নিজস্ব প্রতিবেদন: নেদারল্যান্ডসেরই ড্রেন্টস মিউজিয়ামের একটি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মূর্তি ঘিরে রহস্য আজও অব্যহত। এই মূর্তিটি ঘিরে বিতর্কও কম নেই। এই মূর্তিটি ঘিরে দীর্ঘ প্রায় দু-আড়াই দশক ধরে বিতর্ক চলেছে চিন ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে। অভিযোগ, এক ত্তলন্দাজ (ডাচ) এন্টিকের সংগ্রাহক এই মূর্তিটি চিনের এক বৌদ্ধ মঠ থেকে চুরি করে নেদারল্যান্ডসে চলে আসেন। আর কয়েক হাত ঘুরে এটি জায়গা করে নেয় নেদারল্যান্ডসেরই ড্রেন্টস মিউজিয়ামে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বিতর্কের কারণ সম্পর্কে তো কিছুটা আন্দাজ পাওয়া গেল। এ বার জেনে নেওয়া যাক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর এই মূর্তিটি ঘিরে জড়িয়ে থাকা রহস্য সম্পর্কে। মূর্তিটি নিয়ে টানাপড়েন আর বিতর্কের মাঝে একটা তত্ব বা দাবি বেশ জোড়াল হয়েছিল সে সময়। এই মূর্তিটি নাকি আসলে একটি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর ‘মমি’। এই মূর্তির ধাতব মোড়কের ভিতরেই নাকি রয়েছে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর দেহ! এই তত্ব বা দাবি কতটা সত্য তা জানতে এটিকে স্ক্যান করা হয়। আর স্ক্যান করতেই চমকে ওঠেন চিকিত্সক এবং গবেষকরা। মূর্তিটির ভিতরে দেখা যায় এক ধ্যানস্থ ‘নরকঙ্কাল’। প্রমাণ হয়ে যায়, এই মূর্তিটি আসলে ধাতব মোড়কের ভিতরে থাকা একটি মমি।



কিন্তু মমিটি কার? জানা যায়, এটি এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মমি, যাঁর নাম লিউকুয়ান ঝাংগং। গবেষকরা দেখেন, সন্ন্যাসীর দেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশ্য কিছুই নেই। তার পরিবর্তে দেহের ভিতরে ভরা রয়েছে তিব্বতি ভাষায় লেখা কাপড়। কী ভাবে এই সন্ন্যাসীর দেহটি মমি করা হয়েছে, সে বিষয়ে আজও নিশ্চিত হতে পারেননি গবেষকরা। জেরেমিয়া কেন নামে এক লেখকের বই ‘লিভিং বুদ্ধা’-এ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী লিউকুয়ানের এই মমির উল্লেখ রয়েছে। গবেষকরা জানান, প্রায় ১,০০০ বছর আগে মৃত্যু হয় লিউকুয়ান ঝাংগং-এর।



জেরেমিয়া কেন-এর লেখা ‘লিভিং বুদ্ধা’ নামের ওই বইতে প্রাচীনকালে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মমি করার পদ্ধতির উপর আলোকপাত করা হয়েছে। ওই বইয়ের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, নিজের শরীরকে মমি করে রাখতে ইচ্ছুক সন্ন্যাসীরা খুব কঠিন ডায়েট অনুসরণ করতেন। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মমি করার পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত মন্থর ও দীর্ঘমেয়াদী। ইচ্ছুক সন্ন্যাসীরা তাঁদের খাদ্যতালিকায় চাল, গম, সোয়াবিন জাতিয় খাবারের পরিবর্তে বাদাম, গাছের ছাল খেতেন। এর ফলে ক্রমশ তাঁদের শরীরের চর্বি গলে বা শুকিয়ে যেত এবং শরীর তাঁর আর্দ্রতা হারিয়ে ক্রমশ শুষ্ক হয়ে উঠত। মৃত্যুর পর তাঁদের শরীরে যাতে ব্যাকটিরিয়া জন্মাতে না পারে, সে জন্য জীবিত অবস্থায় তাঁরা বিভিন্ন ভেষজ খেতেন। সেই সঙ্গে খেতেন বিশেষ এক ধরনের চা যা বিষাক্ত ভেষজ দিয়ে তৈরি করা হত। ‘লিভিং বুদ্ধা’ বইয়ে দাবি করা হয়, এই চা পান করার ফলে সন্ন্যাসীদের শরীর এতটাই বিষাক্ত হয়ে উঠত যে মৃত্যুর পরও তাঁদের শরীরে ব্যাকটিরিয়া, ম্যাগট বা ওই জাতিয় কোনও পোকা-মাকড় জন্মাতে পারত না। ফলে শরীরের পচন ঠেকানো সম্ভব হতো।



আরও পড়ুন: ২৬০০ বছর আগে ইউরোপীয় মহিলার মমি মিশরে! রহস্য ভেদ করলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা!


ইচ্ছুক সন্ন্যাসীদের মমি করার প্রক্রিয়া চলাকালীন তাঁরা মাটির নিচে একটি সুরঙ্গের মতো কক্ষে থাকতেন। ওই কক্ষের ভিতরেই ধ্যান করতেন। ‘লিভিং বুদ্ধা’ বইয়ের বিবরণ অনুযায়ী, এই সময় বাঁশের তৈরি একটি পাইপের মধ্যে দিয়ে শ্বাস নিতেন ওই সন্ন্যাসীরা। এই সময় তাঁদের সঙ্গে ওই কক্ষে থাকত শুধুমাত্র একটি ঘণ্টা। এই ঘণ্টা বাজিয়েই ওই সন্ন্যাসীরা নিজেদের বেঁচে থাকার ইঙ্গিত দিতেন। যে দিন ওই কক্ষের ভিতর থেকে কোনও রকম ঘণ্টার শব্দ শোনা যেত না, সে দিনই ওই সন্ন্যাসীর মৃত্যু হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হতো। এর তিন বছর পর অন্য সন্ন্যাসীরা তাঁকে ওই কক্ষ থেকে বের করে এনে মন্দিরে নিয়ে গিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতেন। তখন যদি দেখা যেত যে ওই সন্ন্যাসীর শরীর মমি করার উপযুক্ত অবস্থায় নেই, সেক্ষেত্রে তাঁকে সমাধিস্থ করা হতো। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা মনে করতেন, মমি করা সন্ন্যাসীরা মৃত নন। তাঁরা অমরত্ব লাভ করেছেন যুগ যুগ ধরে ধ্যানে মগ্ন।