Durga Puja 2022: দেবী দুর্গা একাধিকবার মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন! মোট ক`বার জানেন?
শেষবার দেবীর হাতে বধ হওয়ার পর দেবীর আশীর্বাদে মহিষাসুর চিরতরে দেবীর পদতলেই ঠাঁই পেলেন। মহামায়ার সঙ্গেই তখন প্রচলিত হয়ে গেল মহিষাসুরের পুজোও।
সৌমিত্র সেন
দুর্গা-মহিষাসুরের যুদ্ধ নিয়ে নানা পুরাণে নানা ব্যাখ্যা, নানা কল্পকাহিনি। মোটামুটি একটি স্টোরিলাইন আছে। জনপ্রিয় সেই গল্পটাই সর্বত্র অনুসরণ করা হয়। তবে একটা বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্ন ও কৌতূহল রয়েছে। মহিষাসুরকে ঠিক ক'বার বধ করেছিলেন দুর্গা? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে চেনা কাহিনিটাই আর একবার দেখা যাক। এ কাহিনি আমরা সকলেই জানি। তবু আর একবার পড়ে নিলে মন্দ হবে না।
পুরাকালে মহিষাসুর নামে এক অসুর ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল অধিকার করলেন। মুনি-ঋষিরাও রেহাই পেলেন না তাঁর অত্যাচার থেকে। দেবতারা এ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের শরণাপন্ন হলেন। তিন দিকপাল দেবতা যখন মহিষাসুরের হোয়ারঅ্যাবাউটস নিয়ে আলোচনা করতে বসলেন। আর তখনই জানা গেল, ব্রহ্মার বরেই বলীয়ান এই মহিষাসুর। ব্রহ্মার বরের কারণেই এঁকে ত্রিলোকের কোনও পুরুষই পরাভূত করতে পারবেন না। সে অপরাজেয়। এদিকে দেবতাদের মুখে মহিষাসুরের অত্যাচারের কাহিনি শুনে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর তিনজনেই ভয়ংকর ক্রোধান্বিত হলেন। ব্রহ্মা হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পারলেন, উপলব্ধি করলেন ভক্তরূপী মহিষাসুরকে বর দিয়ে কী অঘটনটাই-না তিনি ঘটিয়েছেন!
পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা
সে যাই হোক, এই তিন জনের মুখমণ্ডল ক্রোধে ক্রমশ ভীষণাকার ধারণ করল। তাঁদের সেই ক্রোধাগ্নি এবং অন্যান্য দেবতাদের তেজ সম্মিলিত হয়ে তৈরি হয়ে উঠলেন এক নারী। ত্রিভুবনের দুর্গতি নাশের জন্য তাঁর আবির্ভাব, তিনি দুর্গা। সমস্ত দেবতারা এই সময়ে তাঁদের অস্ত্র দিলেন নবোদ্ভাবিত সেই দেবীকে। ব্রহ্মা দিলেন কমণ্ডলু, ইন্দ্র দিলেন বজ্র, কুবের গদা, বিষ্ণু চক্র, মহেশ্বর ত্রিশূল। হিমালয় দিলেন সিংহ। এই ভাবে দেবী হলেন দশভুজা, হলেন সিংহবাহিনীও। তারপর তো যুদ্ধ শুরু হল। রণহুঙ্কারে কেঁপে উঠল দশদিক। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রথমেই মহিষাসুর আসেননি। তাঁর সৈন্যসামন্ত, তাঁর সেনাপতি বীর যোদ্ধারা দুর্গার সঙ্গে লড়তে আসেন। মহাসংগ্রামে দুর্গার কাছে একে একে পরাজিত হল মহিষাসুরের সৈন্যসামন্ত, তাঁর সেনাপতি, যোদ্ধারা।
এরপর শুরু হল মহিষাসুর-দুর্গা যুদ্ধ। প্রবল সেই যুদ্ধে কম্পিত হল ত্রিভুবন। মহিষাসুর নানা রূপ ধারণ করে, নানা কৌশলে দেবীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহিষাসুর নিহত হল দেবীর হাতে। দেবীর ত্রিশূল বিদ্ধ করল মহিষাসুর-বক্ষ।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: দুর্গাপুজোর সব চেয়ে মাহাত্ম্যপূর্ণ মুহূর্ত কোনটিকে মনে করা হয় জানেন?
কোনও কোনও পুরাণমতে, দেবী মোট তিনবার মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। আদি সৃষ্টি কল্পে অষ্টাদশভুজা উগ্রচণ্ডী রূপে, দ্বিতীয় সৃষ্টি কল্পে ষোড়শভুজা ভদ্রকালী রূপে, তৃতীয় সৃষ্টি কল্পে দশভুজা দুর্গা রূপে। তৃতীয়বার দেবীর হাতে বধ হওয়ার পরে মহিষাসুর দেবীর চরণে জায়গা পেলেন। দুর্গার সঙ্গেই প্রচলিত হল মহিষাসুরের পুজোও।
এরও পিছনে অবশ্য একটা কাহিনি রয়েছে। স্বপ্নে ভদ্রকালী মূর্তি দেখেছিলেন মহিষাসুর। তা দেখে তিনি নাকি শুরু করেন দেবীর আরাধনা। তাঁর আরাধনায় প্রীত ও প্রসন্ন দেবী দেখা দিলেন ভক্ত অসুরকে। মহিষাসুর দেবীকে জানালেন, আপনার হাতে আমার মৃত্যুর জন্য কোনও দুঃখ বা ক্ষোভ নেই। তবে আমার একটি মনোবাঞ্ছা আছে। আমি আপনার সঙ্গেই পূজিত হতে চাই। দেবী ভদ্রকালী তখন আশীর্বাদ করে বললেন, তথাস্তু! তুমি উগ্রচণ্ডা, ভদ্রকালী, দুর্গা-- এই তিন মূর্তিতে আমার পদলগ্ন হয়ে পূজা পাবে।' ব্যস! সেই থেকে চালু হয়ে গেল দুর্গার সঙ্গে মহিষাসুরেরও পুজো।