নিজস্ব প্রতিবেদন: কলকাতায় বিরিয়ানির প্রথম পাত পড়েছিল লখনউর নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ-র হাত ধরে। লখনউয়ের রাজত্ব হারিয়ে সেখানেই কোনও জমকালো প্রাসাদে নিশ্চিন্তে থাকতে পারতেন ওয়াজিদ আলি। কিন্তু সেখানে না থেকে তিনি চলে আসেন কলকাতায়। ইতিহাস বলছে, ১৮৫৬ সালের ৬ মে কলকাতায় পৌঁছান নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ। এর পর কলকাতাতেই জীবনের শেষ ৩০ বছর কাটিয়ে দেন তিনি। এই ওয়াজিদ আলির জন্যই কলকাতা বিরিয়ানির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। তাঁর রসনা তৃপ্তির জন্যই এ শহরে ‘দমপোখ্‌ত’ বা ঢিমে আঁচে রান্না শুরু হয়। অনেকে বলেন, বিরিয়ানিতে আলুর প্রচলন নাকি ওয়াজিদ আলি শাহই করেছিলেন। তবে এ বিষয়ে বিতর্কও রয়েছে। তবে বিতর্কের ধার ধারে না কলকাতার ভোজন রসিক মানুষজন। বিরিয়ানির স্বাদ-গন্ধকে অনেক আগেই এ শহরের মানুষ আপন করে নিয়েছেন। বিরিয়ানির ইতিহাস নিয়ে এখন আর তাঁরা মাথা ঘামাতে চান না।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ইদানীং, বিরিয়ানির প্রতি বাঙালিদের টান যেন বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। শহরের রাস্তাঘাটের আনাচে কানাচে, অলিতে গলিতে এখন বিরিয়ানির দোকান। দোকানের একশো মিটারের মধ্যে এসে পড়লেই নাকে বিরিয়ানির গন্ধ আর লাল কাপড়ে মোড়া বিরিয়ানির বিশাল হাঁড়ি চোখে পড়তে বাধ্য। আর পেটে সামান্য জায়গা খালি রয়েছে, অথচ অবলীলায় বিরিয়ানির দোকান পেরিয়ে চলে যাচ্ছেন... এমন কার সাধ্য! চিকেন বিরিয়ানি, মটন বিরিয়ানি, আন্ডা বিরিয়ানি, আলু বিরিয়ানি বা ভেজ বিরিয়ানি— যাই হোক না কেন, বিরিয়ানির পাত্রটি সব দোকানেই একটা লাল কাপড়ে মোড়া থাকে। কোনও দিন ভেবে দেখেছেন কী, সাদা, নীল, হলুদ বা অন্য কোনও রঙের কাপড়ে কেন মোড়া থাকেনা বিরিয়ানির হাঁড়ি? সব সময় কেন লাল রঙের কাপড়ই ব্যবহার করা হয়? আসুন এর উত্তরটা জেনে নেওয়া যাক...


ইতিহাসের ব্যাখ্যা থেকে জানা যায়, সম্রাট হুমায়ুনের খাদ্য পরিবেশনে দরবারি রীতি অনুযায়ী, রুপোলি পাত্রের খাবারগুলোর জন্য লাল কাপড় আর ধাতব ও চিনামাটির জন্য সাদা কাপড়ে ঢেকে নিয়ে আসা হতো। পরবর্তি কালে মুঘল দরবারেও এই রীতি অনুসরণ করা হয়। খাদ্য পরিবেশনের এই রীতি ও রঙের ব্যবহার লখনউয়ের নবাবরাও অনুসরণ করতেন। সেই থেকেই বিরিয়ানির পাত্র লাল কাপড়ে ঢাকার রীতি চলে আসছে। তবে এ ক্ষেত্রেও মতান্তর রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, ইতিহাস বা ঐতিহ্যের রীতি মেনে নয়, ব্যবসার খাতিরে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই বিরিয়ানির পাত্র লাল কাপড়ে মুড়ে রাখা হয়। এর ফলে দূর থেকেই তা ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।


তবে ইতিহাস বা ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা যা-ই হোক না কেন, লাল কাপড়ে মোড়া বিরিয়ানির পাত্রের সঙ্গে অসংখ্য ভোজন রসিক মানুষের একটা সম্পর্ক দীর্ঘ বেশ কয়েক দশকে তৈরি হয়েছে। লাল কাপড়ে মোড়া পাত্র দেখলেই যাঁদের খিদে বেড়ে যায়, মনে পড়ে যায় শুধু বিরিয়ানির কথা।