জগতজোড়া ভালবাসায় বাকরুদ্ধ ‘দনুজদলনী দুর্গা’
“যে বিপুল ভালবাসা পেয়েছি তাতে আমি বাকরুদ্ধ। সবাইকে ধন্যবাদ।”
সৌরভ পাল
বিংশ শতকে পা রাখার পর আর কয়েকটা বছরই পার হয়েছে মাত্র। তখন এতো বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের রমরমাও ছিল না। বিনোদনের মাধ্যম বলতে ছিল কেবল দূরদর্শন-ই। সময়ে সময়ে খবরাখবর, আর সূচি অনুযায়ী গানের অনুষ্ঠান, এই ছিল আপামর ভারতবাসীর টেলিভিশন দর্শন। সেটা ছিল ২০০৪ সাল, বাঙালি প্রথমবার একটা বিপ্লব লক্ষ্য করে। বিপ্লবই বটে! বীরেন্দ্র কৃষ্ণভদ্রের মহালয়ার চিত্রনাট্য তৈরি করে দূরদর্শন প্রথম দেখাল ‘দনুজদলনী দুর্গা’।
দেখুন ছবি- মনে আছে তাঁর কথা? সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় কী এখনও একই রকম আছেন?
টিজার, ট্রেলর, প্রচার বিমুখ একটা প্রভাতি অনুষ্ঠান, স্রেফ নিখাদ বিনোদনই নয়, বলা ভাল বাঙালিকে বুঁদ করে দিল মহালয়া। চেটেপুটে মহালয়ার টেলিভিশন সম্প্রচারের স্বাদ নিল বাঙালি। যার রেশ এখনও রয়ে গিয়েছে। এবং ১৪ বছর পরও যখন সেটা বেঞ্চমার্ক হয়ে রয়েছে, তাহলে নিশ্চিত হয়েই বলা যায় আগামীতেও ‘দনুজদলনী দুর্গা’ এভারেস্টসম উচ্চতাতেই থাকবে। ভিএসএক্স, গ্রাফিক্সের চূড়ান্ত বিপ্লব হওয়ার পরও সেরা হয়েই থাকবে সেই নিদর্শন। আর এই কৃতিত্বের সব থেকে বড় দাবিদার সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- ‘তিনি আছেন এবং সর্বত্রই আছেন’
মাটির ঢেলা থেকে মাতৃরূপের কল্পনার বাস্তবায়ন, সবটাই সম্ভব হয়েছিল সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃজনে। আর তাঁর সেই সৃজন ‘মিথ’ হতে পেরেছে মূলত তিনটি কারণে- এক সম্ভ্রম, দুই সুচারু এবং তিন ঐশ্বর্য। এখন অনেকই বলতে পারেন সর্বগুণ সম্পন্ন সেই শিল্পসৃষ্টি কি এখন হচ্ছে না? হয়ত হচ্ছে! তবে সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, প্রতিটি শিল্পীর উচিত দেবীরূপের মাহাত্ম্য স্মরণে রেখে নিজেকে উপস্থাপন করা। সেটারই হয়তো অভাব!
বছরখানেক আগে জি ২৪ ঘণ্টা ডট কম-এই একটি সাক্ষাত্কারে তিনি জানিয়েছিলেন, “যে শিল্পীরা মহালয়া করছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই সুপ্রতিষ্ঠিত । তবে তাঁরা যেন দেবীরূপের মাহাত্ম্য স্মরণে রেখেই কাজ করেন।” তিনি এও জানিয়েছিলেন, পুজো এলেই তাঁর কথা বেশি করে মনে পড়ে বাঙালির। দেশ-বিদেশ থেকে মানুষের ভালবাসা, আশীর্বাদ পৌঁছে যায় তাঁর কাছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ‘দনুজদলনী দুর্গা’-কে ভালবাসা উজাড় করে দিয়েছে সবাই। ফেসবুক থেকে মোবাইলের টেক্সট বক্স, টেক চিঠি উপচে পড়েছে তাঁর ঠিকানায়। দর্শকদের এই ভালবাসায় কার্যত বাকরুদ্ধ শিল্পী।
বর্তমানে টোরেন্টেো-তে থাকেন সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেখান থেকেই ফেসবুকে বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, “যে বিপুল ভালবাসা পেয়েছি তাতে আমি বাকরুদ্ধ। সবাইকে ধন্যবাদ।”