নিজস্ব প্রতিবেদন: গোটা দেশের সঙ্গে রাজ্যেও লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্য়া। সঙ্গে রয়েছে ওমিক্রনের সংক্রমণও।  এমন এক পরিস্থিতিতে আশঙ্কার কথা শোনালেন রাজ্যের বিশিষ্ট চিকিসকেরা। তাঁদের দাবি কোভিড সংক্রমণ একটা স্থিতাবস্থায় এসেছিল। তা আর নেই। সংক্রমণ বাড়ছে। ফলে সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মঙ্গলবার এসএসকেএম হাসপাতালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে চিকিত্সক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন


##  সবাই প্রশ্ন করছে তৃতীয় ঢেউ এসেছে কিনা, আসবে কিনা, কী অবস্থায় রয়েছে। এনিয়ে স্পষ্ট বলে দেওয়া যায়, আমার করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যে রয়েছি। এনিয়ে কোনও দ্বিধা নেই। আগের ওয়েভগুলোর সঙ্গে এর চরিত্রটা যদি তুলনা করি তাহলে বুঝতে পারব দক্ষিণ আফ্রিকাতে আক্রান্তের সংখ্য়া ৩৫০ থেকে ৩৫০০০ হতে মাত্র ১০ দিন লেগেছিল। অর্থাত্ দশদিনে সংক্রমণ বেড়েছে হাজার শতাংশ। ব্রিটেনে ২ লাখ থেকে ২.১৫ লাখ পৌঁছতে সময়ে লেগেছে ১০-১৪ দিন। ভারত বা পশ্চিমবঙ্গের কথা বিচার করলে যদি ২৭ তারিখ থেকে ধরা যায় তাহলে ১০-১২ দিনের মধ্যে বিশাল সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়ে যাবে।


## রাজ্যে ১০ কোটি জনসংখ্যা। সংক্রমণের এই গতি বজায় থাকলে এখানে দৈনিক সাড়ে তিন লক্ষ্য কেস হওয়া উচিত। হয়তো অত টেস্ট হবে না। তার সত্ত্বেও বিশাল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। যারা বয়স্ক মানুষ তাদের ভ্যাকসিনের ইমিউনিটি অনেকটাই কমে এসেছে। তাদের আবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।


## ডাক্তাররা যারা একেবারে প্রথম দিকে ভ্য়াকসিন নিয়েছিলেন তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এক একটা হাসপাতালের ৬০-৭০ জন আক্রান্ত হচ্ছেন। 


## ভ্যাকসিনের ইমিউনিটি যখন কমে আসছে তখন ফের একটা সংক্রমণের ঢেউ আসছে। প্রথম ওয়েভে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা ফের আক্রান্ত হচ্ছেন। ১২-১৩ মাস বাদে ভ্যাকসিনের ইমিউনিটি অনেকটাই চলে গিয়েছে। 


## এই মুহূর্তে করোনা ঠেকানের হাতিয়ার হল মাস্ক। মাস্ক ছাড়া যদি আমরা ভাবি আমার একবার কোভিড হয়েছিল, আর হবে না তাহলে তা কিন্তু ভুল ধারনা। সুতরাং আমরা আবার সেই প্রথম ঢেউয়ের কাছেই দাঁড়িয়ে রয়েছি। এখন মাস্কই আমাদের ভরসা।


## ব্রিটেনে ৭ দিনে দৈনিক মৃত্যু হার ১৫০ জন। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে দৈনিক মৃত্যু ১৫০ ছিল। এবার ওমিক্রনকে যদি দুর্বল বলে ধরেও নিই তাহলেও মৃত্যু সংখ্যা কমবে না। 


##  বাঁচার উপায় প্রধান হল মাস্ক। উপসর্গ খুব বেশি না হওয়ায় জোর দেওয়া হচ্ছে হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিত্সা। এক্ষেত্রে প্য়ারাসিটামল গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ। খাওয়ার পর আর জ্বর না এলে গার্গেল করা উচিত। এর বাইরে বেশি বেশি কিছু চিকিত্সা নেই।


##  যেসব নতুন ওষুধের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে অ্যান্টিবডি ককটেল মূলত ডেল্টা ভ্য়ারিয়েন্টের উপরেই কাজ করে।


ডা কুণাল সরকার


## আমরা যদি অসাবধান হই তাহলে এটা বাড়বে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ফলেই এই ঢেউ ৪ সপ্তাহের মধ্যে ঠেকানো গিয়েছিল।


## ভিড় বাড়ালে অতিমারীর চেহারা বাড়বে। অসতর্ক হলে সহজে এই ঢেউ চলে যাবে না। 


## শুধু কলকাতায় নয়, গতকালের খবর মহারাষ্ট্রের পজিটিভিটি রেট গতকাল ছিল ১৭ শতাংশ। হাসপাতালে যাচ্ছেন ৬ শতাংশ মানুষ। আমাদের এখানেও হাসপাতালে যাচ্ছেন ৬ শতাংশ রোগী। অর্থাত্ গোটা দেশেই এই ট্রেন্ড চলছে।


## সাবধান হোন। জমায়েত না করে মাস্ক ব্যবহার করুন।


## মনোক্রনাল নিয়ে একটা কনফিউশন তৈরি হচ্ছে। এর কার্যকারীতা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে।


ডা যোগীরাজ রায়


##  পুজোতেও আক্রান্তের সংখ্যা কিছু বাড়লেও একটা স্থিতিশীলতা ছিল। সম্ভবত তখন ডেল্টা ভ্য়ারিয়েন্টেরই প্রকোপ ছিল। এবার বর্ষশেষের সময় দেখলাম আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেল। তার মনে ভাইরাসের চরিত্র বদল হয়েছে। সারা বিশ্বেই ভাইরাসের বদল হয়েছে। ওমিক্রন এসেছে। তাই আমাদের মনে হতেই পারে এটা ওমিক্রন!জেনোম সিকোয়েন্সের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। ভাইরাসের চরিত্র বদল ও আমাদের উন্মাদনা মিলিয়ে এই বাড়বাড়ন্তটা হয়েছে।


##  আমাদের জনসংখ্য়ার .৫ শতাংশ অক্সিজেন নিলেও প্রবল চাপ হয়ে যাবে। যারা ভ্যাকসিন নেননি তার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বেশিরভাগ রোগীর হয়তো অক্সিজেন লাগতে পারে। এটা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরে প্রবল চাপের সৃষ্টি হবে।


##   গাইডলাইন রাস্তা দেখানোর জন্য। ভাইরাসের বর্তমান বদল হয়েছে তার জন্য যে অ্য়ান্টিবডি তৈরি হয়েছে তা কতটা কার্যকর তা প্রমাণ আসতে হবে। 


## ৭-৮ দিনের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি অনেক রোগী ভর্তি হচ্ছেন কিন্তু অনেকেরই অক্সিজেন লাগছে না। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হচ্ছে এমন পরিস্থিতি এখনও হয়নি।


##  করোনার ক্ষেত্রে অক্সিজেন লাগে ৭-১৪ দিনের মধ্য়ে। তাই এখনও ৫-৬ দিনের মধ্যে অক্সিজেনের কতটা প্রয়োজন কতটা তা বুঝতে পারব।  


ডা অভিজিত্ চৌধুরী


##  সরকার তার করোনা গাইডলাইন বদল করেছে। এর পর তাদের হাতে যত তাড়াতাড়ি নতুন তথ্য আসবে তখনই গাইডলাইন বদল করা হবে।


## তৃতীয় ঢেউ এসে গিয়েছে। আমরা এক প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি। 


## এই ঢেউয়ের চরিত্র কেমন হবে, জটিলতা কেমন হবে তা আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে স্পষ্ট হবে। তাই এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হয়নি। কিন্তু ভ্যাকসিনের গুণে এবং সম্ভবত যে নতুন প্রজাতি এসেছে তা সংক্রমণের ক্ষমতা অনেকটাই কম। তবে সবথেকে শঙ্কার বিষয় হল, এর সংক্রমণের ক্ষমতা এতটাই বেশি যে ঘরে ঘরে তা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে।  আক্রান্তের সংখ্যা খুব বেশি হলে বেশিকিছু মানুষ যে গুরুতর অসুস্থ হবেন তা স্পষ্ট।


## আতঙ্ক করা যাবে না। আবার করোনা কিছু না বলেও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। মানুষের ভিড় আতঙ্কের কারণ হতে পারে।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)