মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

 কনকনে ঠাণ্ডায় মাটিতে শুয়ে সদ্যোজাতরা। কারও রেকটামে অপারেশন, তো কারও পেটে। নেই গরম জলের ব্যবস্থা, নেই ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য মোটা কম্বল। খোঁজ খবর নিতে জানা গেল পর্যাপ্ত চিকিৎসকও নেই NRS শিশু শল্য বিভাগে। বিনামূল্যে চিকিৎসার পিছনে যে মর্মান্তিক নেপথ্য কাহিনী লুকিয়ে আছে, তা দেখলে চোখে জল আসতে বাধ্য। 



অপারেশনের যন্ত্রণা, সঙ্গে শীত , এর মধ্যে এক মাত্র আশ্রয়স্থল শুধুমাত্র মায়ের কোল। চারিদিকে নোংরা। রুমে-করিডোরে মাটিতে এলোপাথাড়ি হয়ে পড়ে রয়েছে অসুস্থ শিশুরা। কারর বয়স কয়েকদিন, তো কারর বয়স কয়েক মাস। কাচা অপারেশন শরীরে। বিনা খরচে  ভালো চিকিৎসার জন্য দূর দূর থেকে বাবা মায়েরা নিয়ে এসেছেন তাদের সন্তানকে । খুব স্বাভাবিকভাবেই সঙ্গে করে মোটা কম্বল বিছানা নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। মায়েরা জানাচ্ছেন, সন্তানকে খাওয়ানোর ও স্নান করানোর জন্য হাসপাতাল থেকে পাওয়া যায় না সামান্য গরম জলটুকুও। 


 



দিনের পর দিন মাটিতে শুয়ে অন্য রোগ বাঁধছে শিশুদের শরীরে। অপারেশনে সফল হলেও ডাক্তাররা যে ভয় পান, তা হয় সংক্রমণের। আর নীল রতন সরকার হাসপাতালে  শিশু শল্য বিভাগে সেই সংক্রমণের ভয়কে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করছে না কতৃপক্ষ। এক অসুখ সারাতে, ঘাড়ে চেপে বসছে অন্য রোগ।


এই বিষয় নিয়ে Zee 24 Ghanta-র প্রতিনিধির হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানিয়েছেন, রোগী কল্যাণ সমিতির সঙ্গে মিটিং করা হয়ছে। রোগীর রাস কমেনি বরং বেড়ে যাচ্ছে। চিকিৎসা প্রত্যেক শিশুর হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বেড ও চিকিৎসক না থাকায় আমাদের হাত পা বাঁধা।  শিক্ষক পদমর্যাদার চিকিৎসক প্রয়োজন ২০ জন। বর্তমানে রয়েছেন ১ জন। ১২ বেডে এনএসএনসিইউতে ভর্তি ২৫ জন। ৬০ জনের ওয়ার্ডে ভর্তি ১৪০ জন। 


 



শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফুল্ল কুমার মিশ্র বলেন, 'মাটিতে থাকলে চিকিৎসকদেরও সমস্যা হয় ইনজেকশন দিতে বা অন্যান্য কাজে। পাশাপাশি যে রোগ নিয়ে আসে, তার থেকে বেশি রোগ নিয়ে ফিরে যেতে হয়। কারণ, স্বাভাবিক ভাবেই শিশুদের শরীরে পুষ্টির অভাব থাকে। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় হল, স্বাস্থ্যে বাড়াতে হবে বাজেট। পরিকাঠামো উন্নত করতে হবে।  ডাক্তার বাড়াতে হবে। ট্রেনিং সিস্টেম ভালো করতে হবে। খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বন্ড সিস্টেম করে দেওয়ার জন্য অনেকেই পড়তে আসছেন না'। 


চিকিৎসক সংগঠনের নেতা হীরালাল কোনার বলেন, 'এই সমস্যা থেকে বেরোনোর উপায় বের করা মুশকিল। শিশু শল্য বিভাগ ওভার ক্রাউডেড। অন্যান্য হাসপাতালের এই বিভাগের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। রাজ্যে বহু হাসপাতালে নেই এই বিভাগ'।


কিন্তু কেন এই দুর্দশা? রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর নিশ্চই জানে একমাত্র নীল রতন হাসপাতালে রয়েছে এই  বিভাগ, তাহলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই শিশু শল্য বিভাগের পরিকাঠামোর দিকে রাজ্যে স্বাস্থ্যদফতরের নজর দেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু কোথায় কী? মেঝেতে ধুলোয় অবহেলায় যন্ত্রণায় কাটছে শৈশব।