নিজস্ব প্রতিবেদন: বেলেঘাটায় শিশু খুনের একাধিক চাঞ্চল্যতক তথ্য ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। এমন নৃশংস কাজের নেপথ্যে ঠিক কী কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তবে রীতিমতো হাড়হিম করা ঘটনার পর্যাক্রমে হতবাক সকলেই। ঠিক কী হয়েছিল শনিবার...


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

রবিবারের ঘটনা
রবিবার দুপুরে শিশু অপহরণের খবরে চাঞ্চল্য ছড়ায় বেলেঘাটা সিআইটি রোডে। খবর পাওয়া যায়, আবাসনে ঢুকে, মাকে বেধড়ক মারধর করে দু-মাসের কন্যাসন্তানকে তুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ দায়ের করা হয় থানায়।


শিশুর মা সন্ধ্যার যুক্তি
সন্ধ্যা জানায়, ঘটনার সময়ে ছাদে ছিলেন আয়া, এমনকী নিরাপত্তারক্ষীও ছিলেন না আবাসনে। সেই সুযোগেই শিশুকে তুলে নিয়ে চলে যায় দুষ্কৃতী। প্রথমে চড় মারতেই অচৈতন্য় হয়ে যায় সন্ধ্যা সেই ফাঁকেই শিশুকে নিয়ে চলে যায় দুষ্কৃতীরা। অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয় তদন্ত। 


পুলিসি তদন্ত
মা-কে জেরা করতেই তৈরি হয় ধোঁয়াশা। একাধিক অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। মা-এর বয়ান অনুযায়ী স্কেচ করা হয়। অপহরণকারীর স্কেচ কল্পনাপ্রসূত ছিল বলেই সন্দেহ হয় পুলিসের।
আশপাশের ২০টি সিসিটিভি দেখেও সন্ধ্যাদেবীর বলা সময় অর্থাৎ সাড়ে বারোটা থেকে ১টা তাই পর্যন্ত কোনও সাদা ট্রাউসার পড়া যুবককে ওই আবাসনের আশপাশেও দেখা যায়নি। এতেই পুলিসের সন্দেহ দৃঢ় হয় যে সন্ধ্যাদেবী মিথ্যে বলছে। টানা জেরাতে শেষ পর্যন্ত খুনের কথা কবুল করে সন্ধ্যা জৈন। গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। 


জেরায় কবুল করে সন্ধ্যা
বহুদিন ধরেই খুনের পরিকল্পনা চলছিল সন্ধ্যার বয়ান অনুযায়ী, প্রথমে ড্রইংরুমের থেকে সেলোটেপ নিয়ে শিশুর গলায় অবং মুখে বেঁধে দেন সন্ধ্যা। শ্বাসরোধ হয়ে শিশুর মৃত্যু হলে আবাসনের পিছনে ড্রাই ম্যানহোল এ ফেলে আসেন দেহ। আয়া তখন ছাদে ছিলেন। শিশুকে ফেলে এসে ড্রইং রুমে ফ্রিজের সামনে ফের শুয়ে পড়েন। শ্বশুর ঢুকলেই অপহরণ এর গল্প ফাদেঁন তিনি। স্বামীকে দুপুর বারোটা নাগাদ  ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মন্দিরে যেতে বলে। পুলিসের কাছে নিজেই এই কথা জানিয়েছে সন্ধ্যার স্বামী। পাশাপাশি ম্যানহোলে সন্তানকে ফেলে এসে  দেওয়ালে নিজের মাথা ঠুকেছিল সন্ধ্যা। যাতে মারধরের ক্ষতচিহ্ন দেখানো যায়। একথা উঠে এসেছে সন্ধ্যার বয়ানে। 


কীভাবে খুনের ছক কষেছিল সন্ধ্যা
প্রায় দু সপ্তাহ ধরে ছক কষছিল সন্ধ্যা। ঘড়ি ধরে ১৫ মিনিটেই অপারেশন শেষ। দু-মাসের কন্যাসন্তানকে খুনের জন্য রবিবার দুপুরকেই বেছে নেয় মা। কেননা ওই সময় পুজো বা নানা কাজে অধিকাংশ আবাসিক বাইরে থাকেন। রবিবার দুপুর ১২টা নাগাদ আবাসনে ছিলেন মাত্র দুজন আবাসিক। টপ ফ্লোরে ছিলেন একজন ক্যান্সার রোগী। আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিস জানতে পেরেছে, এক সপ্তাহ ধরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে সন্ধ্যা জানার চেষ্টা করেছে ২৬ জানুয়ারি কার কী রুটিন।


সন্ধ্যা জানিয়েছেন, এই কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ার পর থেকেই একাধিক সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। সেই আক্রোশ থেকেই খুন বলে স্বীকার করেছে সে। যদিও এরপরেও পরিস্কার নয় খুনের নেপথ্য কারণ। পুলিস মনে করছে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরেও এই খুন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পোস্টন্যাটাল ডিপ্রেশনকেও উড়িয়ে দিতে পারছেন না মনোবিদরা। যদিও এই ধরনের মানসিক অবসাদের ক্ষেত্রে হটকারি সিদ্ধান্তই নিয়ে থাকেন সদ্য মা-রা। তবে সেদিক থেকে দেখলে এই খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল দীর্ঘসময় ধরেই। পাশাপাশি এই সন্তান প্রথম নয়। এর আগের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে সন্ধ্যা। সব মিলিয়ে খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, মানসিক অবসাদ নাকি কন্যাসন্তানে ক্ষোভ ঠিক কী কারণে এমন নৃশংস পরিণতি তা খুঁজছে তদন্তকারীরা।