ওয়েব ডেস্ক: ককপিটে বসে আত্মহত্যার চিন্তা করেন অধিকাংশ বিমানচালক। যাঁদের হাতে যাত্রীদের প্রাণ, তাঁদের মনেই ধ্বংসের চিন্তা। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগান্তকারী গবেষণায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

রানওয়ে ধরে দে দৌড়। একটু একটু করে বাড়ছে গতি। তারপর হুশশশশ করে মাটি ছাড়িয়ে শূন্যে। আকাশে তীব্র গতিতে উড়ে যাওয়া। এক শহর থেকে আরেক শহর। এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্য। এক দেশ থেকে আরেক দেশ। নিমেষে। জেটগতিই বটে। ককপিটে বসে পাইলট। সঙ্গী সহকারী পাইলট। দুটি মানুষের হাতে কয়েকশো প্রাণ। একটু ভুলচুক হলেই ব্যস। সব শেষ। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বা পাইলটের ভুল হলে তবেই।


নাহ্, শুধু এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বা পাইলটের ভুল নয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগান্তকারী গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার বাণিজ্যিক উড়ান চালান এমন পাইলটরা, যাঁদের মনে কোনও না কোনও সময় আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে। এক পক্ষকালের মধ্যে কোনও না কোনও সময় ৪.১ শতাংশ পাইলট নিজেদের শেষ করে দেওয়ার কথা ভেবেছেন। ১২.৬ শতাংশ পাইলট ভোগেন ডিপ্রেশনে।


তীব্র ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকা পাইলটরা উড়ানের ককপিটে বসারই যোগ্য নন। কিন্তু গবেষকরা জানাচ্ছেন, অনেক পাইলটই চাকরি হারানোর ভয়ে তাঁদের এই মানসিক অবস্থার কথা বেমালুম চেপে যান। তাঁদের চালচলন দেখে এবং শারীরিক কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায়, তাঁরা ডিপ্রেশনে ভুগছেন। কিন্তু তাঁরা ডাক্তারের কাছে যেতে চান না।


আরও পড়ুন- ক্যাশলেস বিয়ে, উপহারের বদলে কার্ড সোয়াইপ করে ক্যাশ ট্রান্সফার


২০১৫-র মার্চে জার্মানউইঙ্গসের ফ্লাইট 4U 9525-এর মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা মনে পড়ে? ১৫০ জন যাত্রী নিয়ে বার্সিলোনা বিমানবন্দর থেকে ডুসেলডর্ফের উদ্দেশে উড়ে যাচ্ছিল বিমানটি। সমুদ্রের ওপর দিয়ে যখন উড়ে যাচ্ছিল, তখন প্রায় ৩৮ হাজার ফুট উঁচুতে ছিল বিমানটি। সাড়ে ৯টা নাগাদ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে শেষ যোগাযোগ হয় বিমানটির। তারপর সেই ভয়াবহ ঘটনা। আল্পসে ভেঙে পড়ে বিমানটি। সব শেষ। মৃত্যু হয় ১৫০জন যাত্রীরই। ফরাসি তদন্তকারীদের রিপোর্টে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ককপিটের ভয়েস রেকর্ডার এবং প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়, ২৮ বছরের সহকারী পাইলট আন্দ্রে লুবিত্‍জ এয়ারবাস ৩২০-র দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এটাও প্রমাণিত হয়, লুবিত্‍জ মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। আত্মহত্যাপ্রবণ মানসিকতার চিকিত্সা চলে লুবিতজের। চিকিত্সক জানিয়ে দেন, আর  কাজ করতে পারবেন না তিনি। এই ঘটনার পরেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় একটি সমীক্ষা চালায়।


প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পাইলটের সঙ্গে কথা বলেন গবেষকরা। তার মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার পাইলট মনের কথা খুলে বলেন। কিন্তু ১ হাজার পাইলট উত্তর দিতে অস্বীকার করেন। বহু পুরুষ পাইলট স্বীকার করেন, দিন দিন তাঁরা তাঁদের কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ব্যর্থতা গ্রাস করছে। বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ঢের ভাল। তবে মহিলা পাইলটরা পুরুষদের তুলনায় বেশি ডিপ্রেশনে ভোগেন বলে গবেষকদের দাবি।  


আরও পড়ুন- জন-ধন অ্যাকাউন্টে ১০০ কোটি! প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন এই মহিলা


সমাধানের রাস্তাও বাতলে দিয়েছেন গবেষকরা। মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে থাকা পাইলটদের এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেছেন তাঁরা। তবে বিমান কর্তৃপক্ষকে তাঁদের চাকরির নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতেও বলেছেন গবেষকরা। কাজের পরিবেশেরও বদল আনার দাওয়াই বাতলেছেন তাঁরা।