পিউ রায়


বলো দুর্গা মাই কি! আসছে বছর আবার হবে! কী অপার ভরসার একখান বাক্য, সমস্বরে ধ্বনিত হলে হাজার মন খারাপের মধ্যেও কী যে ভাললাগা কাজ করে, প্রথামাফিক দুগ্গা বিসর্জনের সময় উচ্চারিত হয় ঠিকই, ভিতরে ভিতরে আশার ঢেউ ওঠে নিঃশব্দে, প্রথম বর্ষার জল পেয়ে যেভাবে তরতাজা হয়ে ওঠে গাছগাছালি, তেমনই তরঙ্গায়িত হয় আমাদের অন্তরাত্মা, সেই তরঙ্গই নানা ঘটনা, নানা অছিলায় বাইরে আসে বছর ভর, শুধু কি দেবী দুর্গাই আসবেন আবার? যা কিছু ভাল তাকে ফিরে পাওয়ার আশা কি আমাদের কম! আবার এ বছর যা পাওয়া হল না, আসছে বছর তাই তো চাই, এখানেই ঘাপটি মেরে থাকে আশা ভঙ্গের যন্ত্রণা, আমরা মাটির মানুষ পার্থিব ইচ্ছাগুলোকেই প্রাধান্য দিই, কলির জীবনে প্রথম চাহিদা অর্থের, এ বছরের ইনক্রিমেন্ট মনঃপুত হয়নি, আসছে বছর দেখা যাক…আবার একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কের একঘেয়েমির মরচে তুলতে চেয়েও পারলাম কি! এ বছর কেটে গেল, আসছে বছর সব ঠিক করে নেব, এইসব ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার হিসেব, যোগ বিয়োগ করতে করতেই বছর পেরিয়ে যায়, অঙ্ক মেলে কি! সত্যি কি ভাল আছি আমরা! দুর্গা বিদায়ের সময়ে চোখের জলে যে বলেছিলুম- মা, ভাল রেখো, বছর ঘুরল, একা কি ভাল থাকা যায়! গত পুজোয় হঠাত্ কাজ হারানো সহকর্মীর এই আসছে বছরের খোঁজ কি রেখেছি! সাঁইথিয়ার বোন যে বিছানা নিয়েছে যৌণাঙ্গে ভাঙা বোতলের ক্ষত নিয়ে, মেয়ের আব্রু বাঁচাতে গিয়ে মালদায় আব্বাকে হারালাম আমরা, নদিয়ার সন্তানসম মেয়ে তো আসছে বছর আর আসবে না, সন্দেশখালির দিদা কী নিয়ে শেষ করল জীবন! সাংবাদিকতার সৌজন্যে এইসব নিয়ে দুকথা বলার সুযোগ হয়, মর্মস্পর্শী করে তা পরিবেশনও করেছি আম দরবারে, কিন্তু এর বেশি কী! রুটিন আওড়ে যাওয়া, গতবার তো বলেছিলাম সকলে সমস্বরে, ওরাও বলেছিল..আসছে বছর..এসে গেল তো! কী নিয়ে! ভাল কোনটা! শুধু বেঁচে আছি..এই সত্যটা! নাকি সবই ছেঁড়া ছেঁড়া টুকরো, যা সরিয়ে জীবনপ্রবাহ দারুণ চলছে, আসলে স্মৃ্তির ক্ষণস্থায়িত্বই একমাত্র পরিত্রাণ…ভাল থাকার, সেজন্যই মুছে যাবে না আশা, চিরপরিচিত শব্দবন্ধ উচ্চারিত হবে আবার…হারিয়েও সব পাওয়ার আশায় বুক বাঁধার নামই উত্সব, বাঙালির শ্রেষ্ঠ দুর্গোত্সব…যার শুরু আর শেষ আসছে বছরের স্বপ্নে বিভোর।