নিজস্ব প্রতিবেদন : "কোনও ভুল বোঝাবুঝি নেই। ও ভালো থাকুক। দল একেবারে স্বচ্ছ আছে।" বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মেয়র হিসেবে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পদত্যাগ প্রসঙ্গে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবারের উষ্মা, রাগ, অসন্তোষ এদিন যেন অনেকাংশেই উধাও।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মঙ্গলবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান শোভন চট্টোপাধ্যায়। এরপর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি গৌতম স্যানালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেন তিনি। সূত্রে খবর, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সেই চিঠির ভাষায় ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গেই পদত্যাগপত্র গ্রহণের নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্যও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নির্দেশ দেওয়া হয়।


সেদিন সন্ধ্যায় শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পদত্যাগ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। স্পষ্ট ভাষায় সরাসরি বলেন, "এর আগে ৪-৫ বার রিজাইন দিয়েছে। কেউ যদি রিজাইন করার ইচ্ছে প্রকাশ করে আমাদের কি করার আছে? বুঝিয়েছিলাম, বোঝেনি, ভেবেছিলাম বুঝবে। আজও ইস্তফা দিয়েছে আমরা গ্রহণ করেছি।"


এরপর বুধবার সারাদিন ধরে জল্পনা চললেও, গতকাল কলকাতার মহানাগরিক হিসেবে ইস্তফা দেননি শোভন চট্টোপাধ্যায়। এদিন সকালে নিরাপত্তারক্ষীর হাত দিয়ে এক লাইনের পদত্যাগপত্র কলকাতা পুরসভার চেয়ারাপার্সন মালা রায়ের কাছে পাঠান শোভন চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে তখন বিধানসভায় পুরনিগম আইনে সংশোধনী পেশ করছেন পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার ভাবী মেয়র ফিরহাদ হাকিম।


সংশোধনীতে বলা হয়, কাউন্সিলর নন এমন কেউ পুরসভার মেয়র হতে পারেন। তবে তাঁকে ৬ মাসের মধ্যে কাউন্সিলর হিসেবে জিতে আসতে হবে। প্রসঙ্গত, ফিরহাদ হাকিমকে মেয়র হিসেবে নির্বাচন করার জন্য এই সংশোধনী ছিল অত্যন্ত জরুরি। বিধানসভাতে পাশও হয়ে যায় সেই সংশোধনী।


এই প্রসঙ্গেই বিধানসভায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। জানতে চান, এমন কি প্রয়োজন পড়ল যে আইন সংশোধন করে নতুন মেয়র আনতে হচ্ছে? বিরোধী শিবিরের দলনেতার প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "দলের ১২২ জনের মেয়র হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু একটা সিস্টেম রয়েছে। ব্যক্তিগত কিছু অসুবিধার জন্য মেয়র পদে শোভন চট্টোপাধ্যায় ইস্তফা দিয়েছেন। পরবর্তী মেয়র হিসেবে তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হবে, যে কর্পোরেশনটা চেনে, জানে, বোঝে। দীর্ঘদিন পুরসভার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যিনি ইতিমধ্যেই জনপ্রতিনিধি, আগেও কাউন্সিলর ছিলেন, তাঁকেই পরবর্তী মেয়র করা হবে।"


আরও পড়ুন, মেয়র পদে ইস্তফা শোভনের, কলকাতার মহানাগরিক হচ্ছেন ববি


এরপরই স্নেহের 'কানন' সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে আগেরদিনের থেকে অনেকটাই নরম স্বরে মমতা বলেন, "কারও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু কোনও ভুল বোঝাবুঝি নেই। ও ভালো থাকুক । সবাই যে যার মতো ভালো থাকুক।" শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পারস্পাকিক সম্পর্ক রাজনৈতিক মহলে সুবিদিত। তৃণমূল কংগ্রেসের বহু দুঃসময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাশে পেয়েছেন তাঁর একান্ত অনুগত স্নেহের 'কানন'কে।


কিন্তু, বিগত কয়েক মাস ধরে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত জীবনযাত্রা ঘিরে বিতর্কে সেই সম্পর্কে চিড় ধরে। বারংবার ঘনিষ্ঠমহলে উষ্মা প্রকাশ করেন মমতা। ক্ষোভের প্রকাশ দলের সবার সামনে প্রকাশ্যেও ঘটেছে। যা চরম আকার নেয় মঙ্গলবার। পদত্যাগ করেন শোভন। কিন্তু, এতকিছু সত্ত্বেও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে মন থেকে মুছে ফেলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে যে সম্ভব নয়, এদিনের মন্তব্য সেই ইঙ্গিত-ই বহন করছে বলে মত ওয়াকিবহল মহলের।