Durga Puja 2022: উত্তরাধিকার || গল্প ||
দ্বৈপায়ন মজুমদার
দ্বৈপায়ন মজুমদার
নিজের স্কুলে অনেক বছর পর ফিরতে পারলে ভালই লাগে। তাও যদি হয় বিশেষ কোনও অনুষ্ঠান। সহদেব সামন্ত সাহিত্যের আকাশে এক উজ্জ্বল তারা। বই পাড়ার বড় বড় প্রকাশনী থেকে সহদেবের লেখা ছাপা হয়। অসংখ্য পুরস্কার সহদেবের ঝুলিতে। তবে একদিনে এসব হয়নি। স্কুলের ম্যাগাজিন থেকেই লেখার সূত্রপাত। কলেজে পড়তেই নামী পত্রিকায় ছোটগল্প প্রকাশিত হয়। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
সেই সহদেবের বড় হয়ে ওঠা স্কুলের শতবর্ষ। শতবর্ষের অনুষ্ঠানে নামী প্রাক্তনীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আয়োজকরা। এমনিতে সহদেব অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। জয়পুরে এক সাহিত্য সভার আমন্ত্রণও ছিল। শতবর্ষ আয়োজক কমিটির সম্পাদক বিমল দে সহদেবের সহপাঠী। বিমলের আমন্ত্রণ ফেরানো সম্ভব হয়নি সহদেবের।
অনুষ্ঠানে সহদেবের হাত দিয়েই উদ্বোধন হল শতবর্ষের বিশেষ পত্রিকা। স্টেজে বসে একটু উল্টে পাল্টে দেখছিলেন। বেশ যত্নের ছাপ পত্রিকায়। নিজের বক্তব্যে স্কুলের ম্যাগাজিনের প্রশংসাও করল। বক্তব্য শেষে নিজের চেয়ারে ফিরতে বিমল ইঙ্গিত করল স্টেজের পাশে রোগা লম্বা একটা ছেলের দিকে। ছেলেটির নাম শিশির। ক্লাস ইলেভেনে পড়ে। সেই নাকি ম্যাগাজিনের পিছনে সব থেকে বেশি সময় দিয়েছে। পত্রিকা খুলে শিশিরের লেখা বের করে দেয় বিমল। স্টেজে অনুষ্ঠান চলছে তখনও। তার মধ্যেই দ্রুত শিশিরের লেখা পড়ে ফেলেছেন সহদেব। একটা বিস্ময় কাজ করছে। এই বয়সে এমন কলমের ধার সচরাচর দেখা যায় না। বিমল বলে, "শিশিরের তোর সঙ্গে আলাপ করার খুব ইচ্ছে। তোর লেখার ভক্ত"। নিজের স্কুলের এমন প্রতিভার সঙ্গে আলাপ করতে ভালই লাগবে সহদেবের।
স্টেজ থেকে নামতেই শিশিরকে ডেকে নিল বিমল। সহদেবের মত বিশাল মাপের মানুষের সামনে কী বলবে বুঝে পায় না ছেলেটা। প্রাথমিক জড়তা কাটাতে সাহায্য করলেন সহদেব। শিশিরের লেখার তারিফ তো করলেনই, এটাও বললেন লেখা যেন না ছাড়ে। উৎসাহ দিতে বলে দিলেন এই বয়সে তিনিও এমন লিখতে পারতেন না। এটাও বললেন লেখার বিষয়ে কোন দরকার পড়লে বিমলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে।
এবার ফেরার পালা। নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে যান সহদেব। গাড়িতে বসে বিমলকে বিদায় জানাবেন, এমন সময় বিমল বলে," তোর স্বপনকে মনে পড়ে? আমাদের পরের ব্যাচের ছেলে। মাধ্যমিক পাশ করে স্কুল ছেড়ে দিয়েছিল। বাড়ির কাপড়ের দোকানেই বসতে শুরু করেছিল ওই বয়স থেকে। পারিবারিক ব্যবসা, পড়া লেখা বিশেষ কেউ করেনি ওদের ফ্যামিলিতে। শিশির হচ্ছে স্বপনের ছেলে। ওই বাড়ি থেকে এত ভাল লেখার হাত ভাবাই যায় না। স্বপনটা গত বছর দিন কয়েকের জ্বরে চলে গেল"।
পিচ রাস্তা দিয়ে গাড়ি ছুটছে। সহদেব ফিরে গেছেন অনেকগুলো বছর আগে। স্কুলের বিশাল নিম গাছের ছায়ায় বসে একটা রোগা ছেলে তার লাল খাতা বের করে দেখাচ্ছে সহদেবকে। সহদেব তখন স্কুলের ম্যাগাজিনে সেরা লেখার পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলার স্যার বলেন সহদেবের মত এই স্কুলে কেউ লিখতে পারে না। ছেলেটার খাতায় কিছু ছোট গল্প আর কবিতা। ছেলেটা এত ভাল লেখে অথচ স্কুলে কেউ জানে না। বেশ ইনসিকিউর অনুভব করে ক্লাস টেনের সহদেব। ছেলেটা জানতে চায় পরের বছর স্কুলের ম্যাগাজিনে এর থেকে একটা লেখা দেওয়া যায় কিনা। লেখার মধ্যে কিছু বানান ভুল চোখে পড়ে সহদেবের। তাচ্ছিল্যের সঙ্গে জানায় এই সব ভুল বানানের লেখা স্যাররা দেখলে ছুড়ে ফেলে দেবেন। ছেলেটা মুখ নিচু করে চলে যায়। ম্যাগাজিনে লেখা পাঠায়নি ছেলেটা। মাধ্যমিকের পর স্কুলেও আর দেখা যায়নি ছেলেটাকে।
শিশির কলমের ধার উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। সাহিত্য তার রক্তে মিশে। স্বপনের লেখার হাত পেয়েছে শিশির। আর কেউ না জানুক সহদেব সামন্তর এতে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না।
পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা