ওয়েব ডেস্ক: প্রায় ২০ বছরের সম্পর্ক। অনেক জল্পনার  পর সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে সেই সম্পর্ক ছিন্ন করলেন মুকুল রায়। সকালে সাংবাদিক বৈঠক করে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। পুজো পর্যন্ত যদিও লাটাইয়ের শেষ সুতো টেনে রেখেছিলেন মুকুল। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা বেশি দূর এগোয়নি। তৃণমূল সেই সুতো কেটে মুক্ত করে দেয় একদা দলের সেনাপতি মুকুল রায়কে। পাশাপাশি 'ঘর শত্রু বিভীষণ'কে দলের অন্দরে থেকে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে তিরস্কৃতও করা হয়। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

তৃণমূলের সঙ্গে মুকুলের বিচ্ছেদ নাটক অবশ্য গত আড়াই বছর ধরে চলে আসছে। দলের ভিতরেই জোরালো জল্পনা তৈরি হয়েছিল মুকুল গেরুয়া শিবিরে যোগ দিচ্ছেন। ঘনিষ্ঠ মহলের খবর সেই পথেই হাঁটছেন মুকুল। যদিও এদিন মুকুল বা বিজেপির তরফে কোনও স্পষ্ট বার্তা পাওয়া যায়নি।


দলের অন্দরেই অনেকে বলতেন, মুকুল তৃণমূলে থেকেও ছিলেন না। ২০১৫ সালে ৩০ জানুয়ারি সারদাকাণ্ডে সিবিআই দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন মুকুল রায়। সেখানে মুকুলের কন্ঠে ভিন্ন সুর শোনা গিয়েছিল। সিবিআইয়ের কাছে এমন কিছু তথ্য ফাঁস করেন যা দলের পক্ষে মঙ্গলজনক নয় বলে মনে করেছিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তখন মুকুল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু  সিবিআই-এ হাজিরা দেওয়ার পর থেকেই তাঁকে দলের মিছিল মিটিংয়ে দেখা যাচ্ছিল না।  এরপর দিল্লির বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তাঁকে দেখা যায়। 


জাতীয়তাবাদী তৃণমূল কংগ্রেস নামে একটি রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতির জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন পড়ে। মেঘনাদের মতো সেই দলটির নেপথ্যে ছিলেন মুকুল রায়। হারান দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ। তাঁকে রাজ্যসভার দলনেতার পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। কবে তৃণমূল ছাড়ছেন মুকুল, সেই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করতে থাকে রাজ্য রাজনীতিতে। তবে সবাইকে চমকে দেয়, ২০১৫ সালের শেষের দিকে দিল্লিতে মমতা-মুকুল নৈশভোজের খবর। 
  
২০১৬ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবার তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন মুকুল রায়ের। দলের সহ-সভাপতি করা হয় তাঁকে। তবে আগের প্রতাপ ফিরে পাননি মুকুল। তৃণমূলের অনেকের কাছেই তিনি ব্রাত্য হয়ে পড়েন। বিধানসভা ভোটে ডবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্রত্যাবর্তন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রিপুরায় দলের সংগঠনের দায়িত্ব পান মুকুল। মুকুলের অবস্থা স্পষ্ট হয় এবারের ২১ জুলাই শহিদ দিবসের মঞ্চেই। দলের সহ-সভাপতির পদে থেকেও মঞ্চে বলার সুযোগ পাননি মুকুল রায়। 



সূত্রের খবর, মুকুল  বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। দর কষাকষিও চলছিল। এমনটাও শোনা যায়, অমিত শাহ শর্ত দিয়েছেন, তৃণমূলের লোকজন ভাঙিয়ে আনতে পারলেই মুকুল বিজেপিতে স্বাগত। এর মধ্যেই আবার ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেন মুকুল রায়। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই  ভালভাবে নেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুলকে দলের সহ-সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।  দলের সব দায়িত্ব থেকে  মুকুলকে অব্যাহতি দিলেও একেবারে বহিষ্কৃত করার কথা কখনও শোনা যায়নি। বারে বারে সংবাদমাধ্যমে শুধু উঠে এসেছে মুকুলের দল ছাড়ার খবর। এদিন মুকুল নিজে থেকে বিচ্ছেদের ঘোষণা করার পর তাঁকে ৬ বছরের জন্য বহিষ্কৃত করে দল।   


তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকেই ছিলেন মুকুল রায়। নতুন দলের স্বীকৃতি পেতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিলেন। হাতের তালুর মতো চেনেন সংগঠনকে। তৃণমূলের চাণক্যই এবার বিজেপিতে যোগদান করতে চলেছেন বলে সূত্রের খবর। দিল্লি বিজেপি সবুজ সংকেত দিলেই হবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।


আরও পড়ুন, মুকুলকে নিয়ে দিল্লির নির্দেশের অপেক্ষায় দিলীপ