নিজস্ব প্রতিবেদন: করোনাকে কি আমরা হারিয়ে দিয়েছি?


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

তা পেরেছি বইকি! না হলে ধীরে ধীরে লকডাউন (lockdown) উঠল কী করে? মানুষ করোনাকে জয় করেছে বলেই না টিকা আবিষ্কার করতে পেরেছে? সেই টিকাদানও তো চলছে সগৌরবে। এদিকে কোথাও কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। ট্রেন-বাস সব চলছে। গড়গড় করে সগৌরবে গড়িয়ে চলেছে মহা-জীবন। 'সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং' শব্দটি এই ক'দিনের ব্যবধানেই যেন খরোষ্ঠী লিপির কোনও শব্দে পর্যবসিত, যার মানে বোঝা যায় না! মাস্ককে আমরা প্রবল পৌরুষে (নারীপুরুষ নির্বিশেষেই ব্যবহার করা হল) পরিত্যাগ করতে পেরেছি। 


কিন্তু রৌদ্রোজ্জ্বল 'নিউ নর্ম্যাল' (new normal) থেকে এ কোন সকালে আমরা এসে পৌঁছলাম, যা রাতের চেয়েও অন্ধকার?


আরও পড়ুন: টিকার জোগান বাড়াতে মরিয়া কেন্দ্র, জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন Sputnik-V-কে


হ্যাঁ, অন্ধকার। কেননা, পোস্ট-নিউনর্ম্যাল এই সময়-পর্বে করোনার পুনরুত্থান আমাদের এমন এক অন্ধগলিতে এনে ফেলেছে যে, আমরা বুঝতেই পারছি না, ঠিক কতটা বিপন্নতার মধ্যে পড়ে রয়েছি।


বিপন্নতার কিছু নমুনা?


এই কলকাতাতেই একদিনে ১০০০ জনের বেশি সংক্রমিত হয়েছেন। রাজ্য জুড়ে সংখ্যাটা ৪০০০ হাজার পেরিয়ে গেল। এখনই হাসপাতালে বেড নেই। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে ১ দিনে সব চেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের হদিস পাওয়া গিয়েছিল আগের বছর ২২ অক্টোবর। সংখ্যাটা ছিল ৪ হাজার ১৭২। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের দাপটে সেই রেকর্ডও ভাঙল! এবার ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৪ হাজার ৩৯৮! বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যাঁরা করোনা টেস্টের আওতার বাইরে, ভাইরাসের কবলে পড়েছেন তাঁরাও। 


এর উপর আবার দেশে দেখা দিয়েছে ঘোর টিকাসঙ্কট। তা ছাড়া নয়া স্ট্রেনের সামনে উদ্ভাবিত টিকাগুলি তেমন কার্যকরও হচ্ছে না।


দ্বিতীয় দফার এই ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা করোনা-পরিস্থিতিতে লকডাউন তো দূরের কথা, মানা হচ্ছে না ন্যূনতম সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিংও (social distancing)


যদিও আগের বার ঠিক এই পরিস্থিতিতে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছিল। হাসপাতালে রেখে রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব হবে না দেখেই বিভিন্ন স্পটে কোয়ারান্টিন সেন্টার খোলা হয়েছিল। ছোট ছোট কন্টেনমেন্ট জোন তৈরি করা হয়েছিল। ভিড় জমায়েত কড়া ভাবে নিষিদ্ধ ছিল। মাস্ক, স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল সর্বত্র।


আর এবারে কি চলছে? 


লকডাউন এখন শুধু অতীত-ই নয়, প্রায় স্বপ্ন! হইহই করে দেশ চলছে নিজের রঙে-ঢঙে। সব চেয়ে বড় কথা, রাজ্যে এখন সগৌরবে চলিতেছে গণতন্ত্রের বৃহত্তম উৎসব। আট দফায় বিধানসভা ভোট। স্বাস্থ্যবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখানে বহুদিন ধরেই চলছে মিটিং-মিছিল-জমায়েত। এমতাবস্থায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরঅস্ত, কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষই এখন আর পরছেন না মাস্কও। স্যানিটাইজার ব্যবহারও এখন অনেকেই ছেড়েছেন।


ঠিক এই মুহূর্তে রাজ্যে করোনার এই বাড়বাড়ন্তের জন্য বিশেষজ্ঞরা নির্বাচনকেই দায়ী করছেন। তাঁদের দাবি, এখনও চার দফা ভোটগ্রহণ বাকি। তাই অবিলম্বে মিটিং-মিছিল-সহ যাবতীয় প্রচার কর্মসূচির উপর জারি হোক নিষেধাজ্ঞা।


পরিস্থিতি ভয়াবহ আঁচ করে চতুর্থ দফার আগেই অবশ্য নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে নির্বাচন কমিশনও (election commission)। বার্তা স্পষ্ট। করোনা সচেতনতায় অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রী, প্রার্থী এবং প্রচারকর্মী-সমর্থকদেরই। করোনা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে নির্বাচনী জনসভা, মিছিল-সহ যাবতীয় কর্মসূচি বাতিলও করে দেওয়া হতে পারে। 


কিন্তু কার্যক্ষেত্রে আদৌ কি এতটা কড়া হতে পারবে কমিশন? আর, হলেও তাতেও কি হুঁশ ফিরবে দুঃসাহসী বেপরোয়া জনগণসাধারণের?


আরও পড়ুন:  উদ্বেগ বাড়ছে কোভিডে, বিদেশে রেমডেসিভির ইঞ্জেকশন পাঠাবে না ভারত