শ্রীকান্ত আচার্য 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

পয়লা বৈশাখ কোনওদিনই খুব সেলিব্রেশনের দিন ছিল না।ছেলেবেলায় সবথেকে বেশি মনে আছে মায়ের সঙ্গে দোকানে যেতাম। সেখানে ক্রেতাদের বিশেষ খাতির দেখানো হত। সেই সময় কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়া বিরাট বিলাসিতা, মায়ের সঙ্গে গিয়ে কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়া মানে আমার আর আমার দিদির কাছে হাতে স্বর্গ পাওয়া। এখন সবটাই জলভাত। পয়লা বৈশাখ মানে প্রচুর উদযাপন যে হত তা নয়, এখন অনেক বেড়েছে। মায়ের সঙ্গে গিয়ে একটা দুটো জামাও কিনতাম, চৈত্র সেলে গড়িয়াহাট যেতাম। হকারদের ক্রেতাদের প্রলোভন দেখানোর একটা বিশেষ টোন ছিল। আমি আবার সেটা শিখে নিতাম, বাড়িতে এসে যখন আড্ডা জমত, আমি মিমিক্রি করতাম। 


বড় হয়ে অবশ্য দেখেছি, বসুশ্রী সিনেমা হলে পয়লা বৈশাখে বৈঠকী আড্ডা জমত। সকল অভিনেতা অভিনেত্রী, গায়ক, গায়িকা সকলে একসঙ্গে বসে আড্ডা দিতেন, গান বাজনা হত। এখন পারস্পরিক মেলামেশাটা একদম হারিয়ে গিয়েছে। সবাই উৎসবের মেজাজে থাকতেন সেই দিন। উত্তম কুমার নিয়মিত আসতেন। গান গাইতেন, সেই গল্পও সকলের জানা। ওই এলাকা জমে যেত, ভরে উঠত। এখনকার প্রজন্মের কেউ সেইভাবে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করেন না। অনেকে জানেনও না কবে বাংলার নববর্ষ, সেটা খারাপ লাগার।



আমার ছেলেমেয়েদের কাছেও এই দিনটার আলাদা করে কোনও গুরুত্ব নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাধান্য বা প্রায়োরিটিগুলো অনেক বদলে গেছে। আমরা যা ভাবতাম ওরাও যে তা ভাববে এমনটা একদমই নয়। আমার যেমন পয়লা বৈশাখ বলতেই একটা আলাদা অনুভূতি হয়, ওদের মধ্যে কখনও সেটা দেখিনি। প্রতি বছর আমরা নিজেদের একটা প্রমিস করে থাকি, এই বছর এটা করব বা এটা করব না। ঠিক এই মুহূর্তে যে পরিস্থিতির মধ্যে আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি, সুদূর তো ছেড়ে দিয়েছি, অদূর ভবিষ্যতের কথাও ভাবতে পারছি না। যে অতিমারি নিয়ে আমরা নানারকমভাবে বিপর্যস্ত সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একদল লোক যেমন মানুষকে সতর্ক করছেন, একদল আবার ভয় দেখাচ্ছেন, তাই ভিতরে ভিতরে পজেটিভ থাকা, ভয়হীন থাকাটা খুব জরুরি। বিরাট সংখ্যক মানুষের মনের জোর কমে যাচ্ছে এর ফলে। তাই আমি বলি সতর্ক থাকুন, সজাগ থাকুন, ভয় পাবেন না, আমার মতো করে এটা থামানোর চেষ্টা করব। 



আর রাজনৈতিক উত্তাপের মাঝেই পয়লা বৈশাখ, প্রতিদিন নানা খবর পড়ছি, শুনছি। রাজনীতি অনেক কথা বলে ফেলেছে, এবার রাজনীতিকে শুনতে হবে। মানুষ কী চাইছে, মানুষ কী ভাবছে, মানুষের শিক্ষা মানুষকে কী বলছে। আমি চাই যে দলই আসুন না কেন, তাঁকে একটু আক্ষরিক অর্থেই মানুষের কথা শুনতে হবে। তাতে রাজনীতিরই লাভ হবে।


আরও পড়ুন- নববর্ষের সেকাল-একাল: ছোটবেলাতেই ১ বৈশাখ ছিল আমাদের কাছে একটা উৎসব