর। কম্পন কাদার ওপর একবার ঢুকে পড়লে, তা ঘুরতেই থাকে। ফলে বাড়তে থাকে তীব্রতা


তীব্র কম্পনে কাদামাটি গলে শহরের বিস্তীর্ণ অংশ বসে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ইম্ফল ভূমিকম্পেই বোঝা গিয়েছে, বেঙ্গল বেসিনের নীচে কাদামাটির স্তর রাজ্যের ভিত কতটা দুর্বল করে রেখেছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র আরও কাছে কিংবা কম্পন তীব্রতর হলে শহরের বিস্তীর্ণ অংশ মাটিতে বসে যেতে পারে। 


অপরিকল্পনিত নগরায়ন। নিয়ম না মেনে বাড়ি তৈরি। নিয়ম মেনে পুরনো বাড়িরও সংস্কারও হয়নি। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মাত্র ৭ শতাংশ বাড়ি নিয়ম মেনে তৈরি হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ জায়গাতেই বাড়ি-ঘর বিপজ্জনক তালিকায়। জলাভূমি ভরাট করে বহুতল এবং শহরের জলস্তর দ্রুত নেমে যাওয়া, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধিও এর অন্যতম কারণ। ভূমিকম্প হলে তাই যে কোনও সময় ধসে যেতে পারে কলকাতার একটি বড় অংশ।