সুতপা সেন ও সুদেষ্ণা পাল


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রতিদিনের মতো সেদিন সকালেও সবাই যে যার মত কাজে ব্যস্ত। কেউ অফিস যাচ্ছে। কেউ ব্যবসার কাজে। কেউ মর্নিং স্কুলের শেষে সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। এমনসময়ই 'কেঁপে উঠল' কলকাতা। ভেঙে পড়েছে নির্মীয়মাণ পোস্তা উড়ালপুল। মুহূর্তের মধ্যে স্তব্ধ হল কলকাতার জনজীবন। সংবাদমাধ্যমের দৌলতে এক নিমেষে ছড়িয়ে পড়ল সেই ভয়াবহ ছবি।


ক্যালেন্ডারের পাতায় সেদিন তারিখটা ছিল ৩১ মার্চ ২০১৬। আজও আবার একটা ৩১ মার্চ। ক্যালেন্ডার বলছে, আজ ৩১ মার্চ ২০১৯। উড়ালপুল ভেঙে পড়ার সেই ভয়াবহ ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে ৩টে বছর। কিন্তু আজও অনিশ্চিত পোস্তা উড়ালপুলের ভবিষ্যত। কী করা হবে ভগ্ন উড়ালপুলটিকে নিয়ে? ভেঙে ফেলা হবে? না রাখা হবে? এখনও বিশ বাঁও জলে ভগ্ন উড়ালপুল নিয়ে সমস্তরকম 'পরিকল্পনা'। টাটকা শুধু সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতি। উড়ালপুলের বাকি অংশের নীচ দিয়ে যাতায়াত করতে গেলে বুক কাঁপে। রাতের ঘুম তাড়া করে শুধু আতঙ্ক।


ঘড়িতে তখন ১২টা ৪০। হঠাত্ খবর এল ভেঙে পড়েছে নির্মীয়মাণ পোস্তা উড়ালপুলের একাংশ। রবীন্দ্র সরণি ও কে কে টেগোর রোড ক্রসিংয়ে উড়ালপুলের ১৫০ মিটার অংশ ভেঙে পড়ে। বিশালকার লোহার বিমের নীচে চাপা পড়ে অসংখ্য পথচারী, ট্যাক্সিচালক সহ বহু মানুষ। দুর্ঘটনার জেরে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন বহু মানুষ। টেনেহিঁচড়ে ওই ধ্বংস্তূপের নীচ থেকে বের করা হয় আটকে পড়া মানুষদের।



বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এই ছবি


উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে নির্মাণকারী সংস্থা আইভিআরসিএল-এর দিকে। খড়্গপুর আইআইটি-র দেওয়া রিপোর্টে সামনে আসে ভুল নকশা আর গুণগত মান যাচাইয়ের অভাবেই ভেঙে পড়ে পোস্তা উড়ালপুল। রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়, বিবেকানন্দ উড়ালপুলের নকশায় ত্রুটি ছিল এবং ওই ভুল নকশাই অনুমোদন করা হয়েছিল। উড়ালপুলের সব নির্মাণসামগ্রীর গুণগত মানও ঠিক ছিল না। কোয়ালিটি চেকিং ঠিকমতো হয়নি।


ওদিকে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে শুরু হয়ে যায় দোষারোপ- পাল্টা দোষারোপের পালা। পূর্বতন বাম সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে তৃণমূল সরকার। পাল্টা সিপিআইএম দাবি করে, উড়ালপুলে যে অংশটি ভেঙে পড়েছে, তা তৃণমূল সরকারের আমলেই তৈরি হওয়া। গোটা ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ তোলে তারা।


উল্লেখ্য, পোস্তা উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরই ভবিষ্যত নিয়ে সঠিক দিশা নির্ধারণে গঠন করা হয়েছিল একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। তত্কালীন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও খড়গপুর আইআইটি-র তিন অধ্যাপককে নিয়ে গঠিত কমিটি ওই উড়ালপুলের উপর দিয়ে যান চলাচলের বিপক্ষে মত দেয়। আবার উড়ালপুলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকাও বিপজ্জনক। তাই নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের বাকি অংশ ভেঙে ফেলাই উচিত বলে জানায় কমিটি।


আরও পড়ুন, তদন্ত শেষ, লোকসভা ভোটের মধ্যেই নারদাকাণ্ডের চার্জশিট, জানাল সিবিআই


সেই সময় ঠিক হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেলেই ভেঙে ফেলা হবে পোস্তা উড়ালপুল। কংক্রিটের কাঠামো ভাঙার বিশেষজ্ঞ সংস্থা দিয়েই ভাঙা হবে উড়ালপুল। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার তদারকি করবে পূর্ত দফতর। সরকারের তরফে টেন্ডার ডেকেই বরাত দেওয়া হবে কোনও বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে। পাশাপাশি, এত বড় উড়ালপুল ভাঙার সময় দূষণের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই উড়ালপুল ভাঙার সময় পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলি পলিথিন শিট দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে ব্রিজের দুপাশ ঘিরে দেওয়া হবে উঁচু টিনের শেড দিয়ে।


কিন্তু, ৩ বছর পরেও অথৈ জলে গোটা প্রক্রিয়াটাই। অর্থ দফতর সবুজ সংকেত দিয়েছিল, তারপরেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় টেন্ডার ডেকেও ওয়ার্ক অর্ডার দিল না রাজ্য সরকার। ভগ্ন উড়ালপুল ভাঙা হবে? না রাখা হবে? সেই সিদ্ধান্ত-ই এখনও নিতে পারছে না সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, উড়ালপুলের ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। একটি মাত্র সংস্থা তাতে অংশ নেয়। এসটিইউপি নামে দিল্লির একটি সংস্থা কাজের বরাত পায়। কিন্তু, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় শেষমেশ টেন্ডার খারিজ করে দিয়েছে সরকার।


আরও পড়ুন, 'মমতাদিদি আপনার সময় শেষ, সমূলে উপড়ে ফেলব এবার', হুঙ্কার অমিতের


এখন ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। ভোটে জিততে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সব দল। পোস্তা এলাকাটি কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। বিদায়ী সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কলকাতা উত্তর থেকে ফের প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ফের রাহুল সিনহাকেই প্রার্থী করেছে বিজেপি। সিপিআইএম প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে কণীনিকা ঘোষকে।  দলীয় সূত্রে খবর, কলকাতা উত্তর কেন্দ্রটির জন্য কংগ্রেস খুঁজছে সংখ্যালঘু মুখ। তবে, পোস্তা উড়ালপুল বিপর্যয় ও তার 'অন্ধকার' ভবিষ্যত নির্বাচনী প্রচারে বিরোধীদলগুলির কাছে যে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।