দুঃখ-শোক-শঙ্কার মধ্যে সবুজের ইঙ্গিতও রয়েছে! এই নববর্ষে ঘোষিত হোক তারই জয়গান
`আমাদের শৈশব, বাল্যকাল, কৈশোর, তারুণ্য এখনকার তুলনায় অনেক বেশি সহজ ছিল`।
রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, নাট্যকার
দৈনন্দিন জীবনে Dominance of political parties-ই এখন সব চেয়ে হতাশার ব্যাপার। আমাদের শৈশব, বাল্যকাল, কৈশোর, তারুণ্য এখনকার তুলনায় অনেক বেশি সহজ ছিল। সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া একটি জাতির দু'চোখে তখন অনেক আশা-স্বপ্ন। কিন্তু এখন সময়টা যেন কেমন বদলে গিয়েছে!
সেই বদলে-যাওয়া সময়-পর্বেই হাজির একটি নববর্ষ। কেমন সময়ে এই নববর্ষ এল? ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত। যদি গত পাঁচ-ছ দিনের খবরের কাগজ খুলি, তবে দেখব, সেখানে প্রধান উপজীব্যই হল পরস্পরকে গালাগাল দেওয়া! সেই ১৯০৫ সালে যে-বাঙালিয়ানার ধ্বজা উড়েছিল, মুক্ত স্বাধীন সেই বাঙালিয়ানার নিরিখে দেখলে এখন আর কতটুকু বাঙালিয়ানা বেঁচে আছে? সেই সময়ে এবং তার পরেও একটা নতুন জাতি গড়ে ওঠার আনন্দে ও উদ্দীপনায় যেন প্রতিটি দিনই নববর্ষ ছিল!
কিন্তু তার পর থেকেই এবং অনেক বেশি করে এখন জীবন অনেক জটিল হয়ে গিয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এখন সব চেয়ে বড় কথা হল Dominance of political parties। এখন কাগজে সব সময় সব চেয়ে বেশি ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা জুড়ে থাকে রাজনৈতিক খবর। নেতাদের চাপানউতোর, এই ভিড় ও চিৎকারের মাঝে কোথায় নববর্ষ? 'মধুবংশীর গলি'তে যেমন বর্ণনা ছিল তেমন একটা নষ্ট ধ্বস্ত পরিবেশ; আর ক্ষমতার অকুণ্ঠ কল্লোল। নেতারা শুধু বলছেন, আমার পার্টি ক্ষমতায় এলে এই-এই করে দেব! আমি বলি, তা হলে এতদিন করোনি কেন বাপু? আর সাধারণ লোকজনই-বা কী করে শুনছে এসব? আমজনতাও কি তবে সিনিক্যাল হয়ে গিয়েছে?
কিন্তু তবু তো সূর্য রোজই ওঠে। ফলে ওই রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে 'জয় হোক, জয় হোক নব অরুণোদয়।/... ... ...এসো মৃত্যুঞ্জয় আশা জড়ত্বনাশা--/ ক্রন্দন দূর হোক, বন্ধন হোক ক্ষয়॥' কিন্তু এখন কি আর এর কোনও তাৎপর্য আছে? বলছি বটে, 'জয় হোক', বলছি বটে 'জড়ত্ব নাশ হওয়া' আর 'বন্ধন ক্ষয় হওয়া'র কথা! তবু এত ধুলো আর ক্ষয় আর চিৎকারের মধ্যে এসে-পড়া এই নববর্ষ কি অনেকটা সেই অলবেয়ার কামু তাঁর 'প্লেগ'-য়ে ধূসরিত মলিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা রোরুদ্যমান যে বসন্তের কথা বলেছিলেন, spring is crying here in the marketplace,তেমনই কিছু নয়? তাই ইদানীং নববর্ষ এলে ভয় করে।
তবু, স্বপ্ন আছে! দুঃখ, শোক, বেদনা, শঙ্কা, হতাশা, যন্ত্রণার মধ্যেই ছোট ছোট সবুজের ইঙ্গিতও থাকে। সেই ইঙ্গিত এখনও কোথাও রয়েছে। আর জীবন কিন্তু সব সময় তাকেই প্রকাশ করে। সেই ইতিবাচকতাটা নিয়েই বেঁচে থাকা। এই নববর্ষে শেষমেশ তাই সেই প্রার্থনাই রইল।
((অনুলিখন))