নিজস্ব প্রতিবেদন : দীর্ঘ ৮ বছর ধরে কলকাতা পুরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালনের পর আজ তিনি প্রাক্তন। কলকাতার মেয়র হিসেবে পদত্যাগ করেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। পদত্যাগের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নরমে গরমে কার্যত ক্ষোভ উগরে দিলেন সদ্য প্রাক্তন শোভন চট্টোপাধ্যায়।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কলকাতার মেয়র হিসেবে ইস্তফার প্রসঙ্গে তিনি জানান, তাঁর পদত্যাগের বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত-ই 'দিদি' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়েছেন। তাঁকে যা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি তা পালন করেছেন মাত্র। কিন্তু, কেন তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হল, সেই কারণ তাঁর জানা নেই বলেই সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। একইসঙ্গে তাঁর 'বিস্ফোরক' প্রস্তাব, দল চাইলে তিনি কাউন্সিলর হিসেবেও পদত্যাগ করতে রাজি। বলেন, "দল নির্দেশ দিলে আমি কাউন্সিলর আসন থেকেও পদত্যাগ করব। সেখান থেকে ববিদা নির্বাচিত হয়ে আসুক।" আরও বলেন, "আমি নেতা, মন্ত্রী বা মেয়র হয়ে জন্মাইনি। দল আমাকে যখন যা নির্দেশ দিয়েছে, যে দায়িত্ব সঁপেছে, আমি সেটা পালন করেছি। ভবিষ্যতেও করব। "


সাংবাদিক সম্মেলনে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যে এদিন বার বারই উঠে আসে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে তাঁর 'আত্মিক' সম্পর্কের কথা। ১৯৮৫ সালে প্রথমবার কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালেনর পর ২০১০ সালে কলকাতা পুরসভার মেয়র হিসেবে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নির্বাচন করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, এতগুলো বছরের এতগুলো দিনে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে তাঁর একটা আত্মিক যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। সেই সম্পর্ক ভোলা কঠিন। স্পষ্ট ভাষায় জানান, কলকাতা পুরসভা পরিচালনার কাজে ভাবী মেয়রকে ভবিষ্যতে সবরকম সহযোগিতা করবেন তিনি।


বলেন, দলের তরফে এখনও কিছু জানেননি। তবে সংবাদমাধ্যম মারফত জেনেছেন যে কলকাতার পরবর্তী মেয়র হচ্ছেন ফিরহাদ হাকিম। তাঁকে শুভেচ্ছা জানান শোভন চট্টোপাধ্যায়। বলেন, "ববিদা আমার বড়দার মতো। আমার ববিদার জন্য শুভেচ্ছা।" মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা শুরু হয়ে যায়। এদিন সেই প্রসঙ্গ নস্যাত্ করে দেন কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক। বলেন, "ব্য়ক্তিজীবনে আমি দল সর্বস্ব ছিলাম। আগামী জীবনেও তাই থাকব।" তাঁর পদত্যাগের পিছনে কোনও 'ষড়যন্ত্র' কাজ করেছে কি না, সেই তত্ত্বও এদিন উড়িয়ে দেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি, মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা চেয়ে তাঁর পদত্যাগপত্রের ভাষা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক উসকে উঠেছে। যদিও আজ সাংবাদিক বৈঠকে তার কোনও 'ব্যাখা' দিতে রাজি হননি প্রাক্তন মহানাগরিক।


আরও পড়ুন, "ও ভালো থাকুক", উষ্মা উধাও, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে শোভনকে 'শুভেচ্ছা' মুখ্যমন্ত্রীর


পুরসভা-দল সম্পর্কে আবেগঘন থাকলেও, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে মেজাজ হারান শোভন চট্টোপাধ্য়ায়। মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফার পর রত্না চট্টোপাধ্যায় প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি আজও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ভালোবাসেন। ১০ বছর পরেও যদি শোভন চট্টোপাধ্যায় ফিরে আসেন, তাহলেও তিনি অপেক্ষা করে থাকবেন। কিন্তু স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনওরকম সম্পর্ক রাখতে বা বিবাদ মিটিয়ে নিতে তিনি যে রাজি নন, এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে তা আরও একবার স্পষ্ট করে দেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। বলেন, "পারিবারিক বিষয়ে প্রথমদিন যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আজও সেই একই অবস্থানেই আছি। যেখানে যেটা জানানোর, প্রথমদিন থেকে সেখানে জানিয়েছি।"


তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে টানাপোড়েনের জেরে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও সাংবাদিক বৈঠকে সে অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন প্রাক্তন মেয়র ও মন্ত্রী। শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমি নিজের মনকে শক্ত করে কাজ চালিয়ে গিয়েছি। কোথাও আমার মনোযোগের কোনও অভাব ছিল না। সমস্ত দায়িত্ব পালন করেছি। আমার পদত্যাগের পর কলকাতা পুরসভায় কোনও ফাইল পেন্ডিং আছে, কেউ বলতে পারবে না।"


তিনি দাবি করেন, রত্না চট্টোপাধ্যায় মিথ্যাচার করছেন। বলেন, "আমার মত বিপদে যেন চরম শত্রুও না পড়ে। যে ধরনের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা হয়েছে, তারপর আমি মরেও যেতে পারতাম। কিন্তু বেঁচে এখানে এসে বসতে পেরেছি।" বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'শুভানুধ্যায়ী' হিসেবে উল্লেখ করে, তিনি এদিন ফের একবার সমস্ত অভিযোগ অমূলক বলে দাবি করেন। জানান, ইডির জিজ্ঞাসাবাদের সময় বৈশাখীর সঙ্গে বসেই আইনি বিষয়ে আলোচনা করতেন রত্নাদেবী।


শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে 'সম্পর্কে'র সুবাদে কলকাতা পুরসভা ও মন্ত্রিত্বের কাজে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় হস্তক্ষেপ করতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদি বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ উঠতেই চটে যান শোভন চট্টোপাধ্য়ায়। বলেন, "আমি বাচ্চা ছেলে নই। কোনটা কী করতে হয়, কোন সিদ্ধান্তটা কখন নিতে হয় আমি জানি।" কেউ কখনও কোনওভাবে পুরসভা বা মন্ত্রিসভার কাজে হস্তক্ষেপ করেননি বলে সাফ জানান প্রাক্তন মেয়র-মন্ত্রী।