মৌমিতা চক্রবর্তী


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আগে রাম, পরে বাম। তৃণমূলের বিরুদ্ধে আরএসএসের এমন পরিপ্রেক্ষিতের জবাব ছিল না নেতৃত্বের কাছে। ভোটের পর পর্যালোচনায় মেনে নিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। একইসঙ্গে স্বীকার করে নিলেন, পরাজয়ের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না নেতৃত্ব। তৃণমূলকে রুখতে বামেরাই যে বিকল্প, সেই পরিপ্রেক্ষিত বাংলায় তুলে ধরতে পারেনি সিপিএম। তার জন্যই ভোটের ফলে এত বড় ধস। হারের ময়নাতদন্তে করে দিল্লিতে এমনটাই রিপোর্ট পাঠাল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
 
ভোট কমতে কমতে ৭ শতাংশ। এ রাজ্যে বামেদের এমন হাল হতে পারে আন্দাজই করতে পারেননি সিপিএমের মাথারা। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির স্বীকারোক্তি, ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা ছিল। চেষ্টা করেছি। এতটা খারাপ হবে ভাবতে পারিনি। তবে বাংলাতেই নয়, ত্রিপুরা এবং কেরলেও ভরাডুবি হয়েছে। 
 
কিন্তু মানুষের মন বুঝতে কেন এমন হাল হল সিপিএমের নেতাদের। সেই কাঁটাছেড়া করতেই রাজ্য কমিটির বৈঠক। দলের সব জেলার নেতারাই কার্যত মেনে নিয়েছেন, মানুষের কাছে নিজেদের স্লোগান পৌছে দিতে ডাহা ফেল করেছে সিপিএম। বিজেপি কতটা বিপজ্জনক তা বাংলার মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ তাঁরা। আর সেই সুযোগে তৃণমূল বিরোধিতার প্রধান মুখ হয়েছে বিজেপি। একইসঙ্গে বিজেপি যেভাবে বাম সমর্থকদের নিজেদের দিকে টেনেছে, তার মোকাবিলাতেও ব্যর্থ হয়েছে নেতৃত্ব। তলায় তলায় রাজ্যজুড়ে বিজেপি প্রচার করে গিয়েছে, আগে রাম পরে বাম। অর্থাত্ রাম না এলে বাম ফিরবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এখন পয়লা শত্রু। বিজেপির এমন ন্যারেটিভে ভরসা রেখেছেন বাম ভোটাররা। তাঁরাও মনে করেছেন, এখন বিজেপিই শক্তিশালী। সীতারাম ইয়েচুরির কথায়,''এবার রাম পরে বাম। এটা আরএসএসের প্রচার করেছিল। তৃণমূলও ভেবেছিল ওদের ফায়দা হবে''। 



৩ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডের সভায় ভিড় করে ছিলেন অগুণতি সমর্থক। কিন্তু ভোট পর্যন্ত সেই উত্সাহ  যে ধরে রাখা যায়নি মেনে নিয়েছে সিপিএম। পুলওয়ামা-বালাকোটের পর বিজেপির তোলা জাতীয়তাবাদের স্লোগানের পাল্টা স্লোগান দেওয়া যায়নি। 
চিটফান্ড, নারদ বা নোটবন্দির মতো  নিজেদের ইস্যুগুলিও সঠিক ভাবে জনতার দরবারে নেওয়া যায়নি।


সিপিএমের ব্যর্থতার  দায় কার? 


এই জনবিচ্ছিন্নতার দায় কার? কেন বিজেপির ভোট এত বাড়ল?  সিপিএমের অন্তর্তদন্তে  উঠেছে সে কথাও। রাজ্য কমিটি মেনে নিয়েছে, গত ৮ বছরে গ্রামেগঞ্জে বহু কর্মী আক্রান্ত, ঘরছাড়া। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে অনেককে। তবে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারেননি দলের নেতারা। বিজেপি সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। আর এই ব্যর্থতার দায় সম্পূর্ণ ভাবে মেনে নিয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রের মতো শীর্ষ নেতারা। সীতারাম বলেন, ''নিশ্চয়ই নেতৃত্বের দায়। এটা স্বীকার করছি তো''। 
 
কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছেন, নেতৃত্বের দায় স্বীকার করে কি আবারও একই মুখ থেকে যাবে? নাকি বদল ঘটবে? দলের অন্দরে তারুণ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। সিপিএম কি এবার বৃদ্ধতন্ত্রের বাঁধন ছেড়ে নবীন হবে, নাকি তারুণ্যের নামে আবারও সেই পুরনোরা? 


আরও পড়ুন- ক্ষমতা দখলের আগে হাফ প্যান্ট বনাম ফুল প্যান্টের লড়াই বঙ্গ বিজেপির অন্দরে