কেন পরিকল্পনা করে কলকাতায় এসে আত্মঘাতী হলেন হর্ষ? মোবাইলেই লুকিয়ে সূত্র
বৃহস্পতিবার কলকাতার ওই হোটেলে ওঠেন তিনি। তারপর তাঁকে আর কেউ হোটেল থেকে বেরোতে দেখেননি।
নিজস্ব প্রতিবেদন: গলা কেটে আত্মঘাতী হয়েছেন জামশেদপুরের ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া হর্ষ বালানি। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুমান তদন্তকারীদের। সম্পর্কের টানাপোড়েনেই আত্মহত্যা। এই তত্বও জোরাল হচ্ছে। হর্ষের কল লিস্ট খতিয়ে দেখে কলকাতার এক ম্যানেজমেন্ট ছাত্রীর ফোন নম্বর পেয়েছে পুলিস। তবে ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট হাতে পেলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, হর্ষের গলায় যে ক্ষত ছিল, তার গভীরতা বাঁদিকে বেশি ছিল। গলা বাঁদিক থেকে ডান দিকে কাটা হয়েছিল। ডাক্তারি পরিভাষায় একে ‘আরটেরিয়াল উন্ড’ বলে। সেক্ষেত্রে কোনও ডান হাতি ব্যক্তি যখন নিজেই নিজেকে আঘাত করবে, এরকম ক্ষত তৈরি হবে। হর্ষ নিজেও ডানহাতি ছিলেন। যদি অন্য কেউ তাঁর গলা কেটে থাকেন, তাহলে ক্ষতের গভীরতা ডানদিকে বেশি থাকত। অর্থাত্ কাটাটি ডানদিক থেকে বাঁদিকে হত। ক্ষত দেহেই পুলিস প্রায় একপ্রকার নিশ্চিত, পরিকল্পনামাফিক আত্মঘাতী হয়েছেন হর্ষ।
আরও পুড়ুন: স্ত্রীকে অপহরণ করে নিজের শাশুড়ির সঙ্গে ভরা রাস্তায় যা করলেন জামাই...
বৃহস্পতিবার কলকাতার ওই হোটেলে ওঠেন তিনি। তারপর তাঁকে আর কেউ হোটেল থেকে বেরোতে দেখেননি। অন্য কাউকে তাঁর ঘরে ঢুকতেও দেখা যায় না। হোটলকর্মীরা জানাচ্ছেন, ঘটনার দিন সকাল থেকেই হর্ষের রুমের বাইরে ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ বোর্ড ঝোলানো ছিল। নিজেকে একপ্রকার সবার থেকে আলাদা করে রাখতে চেয়েছিলেন তিনি। অর্থাত্ হর্ষ যে আত্মহত্যার করার পরিকল্পনা নিয়েই হোটেলে উঠেছিলেন, সেটাও প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, গুজরাটের বাসিন্দা জামসেদপুরের ছাত্র কেন আত্মহত্যার জন্য কলকাতা বেছে নিলেন? তবে কি আত্মঘাতী হওয়ার সেই কারণও লুকিয়ে রয়েছে কলকাতাতেই?
আরও পড়ুন: ছাদে মেয়েকে নিয়ে বাজি ফাটাচ্ছিলেন আইনজীবী, স্ত্রীকে ডাকতে এসে বেডরুমে যে অবস্থায় দেখলেন...
পুলিস হর্ষের ফোনের কল লিস্ট খতিয়ে দেখেছে। সেখানে এক তরুণীর নাম উঠে আসছে। তিনিও ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী। সম্ভবত, তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল হর্ষের। তবে কি প্রেমঘটিত কোনও কারণেই এতটা নির্দয়ভাবে নিজেকে শেষ করে দিলেন হর্ষ? উত্তরটা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। হর্ষের বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস জানতে পেরেছে, একদা সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচণ্ড আসক্তি ছিল হর্ষের। কিন্তু ইদানীং একেবারেই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি। মিশুকে, চঞ্চল, ছটফটে হর্ষ সব্বার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে শুরু করেছিলেন। মানসিক অবসাদ থেকেই একাজ করেছেন তিনি, অন্তত এমনটাই মনে করছে পুলিস।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে ধর্মতলা চত্বরের অভিজাত হোটেল পিয়ারলেস ইন থেকেই অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ওই ছাত্রকে। হোচেলের ৫ তলায় ১৪০৭ নম্বর ঘরের শৌচাগার থেকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ওই ছাত্রকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিত্সকরা।