সৌরভ পাল, লালবাজার: একটু সময় লাগে বটে, তবে হারানো ফোন ফিরে পাওয়া যায়! হ্যাঁ, কলকাতায় প্রতিমাসে অন্তত ২০০জন তাঁদের হারানো ফোন ফিরে পাচ্ছেন, তথ্য দিচ্ছে লালবাজার।  


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

 


অষ্টমীর এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা। হাজার হাতের ঠ্যালা সামলে, বালিগঞ্জ কালচারাল দেখে কালীঘাট মেট্রোর সামনে, রাস্তা পার হতেই সাংবাদিক মিত্রবাবু নীল পাঞ্জাবির ডান পকেটে হাত দিতেই দেখলেন ওমা, ফোনটা নেই যে! একটু আগেই তো সেলফি তুললাম, কোথায় রাখলাম। ডান-বাম দুই পকেট হাতড়েই যখন কেমন খালি খালি অনুভব করলেন, বুঝলেন ফোনটা চুরি হয়ে গেছে। যা, হারিয়ে গেল! ফোনের বয়স মাত্র এক থেকে দেড় মাস, সেলফি থেকে অ্যান্ড্রয়েডে হাতেখড়ি তো ওকে দিয়েই শুরু হয়েছিল। মায়া দিন দিন বেড়েই চলছিল। আর যখন গেল, তখন একেবারে খাঁ খাঁ করে দিয়ে গেল বুকটা। এক-দু'দিন পরই আশা হারিয়ে কালীঘাট থানায় ডায়েরি। নেহাত সিম কার্ডটি ফেরত পেতেই। একটা লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন কলকাতা পুলিসের ওয়েবসাইটেই। একমাস পর লালবাজার ওয়াচ ডিপার্টমেন্ট থেকে ফোন। 
 



"মিস্টার মিত্রের সঙ্গে কথা বলছি?" উত্তর এল, "হ্যাঁ।" "লালবাজার থেকে বলছি।" শুনেই কিছুটা হতচকিত! লালবাজার! সেকেন্ডের মধ্যেই ফোনের ওপার থেকে ভেসে এলে এক গম্ভীর কণ্ঠ, "আপনার ফোনটা পাওয়া গিয়েছে, এসে প্রমাণ দিয়ে নিয়ে যান।" বেজায় খুশি সাংবাদিক মিত্রবাবু লালজারেরর ওয়াচ ডিপার্টমেন্টে নিজের হারানো ফোন দেখে যেন সন্তান ফিরে পাওয়ার মত উল্লাসিত হয়ে উঠলেন। "আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম, ফোনটা যে ফিরে পাবো, ভাবতেই পারিনি, থ্যাঙ্কস টু কলকাতা পুলিস", এমনটাই জানালেন মিত্র বাবু। 


 


মোবাইল হারালে তবে মোবাইল ফিরে পাওয়া যায়! হ্যাঁ, সত্যিই পাওয়া যায়। কাজ করছে কলকাতা পুলিস। "কলকাতায় প্রতি মাসে অন্তত ৮০০ থেকে হাজারটা অভিযোগ জমা পড়ে, তার মধ্যে ২০০ থেকে ২৫০ ফোন উদ্ধার করে প্রাপকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়", জানালেন কলকাতা পুলিসের ওয়াচ ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে থাকা সাব ইনস্পেক্টর গৌতম লাল। মূলত মোবাইল ট্র্যাকিং এবং সার্চ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই এই সাফল্য এসেছে। "সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পেলে তাঁদের বুঝিয়ে ছেড়ে দিই, আর যদি চোরের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়, তাহলে সোজা লক-আপ", জানালেন পুলিস আধিকারিক গৌতমবাবু। 


 


মোবাইল হারানোর পর থানায় অভিযোগ এবং কলকাতা পুলিসের ওয়েবসাইটে অভিযোগ দায়ের, এই দুই অভিযোগের ভিত্তিতেই হারানো মোবাইল তাদের অভিভাবকদের কাছে তুলে দিচ্ছে কলকাতা পুলিস। শুধু তাই নয়, মানুষ যেন আরও সচেতন হন তার জন্য, মোবাইল প্রাপকদের একত্রে ছবি তুলে তা খবরের কাগজগুলোতেও ছাপাচ্ছেন তাঁরা। 


 


মিত্রবাবুর মতই এদিন ফোন ফিরে পেলেন সুব্রত পালও। শিয়ালদহের বাড়িতে কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছিলেন, চোর হেডফোনটা বাদ দিয়ে ফোনসহ পোর্টেবল চার্জারটাও নিয়ে যায়। দেড় মাস পর ফোন ফিরে পেলেন তিনি। চুরি যাওয়া ফোন ফিরে পেয়েছেন স্বামীজীও। সিঁথির মোড়ে মোবাইল চুরি হয়েছিল ১৩ দিন আগে, সপ্তাহও কাটেনি ফোন ফিরে পেয়েছেন তিনিও। ওয়াচ সেকশনে দাঁড়িয়ে নিজের ফোন ফিরে পাওয়ার কথা বলতে বলতে একজন প্রাপক তো বললেন, "স্মৃতি ফিরে পাচ্ছি মনে হচ্ছে। ছেলের প্রথম চাকরি পাওয়ার পর, প্রথম উপহার দিয়েছিল ক্যানভাস ফোনটি। চুরি যাওয়াতে খুব মন খারাপ হয়েছিল। তবে আজ খুব ভালো লাগছে। ফরম্যাট হওয়া অবস্থাতেই পেলাম যদিও। তবুও প্রথম স্মৃতিটুকু তো পেলাম।