নির্ণয় ভট্টাচার্য্য


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বাজল তোমার আলোর বেণু... গানটা কানে যেতেই দোকানে তালা দিতে দিতে পিছন ঘুরে বৈরাগীর চায়ের দোকানের দিকে চাইলেন অশীতিপর বলাইবাবু। অস্ফুটে বললেন, “যাক বাবা, শেষ বেলায় মহালয়ার আগে অন্তত বৈরাগীটাকে ডেলিভারি দেওয়া গেছে। সত্যি শেষ তিনটে দিন যা গেল।“ এ ক’দিন রাত জেগে কাজ করতে করতে নাকের কোঁচকানো চামড়ার উপর বারবার ঢিলে হয়ে নেমে এসেছে মোটা কালো ফ্রেমের চশমাটা। চকিতে আঙুল দিয়ে ঠেলে সেই চশমাকে কোটরে ঢুকে যাওয়া চোখের মুখে বসিয়ে চার চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অশীতিপর আবারও তাকিয়েছেন সার্কিট বোর্ডের দিকে। অসুখটা বুঝে নেওয়াটাই যা ব্যাপার, তারপর চিকিত্সা করে সারিয়ে তোলাটা তো গতে বাঁধা। “হাল আমলের রেডিওতে আছেটা কী! হত সেই আমলের ম্যাজিক আইয়ের সার্কিট, তাহলে বুঝতাম”, স্বগতোক্তি বৃদ্ধ কারিগরের।


আরও পড়ুন- উত্তম কুমারের মহালয়ার পর শুধু ইট ছোড়া বাকি ছিল



অনুরোধের আসর, শিশুমহল, সংবাদ, গল্পদাদুর আসর, গীতমালা, আর বত্সরান্তে মহিষাসুরমর্দ্দিনী তো আছেই, বাঙালির  বিনোদনে, প্রয়োজনে তখন রেডিওর নিবেদনই  একমেবদ্বিতীয়ম। বছর ভর ওই চার চৌকো ম্যাজিক বক্স গান-খবর-নাটকে মাতিয়ে রেখেছে শ্রোতাকে। কিন্তু যন্ত্র থাকবে আর যন্ত্রণা থাকবে না তা তো হয় না। স্বাভাবিক নিয়মেই নানান কারণে বারেবারে বিকলও হয়েছে তাকে তুলে রাখা সাধের রেডিও। আর তখনই গেরস্থ বাঙালি শরণ নিয়েছেন বলাই বাবুদের। শুধু বাংলা কেন সারা দেশ জুড়েই তখন হাঁপ ছাড়ার ফুরসুত নেই অজস্র বলাইবাবুর। অনেকটা আজকাল শহর-মফঃস্বল-গঞ্জ-গ্রাম নির্বিশেষে যেমন ব্যস্ত থাকে মোবাইল ফোন সারাইয়ের দোকানগুলো, তখন ঠিক একই ছবি দেখা যেত রেডিও রিপিয়ারিং-এর দোকানে।


আরও পড়ুন- রেডিও ধার্মিক মীরের কাছে মহীষাসুরমর্দিনী আজও গাইডবুক


কিন্তু, চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়- এই ধ্রুব বাক্য মিথ্যে হল না রেডিওর ক্ষেত্রেও। বেসরকারি টিভি চ্যানেল, টেপ রেকর্ডার সহ বিবিধ আধুনিকতার ছোঁয়ায় সময় যেন আকাশবাণী শোনাল, “রেডিও তোমার দিন গিয়েছে”। আর তারপর তো নিত্য নতুন কত রকমের বিনোদন মাধ্যমের আনাগোনা। আর এসবের মধ্যেই যত্নের তাক থেকে ধীরে ধীরে সিঁড়ির ঘরের অবহেলায় আস্তানা খুঁজে নিতে হল রেডিও সেটকে। এখন তো সামান্য মোবাইল ফোনেই রয়েছে এফ এম রেডিও। কিন্তু তবু ভাগ্যিস মহালয়ার মোহজালে বা বাঙালিয়ানা টিকিয়ে রাখার তাগিদে ওই একটা দিনে আজও রেডিও সেট বঙ্গ জীবনের অঙ্গ। তাই বোধ হয় এক প্রজন্মের এই বিশ্বকর্মারা আজও জীবাশ্মের মতো যুগের ইতিহাস বয়ে নিয়ে বেড়ানোর সুযোগটুকু পাচ্ছেন। না হয় নিছক আনুষ্ঠানিকতা, কিন্তু তাই বা কম কি...


(তথ্য সংগ্রহ ও ছবি- প্রীতম দে)