আমফান-করোনার যৌথ দাপটে বিপন্ন হয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে শহরের প্রায় সবক'টি পুজো কমিটি। কিন্তু তাদের ফোকাস মূলত সুন্দরবন বা বসিরহাট। কেউ কলকাতার কথা তেমন করে ভাবছেন না। অথচ, কলকাতার বুকেও তো এরকম মানুষের সংখ্যা কিছু কম নয়। কলকাতার মানুষকে নিয়ে পুজোর ভাবনা ভেবে ব্যতিক্রমী পুজো হয়ে উঠল বাগুইআটির রেলপুকুর ইউনাইটেড ক্লাব। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

পুজোর বয়স ৬৭ বছর। পুজোর কর্মকর্তা উৎপল চন্দ্র জানান, শুধু অন্য জায়গায় দুঃস্থ মানুষ আছেন আর কলকাতায় নেই, তা তো নয়। কলকাতার অনেক মানুষও বুকে পাথর রেখে লকডাউন বা আমফান যুঝেছেন। পুজোর আয়োজন করতে গিয়ে আমরা তাঁদের কথা মাথায় রাখছি। 


এই বিধ্বস্তদের জন্য কিছু করলে কেমন হয়? মূলত এই ভাবনা থেকে এ পুজোয় জন্ম নিল থিম-- 'সাধারণের মধ্যে অসাধারণ'। এলাকাবাসীদের কেউ জনমজুর, কেউ রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। এঁরা দীর্ঘদিন কাজ পাননি। দীর্ঘদিন আধপেটা খেয়ে আছেন। তাঁরাই এই পুজোয় থিম-মেকার। তাঁরা সাধারণ, কিন্তু তাঁরাই আবার অসাধারণ। ততোধিক অসাধারণ তাঁদের হাতের কাজ। কেউ ভাবতেই পারেননি যাঁরা পেশাদার শিল্পী নন, তাঁদেরও হাতের দরমা, বেত আর বাঁশের কাজ এত ভালো, এতো সূক্ষ এত নিখুঁত হতে পারে!



এরকমই এক সাধারণ অসাধারণ এই পুজোর প্রতিমা শিল্পী সন্তোষ পাল। এক সময়ে নিয়মিত কুমোরটুলিতে কাজ করতেন। বছর চারেক আগে রাস্তা পারাপারের সময়ে একটি গাড়ি ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। সেই থেকে ডান পা ঠিকমতো ফেলতে পারেন না। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই প্রতিমার বরাতগুলি একে-একে হাত থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। অসহায় এই মৃৎশিল্পী আরও বিপন্ন হয়ে পড়েন আমফানে। বাগুইআটির একচালা ছোট্ট স্টুডিয়ো। সেখানে কিছু বাড়ির ছোট ঠাকুর বা অন্য মূর্তি বানিয়ে কোনও রকমে পেট চলছিল। সেই পথও বন্ধ হল আমফানে। উড়ে গেল তাঁর স্টুডিয়োর চালা। মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ে গেল। কী বলছেন তিনি? সন্তোষ জানান, একদিন সকালে বাজার করতে গিয়ে দেখি পকেট শূন্য। কেঁদে ফেললাম। সেই অবস্থায় আমাকে দেখে ক্লাবের সদস্যরা নিয়ে এসে বসালেন, শুনলেন আমার কথা। তখনই তাঁরা আমায় এই পুজোয় প্রতিমা গড়ার বরাত দিলেন।


এ ভাবেই পুজো এগিয়ে যায়। এ ভাবেই মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সামাজিক দূরত্বের মধ্যেও এ ভাবেই ঘুচে যায় দাতা ও গ্রহীতার মানসিক দূরত্ব। সামাজিক দূরত্ব তো মনকে দূরে ঠেলতে পারে না!


আরও পড়ুন: বেনজির! খাস কলকাতায় করোনা হাসপাতালে দুর্গাপুজোর আয়োজন, মণ্ডপ তৈরি, প্রতিমাও