বাম-কংগ্রেসকে ধুলিসাত্ করে একুশে `বিরোধী` তৃণমূলকেই চাইছে BJP
লোকসভা ভোটে সিপিএম একটাও আসন পায়নি। কংগ্রেস ২টি আসন ধরে রেখেছে।
অঞ্জন রায়
একুশে বাংলা দখল হচ্ছেই। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একপ্রকার নিশ্চিত। দলের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টও নাকি তাই! কিন্তু কোনওভাবেই বাম-কংগ্রেসকে মাথা তুলতে দেওয়া যাবে না। বিরোধী আসনে তৃণমূল কংগ্রেসকেই চাইছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সে কারণে ভোটের সুর আগাগোড়া থাকবে, বিজেপি বনাম তৃণমূল। তৃতীয়পক্ষকে এই সমীকরণে আসতে দেওয়া যাবে না, এটাই গেরুয়া শিবিরের 'গেমপ্ল্যান'।
লোকসভা ভোটে সিপিএম একটাও আসন পায়নি। কংগ্রেস ২টি আসন ধরে রেখেছে। বামেদের ভোটের হার কার্যত তলানিতে ঠেকেছে। লোকসভা ভোটে সিপিএমের ভোটের হার ৬.২৮ শতাংশ। কংগ্রেসের ৫.৬১%। এক ধাক্কায় ২২.২৫ শতাংশ ভোট বাড়িয়েছে বিজেপি। সেখানে সিপিএমের ভোটের হার কমেছে ১৬.৭২ শতাংশ। পরিসংখ্যানই বলছে, লোকসভা ভোটে বাংলায় সুস্পষ্ট হয়েছে রাজনৈতিক মেরুকরণ। কিন্তু বিধানসভায় তেমনটা নাও হতে পারে। বিশেষ করে বাম-কংগ্রেস জোট হলে সিপিএমের ভোট বাড়তে পারে বলে মনে করছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। কেন এমন ধারণা তাদের?
২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের ভোটের হার ছিল ১৯.৭৫ শতাংশ। কংগ্রেসের ১২.২৫%। ১০.১৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। অথচ ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটেই বিজেপির ভোটের হার ছিল ১৭.০২ শতাংশ। লোকসভার (২৯.৭১%) তুলনায় বিধানসভায় ভোটের হার কমেছিল সিপিএমের। কিন্তু রাজ্যে বিজেপির ভোটের হার দলের উত্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।
বিজেপি নেতৃত্বের মতে, এনআরসি, সিএএ ও অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থার প্রভাব পড়তে বিধানসভা ভোটে। 'কামব্যাক' করতে পারে সিপিএম। সিপিএম ভোট পেলে বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ার সম্ভবনা থাকছে। তার উপরে রাজ্যে বামেদের উত্থানও তরাণ্বিত হবে। সেটাই চাইছে না বিজেপি নেতৃত্ব।
বিজেপির গেমপ্ল্যান
ভোট ভাগাভাগি ঠেকাতে লোকসভা ভোটের মতো রাজনৈতিক মেরুকরণ তীব্রতর করতে চাইছে বিজেপি। ভোটারদের বার্তা দেওয়া হবে,'হয় তৃণমূল, নইলে বিজেপি। তৃতীয় কোনও দল নয়।' তা নিশ্চিত করতে গেরুয়া শিবিরের ভরসা জোড়া হাতিয়ার। মমতা বিরুদ্ধে কাটমানি, দুর্নীতি নিয়ে সরব হবেন নেতারা। তলায় তলায় চলবে হিন্দুত্বের জোর প্রচার। তাতেই রাজ্যজুড়ে তৈরি হবে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মেরুকরণ। যার ডিভিডেন্ড মিলবে ইভিএমে।
বিরোধী আসনে তৃণমূল
বাম-কংগ্রেসের চেয়ে বিরোধী আসনে তৃণমূলকেই দেখতে চাইছে বিজেপি। তাদের মতে, এতে দলের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্রের খবর, মমতার জমানায় বাংলায় আরএসএসের শাখা বেড়েছে তিনগুণ। মেরুকরণের এমন আবহও আগে ছিল না। তার জেরে লোকসভা ভোটে ১৮টি আসন পেয়েছে এককালের বড়বাজারের দল বিজেপি। বামেরা বরাবরাই বিজেপির আদর্শগত বিরোধী। আদর্শগত ক্যাডারভিত্তিক বামেদের চেয়ে তৃণমূলের মতো আঞ্চলিক দলই বিরোধী হিসেবে শ্রেয়। সে কারণে তৃণমূলকেই প্রধান বিরোধী হিসেবে দেখতে চাইছে দিল্লির নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন- লোকসভার মতো পুরভোটেও বায়না জুড়ে CPM-কে কার্যত ব্ল্যাকমেলিং কংগ্রেসের