Bikini Girl | Kolkata Metro : কলকাতা মেট্রোয় বিকিনি গার্ল!
`একটা মেয়ে যদি বিকিনি পরে মেট্রোয় ওঠে বা একটা ছেলে যদি অন্তর্বাস পরে ওঠে, দুটোই আমাদের চোখে দৃষ্টিকটু। গরমে সোয়েটার পরাও সমান দৃষ্টিকটু। শালীনতার সংজ্ঞাটাই আমাদের আসে কতগুলি প্যারামিটার থেকে।`
সুদেষ্ণা পাল: অফিসটাইম। ভিড়ে গাদাগাদি মেট্রো। একজনের কাঁধে গিয়ে পড়ছে একজনের হাত। একজনের ঘামের গন্ধ শুঁকতে বাধ্য হচ্ছে আরেকজন। মেট্রো ছুটছে তারমধ্যেই। এমন সময় দেখা মিলল তার। বিকিনি গার্লের! পরনে ব্রালেট আর মাইক্রো মিনি স্কার্ট। কেতাদুরস্ত চুলের ফ্যাশন। হাই হিলে দাঁড়িয়ে আছে সে। মেট্রোর দরজার পাশে। ভিড়ে ঠাসা মেট্রোয় মোটামুটি অনেকেই নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলে বিকিনি গার্লকে অপলকে এপলক দেখে নিতে ভুলছে না কেউ-ই। আট থেকে আশি, সবারই নজর তার দিকে। এরমধ্যেই কেউ কেউ আবার নীতি পুলিসগিরিও শুরু করে দিলেন। আর তাতে মত-পালটা মত, যুক্তি- পালটা যুক্তিতে মেট্রো কামরা মোটামুটি 'ধরণী দ্বিবিভক্ত' হওয়ের মত দু-ভাগ হয়ে গেল। একদলের মত, মেয়ের সাহস আছে বৈকি! আরেকদলের বক্তব্য, এসব কী? কোনও লজ্জাশরম নেই? ভদ্রতা-সভ্যতার লেশমাত্র জ্ঞানটুকুও নেই! সে একেবারে হই হই, রই রই কাণ্ড!
নিশ্চয়ই ভাবছেন, কলকাতা মেট্রোয় কবে কোথায় কখন এঘটনা ঘটেছে? সত্যি, বলতে ঘটেনি। কলকাতা মেট্রোয় কোনও মেয়ে এখনও পর্যন্ত বিকিনি পরে ওঠেনি। যদি ঘটে, তাহলে...? দিল্লিতে ঘটেছে। দিল্লি মেট্রোয় বিকিনি পরে যাতায়াত করছিলেন রিদম চানানা। তাঁর ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। আর ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই একবারে শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়ে কড়া ফরমান জারি করেছে দিল্লি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কী বলেছে দিল্লি মেট্রো কর্তৃপক্ষ? DMRC-র বক্তব্য, যাত্রীদের এমন কোনও পোশাক-ই পরা উচিত নয় যা সহযাত্রীদের চোখে দৃষ্টিকটু। DMRC আশা করে সমাজের চোখে যা গ্রহণীয়, সেই সকল সামাজিক ভদ্রতা ও বিধিনিষেধ সকল যাত্রী মেনে চলবে। কারণ, ভারতীয় সংবিধানের ৫৯ নাম্বার ধারা অনুযায়ী অশালীনতা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
যার পালটা জবাবও দিয়েছেন ওই মেয়ে। বলেছেন, 'আই ডোন্ট কেয়ার... মানুষ কী বলল, আমি পাত্তা দিই না। আমি কী পরব, সেটা আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা।' সাফ জানিয়েছেন, 'এটা কোনও পাবলিসিটি স্টান্ট নয়। আমি বহু মাস ধরেই এধরনের পোশাক পরে যাতায়াত করছি। এখন ভাইরাল হয়েছে।' যে পরিপ্রেক্ষিতেই কিছু প্রশ্ন ফের উঠছে... শালীন-অশালীনতার মাত্রাটার পরিমাপ কী? ব্যক্তি স্বাধীনতার সংজ্ঞাটা ঠিক কী? আর এর পরিসরটাই বা কতখানি? প্রশ্ন উঠছে, অদূর ভবিষ্যতে যদি কলকাতা মেট্রোয় এঘটনা ঘটে? তবে...
যে প্রসঙ্গে কলকাতা মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বললেন, 'আমি এখনও পর্যন্ত এ পোশাকে কাউকে দেখিনি। এখনও পর্যন্ত এরকম ঘটনা ঘটেনি। কলকাতার মানুষকে এভাবে দেখিনি। দেখতেও চাই না। দিল্লি মেট্রো একটি আলাদা সংস্থা। কলকাতা মেট্রো রেলের তরফে নো কমেন্টস। সরকারিভাবে নো কমেন্টস।' বলা ভালো, তাঁর নাতিদীর্ঘ বক্তব্যে তিনি খুব সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিলেন, কলকাতায় মেট্রোয় টু-পিস খুব একটা ওয়েলকাম হবে না!
অন্যদিকে এপ্রসঙ্গে মনোবিদ বিশেষজ্ঞ সোনালি চট্টোপাধ্য়ায়ের বক্তব্য, 'যে কোনও সমাজে একটা নর্ম বা নিয়ম বলে ব্যাপার থাকে। বেশিরভাগ মানুষ যা করছে, তা থেকেই আমাদের চোখে শালীনতার মাত্রা ঠিক হয়ে যায়। একটা মেয়ে যদি বিকিনি পরে মেট্রোয় ওঠে বা একটা ছেলে যদি অন্তর্বাস পরে ওঠে, দুটোই আমাদের চোখে দৃষ্টিকটু। কারণ এক্ষেত্রে লার্জ স্কেলে যেহেতু আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আবার আমরা যদি ইউরোপ, আমেরিকা বা অন্যান্য দেশের পোশাকের নর্ম-এ যাই, তখন তা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।' তবে দিল্লির মেট্রোর কড়া নির্দেশিকাকে তিনি ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলেই দেখছেন। তাঁর কথায়, 'এটাকে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলা-ই যায়। একটা মানুষ বিকিনি পরে মেট্রোয় উঠলে আমরা কড়া নির্দেশিকা জারির দিকে কেন যাব, তার সঙ্গে কথা কেন আগে বলব না? আমরা অনেক সফট অ্যাপ্রোচ গ্রহণ করলে ভালো। কারণ, গরমে সোয়েটার পরাও সমান দৃষ্টিকটু। শালীনতার সংজ্ঞাটাই আমাদের আসে কতগুলি প্যারামিটার থেকে।' তিনি আরও বলেন, 'কলকাতা মেট্রোয় এরকম ঘটলে আমরা কী তর্ক করতে পারব? এর আগে একটি যুগলের ক্ষেত্রে যে ঘটনাটি ঘটেছিল, তাতে যিনি প্রতিবাদ করছিলেন, তাঁকেই গোটা কলকাতা হ্যারাস করেছিল যে তিনি ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন বলে। আসলে দৃষ্টিকটু ও শালীনতা অনেকটাই নির্ভর করছে, আমরা কী দেখতে লার্জ স্কেলে অভ্যস্ত তার উপর। আমরা অ্যাডজাস্ট করতে পারছি না। সত্যিই পারব না। হয়তো ডেনমার্ক হলে অসুবিধা হত না। তবে তার মানেই কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে এমনটাও নয়। আইনত পদক্ষেপ আমরা ওভাবে নিতে পারি না।'
আর অধ্যাপিকা ও সমাজকর্মী শাশ্বতী ঘোষ এপ্রসঙ্গে বলেন, 'এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, পোশাকের জন্য মেয়েরা নিগ্রহের শিকার হয় বলে যে কথা প্রচলিত আছে, সেটা ভুল প্রমাণিত হল। এটাই এক্ষেত্রে প্রথম লক্ষ্য করার মত বিষয়। কে কী পোশাক পরবেন, আমি মনে করি সেটায় তাঁর স্বাধীনতা থাকা উচিত। শালীনতা শব্দটি ভীষণ আপেক্ষিক। তবে হ্যাঁ, এটাও ঠিক যে আমদের কতগুলি কনভেশন বা ঐতিহ্য আছে, গণপরিবহনের মত বিষয়ের ক্ষেত্রে যেগুলো মেনে চলা ভালো বলেই আমি মনে করি। এখন নিজের মত পার্টিতে গেলে, তো কেউ পোশাক নিয়ে কোনও প্রশ্ন করছে না। সেখানে পরে যাওয়া-ই যেতে পারে। আর কলকাতা মেট্রোয় এরকম পোশাক কেউ পরলে, ক্ষেত্রেও সেই আপেক্ষিক শালীনতার প্রশ্নটাই চলে আসে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দমদম মেট্রোয় যুগলের চুম্বনের ঘটনাটি! তাঁরা কারও অসুবিধা করেনি। কিন্তু তাঁদের দেখে অন্যদের অসুবিধা হয়েছিল। তবে আমি মনে করি, গণপরিবহনের ক্ষেত্রে কোথাও গিয়ে আমাদের একটা পোশাক বিধি মেনে চলা ভালো।'
আরও পড়ুন, Ticket Fare: অর্ধেক থেকে বিনামূল্যে টিকিট! সিনিয়র সিটিজেন ও মহিলাদের দারুণ সুবিধা দিচ্ছে সরকার