প্রকাশ্যে এল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কোচ, জেনে নিন দারুন সব ফিচার
শুক্রবারই এই কোচের ছবি হাতে এসেছিল ২৪ ঘণ্টার। তা পাঠকদের কাছে পৌঁছেও দিয়েছিল তারা।
নিজস্ব প্রতিবেদন: আনুষ্ঠানিক ভাবে ইস্ট - ওয়েস্ট মেট্রোর কোচ প্রকাশ্যে আনল কলকাতা মেট্রো। শনিবার বিধাননগরের করুণাময়ীতে মেট্রো ডিপোয় কোচটির বৈশিষ্ট্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন আধিকারিকরা। এই কোচে যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্যের জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক সব সুযোগসুবিধা। প্রায় গোটা কোচটিই তৈরি হয়েছে দেশিয় প্রযুক্তিতে। শুধু মোটর আমদানি করা হয়েছে জাপান থেকে। মেট্রোর এই কোচে কোনও রদবদলের সুপারিশ থাকলে তা জানাতে অনুরোধ করেছেন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর আধিকারিকরা। তবে ট্রেন চলাচল কবে শুরু হবে তা নিয়ে মুখ খোলেননি তাঁরা।
স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক একটি কোচের দৈর্ঘ্য ২০.৮ মিটার। পার্পল রঙের এমনই ছ'টি কোচ দিয়ে তৈরি হবে এক একটি ট্রেন। এক একটি ট্রেনে যাত্রা করতে পারবেন ২০৬৮ জন যাত্রী। এর মধ্যে ২৮৬ জন যাত্রী বসে যাত্রা করতে পারবেন। দাঁড়িয়ে যাত্রা করতে পারবেন ১৭৮২ জন। প্রতি বর্গ মিটার জায়গায় ৮ জন যাত্রী দাঁড়াতে পারেন বলে ধরে নিয়ে এগোচ্ছেন কর্তারা।
আরও পড়ুন - ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কোচের আরও ছবি
প্রতিটি কোচে রয়েছে ৮টি করে দরজা। প্রতিটি দরজার ওপরে রয়েছে ট্রেনের অবস্থান-সহ রুটের রেখাচিত্র। দরজার পাশে রয়েছে হাতল।
ইস্ট - ওয়েস্ট মেট্রোর আধিকারিকরা জানিয়েছেন সম্পূর্ণ স্বচালিত এই মেট্রোয় চালকের কোনও প্রয়োজনই নেই। তবুও যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে একজন চালক থাকবেন প্রতিটি ট্রেনে। মূলত আপদকালীন পরিস্থিতি সামাল দেবেন তিনি। স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিতে ২.৫ মিনিট ফারাকে চালানো যাবে ট্রেন।
আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই কোচে রয়েছে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা। বর্তমান মেট্রোয় ট্রেন সুড়ঙ্গের মধ্যে কোনও কারণে থেমে গেলে থার্ড রেলের বিদ্যুত্ সংযোগ বন্ধ করে চালকের কেবিন দিয়ে যাত্রীদের বার করা হয়। এর ফলে একদিকে যেমন বেশি সময় লাগে তেমনই ব্যহত হয় ট্রেন চলাচল। নতুন মেট্রোয় সাধারণ দরজা দিয়েই জরুরি অবস্থায় নামতে পারবেন যাত্রীরা। লাইনের পাশে থাকবে উঁচু প্ল্যাটফর্ম। দরজা থেকে সেখানে নেমে হেঁটে নিকটবর্তী স্টেশনে পৌঁছতে পারবেন যাত্রীরা।
মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছ্বন্দের দিকে এবার বিশেষ খেয়াল দিয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সেজন্য মেট্রোর প্রতিটি কোচে লাগানো রয়েছে ৪টি করে সিসি ক্যামেরা। সিসি ক্যামেরার ছবি দেখতে পাবেন চালক। ফলে মহিলাদের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দেখা দিলে পদক্ষেপ করতে পারবেন চালক বা গার্ড। জরুরি অবস্থায় টকব্যাকের মাধ্যমে চালকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারবেন যাত্রীরা। সঙ্গে মহিলা আসনের সামনে ধরে দাঁড়ানোর হাতলের উচ্চতা কম রেখা হয়েছে নতুন কোচে। বর্তমান মেট্রোর কোচে হাতল উঁচু হওয়ায় অনেকে মহিলাই সমস্যায় পড়েন।
নতুন কোচের আসনগুলিও বেশ আরামদায়ক। রয়েছে চওড়া ভেস্টিবিউল। ফলে এক কামরা থেকে অন্য কামরায় যাতায়াত করা হবে আরও সহজ ও ঝুঁকিহীন।প্রতিটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কোচ। এর মধ্যে চারটি কোচে থাকবে মোটর। বাকি দু'টি কোচকে টেনে নিয়ে যাবে ওই চারটি কোচ। প্রতিটি কোচে থাকবে চারটি করে মোটর। যার একএকটির ক্ষমতা ২০০ কিলোওয়াট।
হুইল চেয়ারে যাতায়াত করতে হয় এমন যাত্রীদের জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে এই কোচে। কারও সাহায্য ছাড়াই হুইলচেয়ার সমেত ট্রেনে উঠতে পারবেন এমন যাত্রীরা। প্রতিটি রেকের সামনের ও পিছনের কোচে থাকবে হুইলচেয়ার-সহ বসার বিশেষ ব্যবস্থা।
প্রতিটি কোচে থাকবে ২৫ টন এসি। এছাড়া রয়েছে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও। শনিবার সাংবাদিকদের সামনে কোচটির খুঁটিনাটি তুলে ধরেন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর আধিকারিকরা। তবে কবে থেকে পরিষেবা চালু হবে তা নিয়ে কোনও কথা বলেননি তাঁরা। জানিয়েছেন, সব দিক খতিয়ে দেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিষেবা চালুর ব্যবস্থা করছেন কর্তারা।