নিজস্ব প্রতিবেদন: দমদম স্টেশনে যাঁদের নিয়মিত ভিড় ঠেলে যাতায়াত করতে হয়, তাঁদের অনেকেই হয়তো এখনও ভেবে চলেছেন, ‘১০০ বছরের পুরনো বিজ্ঞাপন!’ তা খালি চোখে দেখে কী আর স্টেশনের দেওয়ালে সাঁটানো বিজ্ঞাপনের বয়স বোঝা সম্ভব। যদি বলি বিজ্ঞাপনটি একটি চায়ের আর স্টেশনের একটি চায়ের দোকানের পাশেই রয়েছে! তাহলে...


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

দমদম স্টেশন হয়ে যাঁদের নিত্য দিনের যাতায়াত, তাঁরা এখনও ২-৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে এগোলেই চোখে পড়বে প্রতিদিন চোখে পড়া ওই চায়ের দোকানটিকে আর দোকানের সামনে গেলেই চোখে পড়বে এই বিজ্ঞাপনটি। চা-কে এখানে ওষুধ হিসেবে বিজ্ঞাপিত করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, চা খেলে নাকি কমবে মানসিক অবসাদ, কলেরা বা ম্যালেরিয়ার মতো সমস্যা। ভাবা যায়!


চা বাঙালির আড্ডার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সুযোগ পেলেই চায়ে চুমুক দিতে ভোলে না বাঙালি। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানেও আড্ডাটা ভালই জমে। কিন্তু চায়ের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্কটা আগে এতটা ঘনিষ্ট ছিল না। তাই এই বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে।


চায়ের ব্যবসা ও রপ্তানির জন্য ১৮৯২ সালে অসম বেঙ্গল রেলওয়ে’র তরফ থেকে রেলপথ পাতার কাজ শুরু হয়। কুমিল্লা থেকে শুরু করে ওই রেলপথ এগিয়েছিল তিনসুকিয়া, গৌহাটির দিকে। বিহার আর অসম থেকে চা বাগানের শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। একটা সময়ের পর মালিকপক্ষের অত্যাচার সহ্যের সীমা ছাড়ায়। ফলে একজোটে প্রতিবাদে সামিল হয় কয়েকশো চা বাগানের শ্রমিক। শ্রমিকদের লাগাতার আন্দোলনে মাথায় হাত পড়ে চা বাগানের মালিকদের। ১৯২১ সালে, গোয়ালন্দ স্টিমার ঘাটে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলিও চালানো হয়। এর ফলে এই আন্দোলনের আগুনে যেন ঘি পড়ল! চায়ের ব্যবসা যখন প্রায় লাটে উঠতে চলেছে, তখন এই বিজ্ঞাপনটি দেওয়ার কথা মাথায় আসে চা বাগানের মালিকদের।


আরও পড়ুন: খুনের দায়ে হাতিকেও ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল এই শহরে!


চা খেলে প্লেগ, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়ার মতো অসুখ যে সারে না, তা আধুনিক বাঙালির ভাল করেই জানে। কিন্তু আড্ডায় চায়ের কাপে চুমুক না দিলে কি চলে! তাই ১০০ বছর পেরিয়েও হয়তো দমদম স্টেশনের চায়ের দোকানে সঙ্গেই রয়ে গিয়েছে সেই বিজ্ঞাপনটি। আজ পর্যন্ত কোনও দিন সেটি চোখে পড়েছে কি? না দেখে থাকলে একদিন দেখেই আসুন চেনা প্ল্যাটফর্মের অদেখা সেই বিজ্ঞাপনটি। না হলে কোন দিন আধুনিকতার নতুন রঙের নিচেই হয়তো হারিয়ে যাবে শতাব্দি প্রাচীন এই বিজ্ঞাপনটি।