নিজস্ব প্রতিবেদন:  বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। এবার তাঁর দ্বিশত জন্মবার্ষিকীতে তা যেন চরম আকার নিল। এবছরের বাড়তি আকর্ষণ, বিজেপির ঘটা করে বিদ্যাসাগরের পালন! অবশ্যই নিজেদের আয়োজনেও কোনও খামতি রাখেনি শাসকদল তৃণমূলও। তবে রাজনীতিটা আদৌ কী নিয়ে?  দুদলেরই রাজনৈতিক নেতৃত্বের কথায় উঠে এল তাঁর ব্যাখ্যা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

 



এ যেন বিজেপির ‘কলঙ্ক মোচন’এর দিন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেলকে দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা, রাজ্য সদর দফতরে বিদ্যাসাগরের জন্মদিন উপলক্ষে বিশাল আয়োজন, রাজ্যের প্রায় প্রত্যেকটি জেলাতেই বিদ্যাসাগরের জন্মদিন ধুমধাম করে পালন, বিদ্যাসাগরের জন্মভিটেয় নানাবিধ কর্মসূচি- বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালনের মধ্য দিয়ে বিজেপির এই সব উদ্যোগ যেন রাজ্যে বাড়তি মাইলেজ লোটার ফন্দি! বিদ্যাসাগরের এবছরের জন্মদিন পালনে প্রথমবার বিজেপির ‘অতিসক্রিয়তা’ দেখে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।


তবে কোনও মূল্যেই বিজেপিকে এক চিলতে জমি ছেড়ে দিতে নারাজ শাসকদল। ইতিমধ্যেই বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের জন্মভিটেয় গিয়ে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্কুলে-কলেজে বিদ্যাসাগর সম্পর্কে পড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বীরসিংহ গ্রামকে ‘এডুকেশন হাব’ হিসেবে গড়ার কথাও এদিন ঘোষণা করেছেন মমতা। 


ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মবার্ষিকী উদযাপন বিজ্ঞাপনে 'পন্ডিত' বানানটাই ভুল!


আজ সকাল থেকে সাজো সাজো রব কলকাতার দুই প্রান্তে। এক নবান্নে, অপরটি বিজেপির রাজ্য সদর দফতরে! বিদ্যাসাগর জন্মদিন উপলক্ষ্যে এলাহি আয়োজন দুক্ষেত্রেই। তবে এদিন এই দুই চিত্রই যেন ভালোভাবে স্পষ্ট করে দিল বিদ্যাসাগর নিয়ে বঙ্গ রাজনীতির টানাপোড়েন।


লোকসভা নির্বাচনের আগে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে এখনও একে অপরকে দুষে চলেছে রাজ্যের শাসকদল ও প্রধান বিরোধী পক্ষ বিজেপি। এদিন সকালে রাজ্য বিজেপি দফতরে দাঁড়িয়ে প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস বিদ্যাসাগরকে নিয়ে  নোংরা রাজনীতি করছে। ১৪ মে-র ঘটনা পুরোটাই ষড়যন্ত্র ছিল। আমাদের সব অনুষ্ঠানে সব সময়ই গুরুত্ব পায়।”


জয়প্রকাশ মজুমদার মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে আরও এক ধাপ এগিয়ে বললেন, “১৪ মে-র ঘটনার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী কে?  তার আগে তো তিনি জানতেই না!”


এদিকে, নবান্নে বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মালা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মাল্যদানের পরই বিজেপি বিরোধিতায় সরব হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও।


কিন্তু এই যে প্রশ্ন উঠছে বিদ্যাসাগর নিয়ে রাজনীতি চলছে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে! বিষয়টি ঠিক কী?


তার কিছুটা হলেও আভাস পাওয়া গেল বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুর কথায়। তিনি বললেন, “আমরা বর্ণ পরিচয়ের ওপর বিশেষভাবে জোর দিতে চাইছে। আমরা মণ্ডলে মণ্ডলে বর্ণপরিচয়ের ওপর জোর দেব। তৃণমূল বাংলা ভাষার আরবিকরণ করতে চাইছে। সেটারই বিরোধিতা করছি আমরা। বাংলা ভাষাকে রক্ষা করতে হবে।” সেক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালন নিয়ে রাজনীতি আদতে সেই বাংলা ও বাঙালি আবেগকে নিয়েই হচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা।


কিন্তু বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পর কি কোনওভাবে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে চাইছে বিজেপি? সেই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য সায়ন্তন বসুর সপাটে জবাব, “কোনও ড্যামেজ কন্ট্রোল নয়, মূর্তি ভাঙার ঘটনায় আমাদের কারোর নামই চার্জশিটে নেই।” তবে কেবল বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালনেই থেমে থাকতে চাইছে না বিজেপি, এবার সব মনীষীদের মূর্তি পরিষ্কার অভিযানে নামছে তারা।