জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: রাজ্য সফরে এসে তৃণমূলকে চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি। এদিন সকালে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে সোজা বিজেপি কার্যালয়ে চলে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বৈঠক করেন সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীদের সঙ্গে। তারপরই সুকান্ত-শুভেন্দুকে পাশে বসিয়ে কড়া আক্রমণে বিঁধলেন তৃণমূল সরকারকে। দাবি করলেন, তাঁর নামে মিথ্যা বলা হচ্ছে। দাবি করলেন, পঞ্চায়েতে দুর্নীতি হয়েছে। ভুয়ো জব কার্ড দেওয়া হয়েছে। আশ্বাস দিলেন, সঠিক তথ্যপ্রমাণ নিয়ে এলে বাংলার মানুষ মোটেই বঞ্চিত হবে না।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি বলেন, "আপনাদের সামনে বাধ্য হয়ে আসতে হল আমাকে। দুদিন আগে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। কেন্দ্রীয় সরকার বৈমাত্রেয় সূলভ আচরণ করছে জানিয়ে দেখা করতে চান। শুধু ওদের সঙ্গে দেখা করতেই আমি দিল্লি এসেছিলাম। প্রথমে ওরা বলেছিলেন ৫ জন প্রতিনিধি দেখা করবেন। তারপর আমার পিএসের কাছে বলেন ১০ জন দেখা করবেন। আমি বললাম আপত্তি নেই। তারপর বলেন, সমস্ত জনতার সঙ্গে দেখা করতে হবে। আমি বলি, সচিব সহ অন্যান্যদের সঙ্গে দেখা করে আলোচনার জন্য। তারপর সাড়ে ৭টায় বলেন সব সাংসদ দেখা করবেন। আমি সেটারও ব্যবস্থা করি। তারপর মহুয়া মৈত্র বলেন, একা দেখা করবেন। আমি তারপর বলি কারও সঙ্গে একা দেখা করব না। ডেলিগেট টিমের সঙ্গে দেখা করব। তারপর ৮টায় বলা হয় সব সাংসদরা আসবেন। আমি বলি সেটাই করুন। কিন্তু ৮টা ২০তে আবার বলেন জনতার সঙ্গে দেখা করতে হবে আগে। আমি বলি, আগে আপনাদের ডেলিগেটের সঙ্গে দেখা করব। তারপর জনতার সঙ্গে দেখা করব। যেভাবে আমার নামে মিথ্যা বলেছেন, আমাকে ভিডিয়ো করতে হয়েছে। বলা হয়েছে, আমি নাকি পিছনের গেট দিয়ে চলে গিয়েছি। আমি ৪ নম্বর গেট দিয়েই বরাবর যাতায়াত করি। আমার মনে হচ্ছে মিথ্যাটাই এই সরকারের বুনিয়াদ।" 


সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি আরও বলেন, "পক্ষপাত করার উদ্দেশ্য থাকলে গত ৯ বছরের তথ্য দেব, সেটা দেখুন। ২০০৫ সালে এই অ্যাক্ট আসে। ২০০৪-২০১৪ এর মধ্যে ৪ হাজার ৪১৪ কোটি দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ৩০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।  ১৯,২০,২১ সালে টানা তিনবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। হুগলি সহ একাধিক জেলায় যেখানে গড়মিল হয়েছে, সেখানে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। আমি আজ কলকাতায় এসেছি। ওরা যেখানে বলবে সেখানে কথা বলতে আমি প্রস্তুত। কিন্তু ওদের কথা বলার কেউ নেই।" পরিসংখ্যান তুলে ধরে সাধ্বী জানান, "২০১৪-র পর ৪৫ লক্ষ বাড়ি আমরা দিয়েছি আবাস যোজনায়। ইন্দিরা আবাস যোজনায় অ্যাপ্রুভ হওয়া ১০ লক্ষের বেশি ঘর আমরা তৈরি করেছি। কোভিডের পর থেকে এই রাজ্যের ৬ কোটি ২ লক্ষ মানুষকে বিনামূল্যে চাল দিয়ে আসা হচ্ছে। ৩৯,৭১০০টন চাল দেওয়া হয়েছে।" 


কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দাবি করেন, "মনরেগায় ঘোটালা হয়েছে। মনরেগার টাকা আটকালে তো প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার টাকাও আটকানো হত। ৫৪০০ কোটি দেওয়া হয়েছিল ইউপিএর সময়। আর মোদী সরকার ১১০০০ কোটি দিয়েছে গত ৯ বছরে। মহিলাদের মাত্র ৬০০ কোটি ঋণ দেওয়া হয়েছিল ইউপিএর আমলে। আর মোদী সরকারের সময়, ৭৪০০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। ১১ লক্ষ  বাংলার মহিলা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে কাজ করছেন মোদী সরকারের সময়। এই সব কারণেই ওরা আলোচনা করার বদলে পালিয়ে যান। কারণ দুর্নীতি ছাড়া কথা বলার আর কোনও বিষয় ছিল না। আমি আড়াই ঘণ্টা বসেছিলাম। আজও এসেছি। আমি ভয় পেলে কলকাতায় কেন আসতাম? তথ্যপ্রমাণ নিয়ে সচিবকে নিয়ে আসুন। বাংলার মানুষকে বঞ্চিত হতে দেব না। কথা দিচ্ছি। কিন্তু ভুয়ো জব কার্ড যাদের দেওয়া হয়েছে, তাঁদের তো বের করতেই হবে।" 


সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি তোপ দাগেন, "নিজেদের কর্মীদের জব কার্ড দিয়ে দুর্নীতি করবেন। এটা হতে পারে না। পূর্ব বর্ধমানের ৬টি পঞ্চায়েত, হুগলির ৭টি পঞ্চায়েতে দুর্নীতি হয়েছে। ৪ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। মাত্র একজন পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন।" যদিও তৃণমূলের পালটা কটাক্ষ, তাদের সঙ্গে কথা বলতে এসে এগেই পার্টি অফিস ছুটেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী! ওদিকে সাধ্বী নিরঞ্জনের পাশাপাশি, অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূলের ধরনাকে এদিন কটাক্ষ করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। সুকান্তর তির্যক মন্তব্য, "মনরেগার বকেয়া নিয়ে একটা নাটক চলছে। দিল্লিতে নাটক দেখলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরও ওখানে গিয়েছেন একশো দিনের কর্মী হিসেবে। এই পরিস্থিতিটা হত না যদি প্রতি জেলায় দিশার মিটিং করত।" প্রশ্ন তুলেছেন, "১৪৪ ধারার মধ্যে কীভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ধরনা করছেন?"


শুভেন্দু কটাক্ষ করেন, "২১ জুলাই পিসি ভাইপো দুজনেই বলেছিলেন, কোনও টাকা নেব না। এখন টাকার জন্য কাঁদুনি গাইছেন। এনডিআরএফের কেন্দ্রের তরফে বরাদ্দের টাকা পেয়েছে। এই সুযোগে আরও কিছু টাকা লুঠ করতে চান। কেন্দ্রীয় সরকার লুঠের জন্য টাকা দেবে না। যিনি ২০ কোটি টাকা নিয়ে স্পেন থেকে ঘুরে আসতে পারেন, উনি সামলে দিতে পারেন।" এরপরই শুভেন্দু অধিকারী নাম করে করে একটি বুথের ভুয়ো জব কার্ড হোল্ডারদের তালিকা তুলে ধরেন। বলেন, "১) অভিজিৎ পান্ডে— সিভিক ভলান্টিয়ার। পাকা বাড়ি আছে। ২) হিমাংশু বাগ— হার্ডওয়ারের ব্যবসায়ী। ৩) সুবোধ পান্ডে— বাড়ি পেয়েছেন। নিজের জমি আছে। ৪) অনিল চন্দ্র পাণ্ডে- অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং পেনশন পান।" পুজোর পর আবাস যোজনায় বঞ্চিত ১ লক্ষ মানুষকে নিয়ে বিজেপি পালটা আন্দোলন করবে বলেও এদিন হুঁশিয়ারি দিলেন শুভেন্দু অধিকারী।


আরও পড়ুন, Abhishek Banerjee: 'কার নির্দেশ নিতে আপনি আবার দিল্লি গেলেন'? ফের রাজ্যপালকে নিশানা অভিষেকের



(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)