দোষীদের শাস্তি হবে, মাদ্রাসা-কাণ্ডে জানাল বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট, স্তম্ভিত শহরের বুদ্ধিজীবীরা
সল্টলেকের গেস্ট হাউসে আগে থেকে `বুক` করে রাখা ঘরে উঠতে গিয়ে অপমানিত হয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষকেরা। বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে অভিযোগও করা হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানিয়েছে, দোষীদের শাস্তি হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: সল্টলেকের গেস্ট হাউসে আগে থেকে 'বুক' করে রাখা ঘরে উঠতে গিয়ে অপমানিত হয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষকেরা। বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে অভিযোগও করা হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানিয়েছে, দোষীদের শাস্তি হবে।
এখনও এ শহরে এত সাম্প্রদায়িকতা! মাদ্রাসার শিক্ষক হওয়ায় গেস্ট হাউসে থাকতে দেওয়া হল না ১০ জন স্কুলশিক্ষককে। স্বাভাবিক ভাবেই মাদ্রাসা শিক্ষকেরা এতে অবাক ও অপমানিত। কেউ কেউ ঘটনার অভিঘাত সহ্য করতে না পেরে কেঁদেও ফেলেছেন। সংশ্লিষ্ট গেস্ট হাউসের কর্তৃপক্ষ অবশ্য বিষয়টি থেকে তড়িঘড়ি নিজেদের হাত ধুয়ে ফেলেছে এই বলে যে, আশপাশের লোকজনের আপত্তি ছিল বলে এটা ঘটেছে। ঘটনায় দু'টি গেস্ট হাউসের নাম উঠে এসেছে। একটি ডি এল ৩৯-এর বাড়ি, অন্যটি সি এল ১৬৪-র বাড়ি।
ওই মাদ্রাসা শিক্ষকেরা পেশাগত কারণে মালদা থেকে বিকাশ ভবনে এসেছিলেন। ভোরবেলাতেই শহরে চলে আসেন তাঁরা। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য আগে থেকেই ঘর 'বুক'ও করা ছিল তাঁদের। কিন্তু তার পরেও এই বিপত্তি। কেন? কারণ তাঁদের সম্প্রদায়গত পরিচয়। জাতের নামে এই বজ্জাতি যে কসমোপলিটন শহর-কলকাতার উপকণ্ঠেই এ ভাবে দেখা যাবে, কে ভাবতে পেরেছিল!
বিষয়টি নিয়ে কী বলছেন শহরের বুদ্ধিজীবীরা? বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন জানান, সাম্প্রদায়িক তাসটা এখানে দীর্ঘদিন ধরে খেলা হচ্ছে। আল কায়েদা সংযোগের যে ঘটনা ঘটেছে এ রাজ্যে, তার দায় কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ওপর পড়তে পারে না। নাম বা পদবির জন্য কারও এই অবস্থা, এটা ভয় পাওয়াচ্ছে। কবি জয় গোস্বামী বলছেন, এ রাজ্য থেকে আল কায়েদার জঙ্গিদের ধরা পড়াটা আকস্মিক আঘাতের মতো। কিন্তু তার জেরে মাদ্রাসার শিক্ষকদের সন্দেহের আওতায় নিয়ে আসা হল, এটা ঠিক নয়। সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, ঘটনাটা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। কলকাতাবাসী হিসেবে আমার লজ্জা করছে। এটা নিয়ে চুপ করে বসে থাকলে হবে না।
পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ থেকে পুলিশে এ নিয়ে অভিযোগও দায়ের করা হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ ঘটনার তদন্তও শুরু করে দিয়েছে। সি এল ১৬৪ বাড়ির গেস্ট হাউস থেকে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে, ওই গেস্ট হাউসের রেজিস্টারের খাতা থেকে আশ্চর্যজনক ভাবে ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বরের তারিখের পাতাগুলি উধাও! পুলিশ বিষয়টির খোঁজ চালাচ্ছে। বিধাননগর কমিশনারেটের তরফে জানানো হয়েছে, 'পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে। দোষীদের শাস্তি হবে।'