সঞ্জয় ভদ্র:  আজ ১৫ অগস্ট, স্বাধীন ভারতের ৭৫ বছর পূর্তি। শহর কলকাতায় একাধিক নেতা-মন্ত্রীরা যখন সারাদিন বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছিলেন, ঠিক তখনই 'পরাধীন' পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি! কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের দুই নম্বর সেলে একেবারে একাকী প্রাক্তন মন্ত্রী। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেফতার হওয়ায় এখন জেলই পার্থর সাময়িক ঠিকানা। প্রতি বছর যেভাবে ১৫ অগস্ট কাটে পার্থর, এবছর সেরকমটা আর ঘটল কোথায়। দুষ্কৃতী থেকে সন্ত্রাসবাদীদের যেখানে রাখা হয়, সেখানেই এখন থাকছেন পার্থ। যদিও তাঁর ধারে কাছের সেলে নেই তারা। তবুও নাকতলার হেভিওয়েট বাসিন্দার এখন পড়শিদের মধ্যেই তারাও! তাহলে কীভাবে পার্থ কাটালেন আজকের দিন? জেল সূত্রে খবর, লেখালিখির মধ্যেই পার্থ ডুব দিয়েছিলেন। আগেই জানা গিয়েছিল যে, পার্থ খাতা-কলম চেয়ে নিয়েছিলেন জেলে বসে লেখালিখি করবেন বলে। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এখন প্রশ্ন পার্থ লিখছেনটা কী? জানা যাচ্ছে একাকী জেলে বসে মগজাস্ত্রে শান দিচ্ছেন তিনি। তৈরি হচ্ছেন আগামীর মেগাফাইটের জন্য। পার্থ বানাচ্ছেন নিজের মতো করে প্রশ্নমালা। তৈরি হচ্ছেন বৃহত্তর যুদ্ধের জন্য। ইডি পার্থর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে, তারই পাল্টা দেওয়ার মহড়া সেরে নিচ্ছেন জেলে বসে। দীর্ঘদিনের মন্ত্রী ও অর্থনীতিতে ডক্টরেট খুব ভালভাবে জানেন, ঠিক কোথায় রয়েছে ফাঁকফোকড়। কীভাবে তাঁকে ভবিষ্যতে বেগ দিতে পারে সিবিআই। পার্থ নোট করে নিচ্ছেন, মামলায় তাঁর স্বপক্ষে রয়েছে ঠিক কী কী প্রমাণ। কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নিজের আইনজীবী দলের হাত শক্ত করছেন পার্থ। আইনি টিমের হয়ে উঠছেন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। ছকে নিচ্ছেন কোন কোন ডকুমেন্টস বা নথির ভিত্তিতে ইডি-র মোকাবিলা করবেন তিনি। জেল কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল যে, পার্থ সম্ভবত জেল-ডায়েরি লিখবেন, বা পেন-কাগজে লিপিবদ্ধ করবেন দিনযাপনের রুটিন। কিন্তু না, পার্থর মাথায় কামব্যাক ইনিংসের নীলনকশা তৈরি করছেন। এমনটাই জানা যাচ্ছে জেল মারফত। 


এদিন পার্থকে যিনি যোগব্যায়াম করাতে আসেন, তিনিও আসেননি। তবে চিফ মেডিক্যাল অফিসার এসে তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে গিয়েছেন। তাঁর সেল ব্লকেই ছিলেন শান্তি সুরানা। চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে প্রতারণার অভিযোগে এই প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারই তাঁরও ঠিকানা। তাঁকে এদিন আমদানি ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এদিন সেল ব্লকের বাইরেও বেরোতে পারেননি পার্থ। কারণ সুভাষ গার্ডেনের পাশের ক্লাব চত্বরে একটি অনুষ্ঠান ছিল। যেখানে পার্থর প্রাক্তন ক্যাবিনেট সতীর্থ ও রাজ্যের মন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন আরেক সাংসদ। ছিলেন কারা দফতরের আইজি ও সচিবও। এদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে চারটে পর্যন্ত লক-আপের বাইরে বেরোতে পারেননি কোনও বন্দিই। ওই অনুষ্ঠানে নিরাপত্তাজনিত কারণের জন্যই নেওয়া হয়েছিল এই পদক্ষেপ। এমনকী এদিন পার্থর সঙ্গে দেখা করার অনুমোদন ছিল না কারোরই।


আচ্ছা যে পার্থ খেতে এত ভালবাসেন, জেলে বসেই মাছ-তেলেভাজার আর্জি জানান, তাঁর বিশেষ দিনের মেন্যুতেই বা কী ছিল? আজ কয়েদিদের জন্য বিশেষ মেন্যুই ছিল। দই দিয়ে মাছের কালিয়ার সঙ্গে ছিল শেষ পাতে রসগোল্লা ও বোঁদে। যদিও জেল সূত্রে খবর, 'জেল ফাইল'-এ প্রতি সোমবারই থাকে মাছের ব্যবস্থা। তবে এদিন সেই মাছের পদে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল শুধু দই। পার্থ কেন কারোর ভাগ্যেই জোটেনি মাটন। গত শুক্রবার পার্থদের ডায়েট থেকে বাদ গিয়েছিল মাটন। কয়েদিদের প্রত্যাশা ছিল যে, এদিন তাদের ভাগ্যে জুটতে পারে পাঁঠার মাংস। তবে তা মেলেনি কারোরই। আজ রাতে পার্থ খেয়েছেন ডাল-ভাত ও পাঁচমিশালি সবজি। আরও একটা দিন কেটে গেল পার্থর। এখন নতুন ভোরের অপেক্ষায় তৃণমূলের একদা মহাসচিব।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)