ব্রাত্য নেতাজি এখন ঘুরে দাঁড়ানোর অস্ত্র বাম ছাত্র ব্রিগেডের
নেতাজির ১০৫ তম জন্মবার্ষিকীতে, পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিআই (এম) নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্বীকার করেন যে কমিউনিস্টরা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় সুভাষ চন্দ্র বসুর কাজকে ভুল বুঝেছিল।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: আগামী ২ সেপ্টেম্বর কলকাতা শহরে হতে চলেছে ছাত্র সমাবেশ। দেশের পাঁচ প্রান্ত থেকে, শুরু হয়েছে এসএফআই-এর 'শিক্ষার জন্য পদযাত্রা'। সর্বভারতীয় ছাত্র জাঠা শুরু হয়েছে ১ অগস্ট থেকে। আর এরই মাঝে ৩১ অগস্ট হয় এসএফআই-এর আরও একটি ছাত্র সমাবেশ। আর সেই ছাত্র সমাবেশের পোস্টারেই উঠে এল নেতাজির কথা। ৩১ অগস্টের ছাত্র সমাবেশের পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘এ মাটি শ্যামাপ্রসাদের নয়, এ মাটি সুভাষচন্দ্র বোসের’। নেতাজির বিষয়ে এক সময়ে বামপন্থীদের বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল সারা বিশ্ব। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জাপানিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কারণে বামপন্থীদের রোষানলে পরেন নেতাজি।
‘তোজোর কুকুর’
একসময় ভারতের কমিউনিস্টরা নেতাজিকে ‘জাপানি জেনারেল তোজোর কুকুর’ বলে অভিহিত করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের সমর্থনের জন্য কমিউনিস্ট আহ্বানকে অস্বীকার করেন নেতাজি। এর পরেই কমিউনিস্টরা নেতাজিকে সাম্রাজ্যবাদের কুকুর বলে উপহাস করে।
অবিভক্ত সিপিআই-এর মুখপত্রে তারা নেতাজির বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে। বিভিন্নভাবে তাকে গোয়েবলস, জাপানি জেনারেল তোজোর কুকুর, তোজোকে বহনকারী গাধা, জাপানি সাম্রাজ্যবাদীর নেতৃত্বে চলা একজন হিসাবে বর্ণনা করে। জাপানি সাম্রাজ্যবাদের মুখোশ হিসাবে বর্ননা করা হয় তাকে।
কী বলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
নেতাজির ১০৫ তম জন্মবার্ষিকীতে, পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিআই (এম) নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্বীকার করেন যে কমিউনিস্টরা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় সুভাষ চন্দ্র বসুর কাজকে ভুল বুঝেছিল।
তিনি বলেছিলেন যে ‘আমরা এখনও জার্মানি, ইতালি এবং জাপানের মতো অক্ষ শক্তিগুলির সঙ্গে একসঙ্গে ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতকে মুক্ত করতে নেতাজির ভূমিকার বিরোধিতা করি। কিন্তু মহান নেতার ভুল মূল্যায়ন করার জন্য আমাদের [কমিউনিস্টদের] ক্ষমা চাওয়া উচিত’।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: চাইলে বাড়িতে বুলডোজার চালান, বিস্ফোরক মমতা
১৯ জুলাই ১৯৪২ সালে পিপলস ওয়ার, ভলিউম ১ নম্বর ২ এডিশনের প্রথম পাতার কার্টুনটি তীব্রভাবে সুভাষ চন্দ্র বসুর বিরধিতা করে।
কি বলছেন বর্তমান বাম ছাত্র নেতারা?
ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক ময়ুখ বিশ্বাস বলেন, আরএসএস এর দুই জন দালাল দেশ থেকে নেতাজির ইতিহাস কে মুছে দিতে চাইছেন। সেই কারণেই কলকাতার বন্দরের নাম বদল করে রাখা হয়েছে শ্যামাপ্রসাদের নামে। সেই জাইগায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই নাম পরিবর্তনের কোনও বিরধিতা করেননি বলেও মনে করিয়ে দেন ময়ুখ বিশ্বাস। তিনি বলেন রাজ্য এবং দেশের সরকার দুই জন মিলে যেভাবে দেশ থেকে সুভাষ চন্দ্রের ইতিহাস মুছে দিচ্ছে তার বিরোধিতা করছেন তাঁরা। তিনি আরও বলেন দেশে বাঙালিদের সব আইকনদেরকেই স্মরন করছে তাদের জাঠা। সেই কারণেই তাদের পোস্টারে সুভাষ চন্দ্রের নাম রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কী বলছেন তৃণমূল নেতারা?
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র সুদীপ রাহা জানিয়েছেন, ‘যে সিপিএম নেতাজীকে তোজোর কুকুর বলেছিল, যে সিপিএম আজও বর্ধমানে ক্ষুদিরাম-নেতাজির ছবিতে ঢিল ছুঁড়েছে, সেই লাল পিঁপড়ের পার্টির মুখে এসব মানায় না। দ্বিচারিতা সিপিএম-এর বৈশিষ্ট্য, এই পোস্টার সেই বৈশিষ্ট্যকেই আবার স্পষ্ট করে দিল। শ্যামাপ্রসাদের বাংলা যদি নাই হয়, তাহলে শ্যামাপ্রসাদের পার্টিকে ওদের নিজেদের ২২ শতাংশ ভোট বিলিয়ে দেওয়ার জন্য কোনোও লেনিন-স্ট্যালিনরা মাথার দিব্যি দিয়েছিল? না জানে নেতাজি, না বোঝে বাংলার মন। এই লাল পিঁপড়ের পার্টির উচিত ভেনিজুয়েলা কিংবা ফ্রান্সে গিয়ে রাজনীতি করা, বাংলার মানুষ এবং রাজনীতিতে এরা গুরুত্বহীন’।