লক্ষ্য ২০১৯, বঙ্গে কৃষ্ণ নামেই গেরুয়া আবেগে শান দেওয়ার কৌশল ভিএইচপি-র
সংগঠন বিস্তারে জন্মাষ্টমীতে `মেগা শো` ভিএইচপি-র।
নিজস্ব প্রতিবেদন: জন্মাষ্টমীতে রাজ্যজুড়ে আরও একবার গেরুয়া আবেগের ঝড় তুলতে চলেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। হাওড়ার শালকিয়ায় দু'দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে ভিএইচপি নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কৃষ্ণকে নিয়ে বাঙালির আবেগ ভর করে জন্মাষ্টমীকে সামাজিক উত্সবের রূপ দেওয়া হবে। রাজ্যজুড়ে ২০০০টি জায়গায় বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। প্রায় এক হাজারটি শোভাযাত্রা বেরোবে বিভিন্ন প্রান্তে। রাজনৈতিক মহলের মতে, উত্সবের আড়ালে আসলে ২০১৯ সালে আগে মোদীর পক্ষে হাওয়া তৈরিই লক্ষ্য ভিএইচপি-র।
১৯৬৪ সালে জন্মাষ্টমীতেই পথ চলা শুরু করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। প্রতিবছরই জন্মাষ্টমী ও সংগঠনের প্রতিষ্ঠাদিবস একসঙ্গে পালন করে তারা। তবে এবার তা আরও বড় আকারে করার পরিকল্পনা সংগঠনের। সাত দিন ধরে উত্সব উজ্জাপন করবে ভিএইচপি।
বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে জন্মাষ্টমীর উজ্জাপন করে ছোট-বড় সংগঠন। তাদের পাশেও দাঁড়াবে ভিএইচপি। লক্ষ্য, জন্মাষ্টমীর মাধ্যমে সংগঠনের বিস্তার। প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে যেতে চাইছে তারা। শুধু নগর সংকীর্তনই নয়, উত্তর ভারতের ধাঁচে কৃষ্ণ সাজো প্রতিযোগিতা, মহিলাদের ডান্ডিয়া নাচও থাকছে। বিভিন্ন জায়গায় শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন মহিলারাই। ব্যবস্থাপনায় থাকবেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মহিলা শাখা দুর্গাবাহিনীর সদস্যরা।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্ব ভারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা সাংগঠনিক সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, ''হিন্দু সমাজকে একজোট করাই আমাদের লক্ষ্য। যুবকরা বিশেষ করে নতুন ভোটাররা উত্সাহ দেখাচ্ছেন। হিন্দুত্ব নিয়ে তাঁদের মধ্যে নতুন আবেগের সঞ্চার হয়েছে। তাঁরাই বিভিন্ন জায়গায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে জন্মাষ্টমী পালন করবেন। রাজ্যের সব জায়গা থেকে সাড়া পাচ্ছি। রাম নবমীকে ছাপিয়ে যাবে জন্মাষ্টমী। সামাজিক উত্সবের চেহারা নেবে''।
রাম নবমী সাধারণত উত্তর ভারতের উত্সব। তবে গত দু'বছর বাংলায় রাম নামেই সংগঠনের বিস্তার করেছে ভিএইচপি ও তাদের যুব সংগঠন বজরং দল। সূত্রের খবর, রাম নবমীতে অস্ত্রের প্রদর্শনের জেরে বাঙালির একাংশের মধ্যে সংগঠন সম্পর্কে ভুল বার্তা গিয়েছে। আর তাই কৃষ্ণকে সামনে রেখে নিজেদের 'ইমেজ মেকওভার' করতে চাইছে তারা। গ্রামবাংলায় এখনও নগর সংকীর্তনের চল রয়েছে। কৃষ্ণ নামেই সমাজের সকলস্তরে পৌঁছতে চাইছে ভিএইচপি। সে কারণে জন্মাষ্টমীকে সামাজিক উত্সবের রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন অনেকে। ভিএইচপির মুখপাত্র সৌরিশ মুখোপাধ্যায় বলেন, ''জন্মাষ্টমী হিন্দুদের উত্সব। রাম নবমীর মতো বাংলার সকল হিন্দুরা জন্মাষ্টমী উজ্জাপন করবেন। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই''।
ভিএইচপি অস্বীকার করলেও বাংলার প্রত্যন্ত এলাকায় সংগঠন বিস্তারের চেষ্টার নেপথ্যে রাজনীতিই রয়েছে বলে মত অনেকের। বাংলায় কৃষ্ণ নামের একটা ঐতিহ্য আগে থেকে রয়েছে। চৈতন্যের মধ্যে দিয়ে ভক্তিরসের প্রবেশ ঘটেছিল বঙ্গভূমিতে। কৃষ্ণ নিয়ে বাঙালির আবেগ কাজে লাগিয়ে ২০১৯ সালের আগে রাজ্যে বিজেপির জমি তৈরি করতে চাইছে ভিএইচপি, মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। তাদের মতে, উত্তর ভারতেও একই কায়দায় ধর্মীয় উত্সবের মাধ্যমেই সংগঠনের বিস্তার করেছে তারা। তার সরাসরি ফায়দা লুটেছে বিজেপি।
আরও পড়ুন- ১৯ বছর পর শ্রাবণে সৌভাগ্যের যোগ, পড়বে ৫টি সোমবার