অনুষ্টুপ রায় বর্মণ: একবিংশ শতাব্দীতে মোবাইল ফোন প্রতিটি শিশুর হাতে খুবই সহজলভ্য একটি জিনিস। বিশেষ করে করোনা লকডাউনের পরে তা আরও বেশি মাত্রায় শিশুদের হাতে পৌঁছে গেছে এবং পড়াশুনার প্রয়োজনে বাবা-মারাও বাধ্য হচ্ছেন বাচ্চাদের হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দিতে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ওয়ারকিং প্যারেন্টসের যুগে স্মার্ট ফোনে শিশুরা পড়াশুনা বাদে আর কী করছে সেই বিষয় ধ্যান দেওয়ার সময় অভিভাবকদের কাছেও খুব বেশি নেই। অন্যদিকে সারাদিনের কাজের শেষে অভিভাবকরা নিজেরাও ডুবে যাচ্ছেন স্মার্টফোন এবং ওয়েব সিরিজের দুনিয়ায়।


বাড়িতে বাচ্চারা বিভিন্ন সময় অ্যাকসেপ্টেড ফিল করার জন্য এই খেলার নেশায় মেতে যায় বলে মনে করছেন মনোবিদরা। তাদের মতে ভিডিও গেমের জগতে তাদেরকে একঘরে করে দেওয়ার কেউ নেই, সেখানে আধঘণ্টা খেলেই পেরিয়ে যাওয়া যায় একটি লেভেল। এই গেমে অচেনা অজানা যে কেউ বন্ধু হয়ে খেলতে পারে সেই বাচ্চার সঙ্গে। ফলত বাচ্চারা সহজেই আকর্ষিত হয় এই গেমে। অন্যদিকে অভিভাবকদের উপদেশও বাচ্চাদের কাছে মনে হতে পারে তার পছন্দের কাজ থেকে তাকে আটকে দেওয়ার প্রক্রিয়া। যা ভিডিও গেমে নেই। সেখানে সে যা খুশি সেটাই করতে পারছে। তাকে আটকানোর কেউ নেই।


কোনও বন্ধু না থাকা, অভিভাবকের সঙ্গ না পাওয়া, একা থাকা অনেক সময় একটি শিশুকে ভিডিও গেমের প্রতি নির্ভরশীল করে তোলে। এর পরেই যখন এই নির্ভরশীলতাকে ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয় তখনই দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 


সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালকে জানান, বাচ্চারা নিঃসঙ্গতা থেকে গেমের প্রতি আসক্ত হয়। ভিডিও গেম এমন একটি জিনিস যেখানে তাঁরা একই সঙ্গে বন্ধু এবং বিনোদন দুটোই পাচ্ছে। নিউক্লিয়ার পরিবার এবং বন্ধুহীনতা থেকেই গেমের মধ্যে নতুন সংসার পেতে নেয় তারা। এরপরে তাদেরকে জোর করে ভারচুয়াল পৃথিবী থেকে তাদের সরিয়ে আনতে চাইলেই ডিপ্রেশন থেকে শুরু হয় সমস্যা কারণ আসল পৃথিবীতেও তারা আসলে বন্ধুহীন। সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুকে সময় দেওয়া এবং উপার্জন এই দুইয়ে সঠিক মেলবন্ধনই এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার উপায়।    


ভিডিও গেমের প্রতি বাচ্চাদের আশক্তি এবং সেখান থেকে তৈরি হওয়া বাচ্চাদের মানসিক বিভিন্ন সমস্যার হাত থেকে বাঁচার উপায় জানিয়েছেন মনোবিদ স্বরণিকা ত্রিপাঠি। জি ২৪ঘণ্টা কে তিনি জানিয়েছেন বাচ্চাদেরকে এই সমস্যা থেকে বাঁচানোর পাঁচটি সহজ উপায়। 


তাঁর মতে ফোন থেকে বাচ্চারা সঙ্গ পাচ্ছে। যেই সঙ্গ সে আর কারোর থেকে পাচ্ছেনা। অভিভাবকরা যদি নিজের বাচ্চার সঙ্গে একটি বেশি সময় কাটান, তাঁকে যদি বিভিন্ন সময় একটু বেশি সঙ্গ দেন তাহলে সেই বাচ্চার মোবাইল ফোনের প্রতি নির্ভরতা কিছুটা হলেও কমবে। 


তিনি আরও বলেন বর্তমান যুগে বাচ্চাদের কথা শোনার লোক কমে গেছে কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেই বাচ্চাকে সমালোচনা করা হয়। তাঁর মতে অভিভাবকদেরকে অনেক বেশি সময় দিতে হবে তাদের বাচ্চার কথা শোনার জন্য। 


আরও পড়ুন: PUBG Addiction: কিছুতেই 'না' শুনতে পারে না, 'ইমপালসিভ কন্ট্রোল ডিসঅর্ডার'-এ ভুগছে আজকের প্রজন্ম!


একটি শিশু কাজ যে সবসময় ভুল নয় সেই অনুভূতি তৈরি করতে হবে বাচ্চাটির মনে। বিভিন্ন সময় অভিভাবক এবং বাড়ির অন্যান্য লোকেরা শিশুদের ভানাচিন্তাকে খারিজ করে দেন। শিশুদেরকে বিভিন্ন সময় এই কথা সুন্তে হয় তারা কিছু জানে না। সেই জায়গায় অভিভাবকদেরকে আরও অনেক বেশি সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং তাদের কথার গুরুত্ব দিতে হবে।


যে জগৎটা শিশুরা ফোনের মধ্যে তৈরি করছে সেই জগৎ বাড়ির মধ্যে তৈরি করা সম্ভব বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে আগেকারদিনে পরিবারের সকলে মিলে বিভিন্ন বোর্ড গেম খেলতেন। সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনা খুবই প্রয়োজন।


বাচ্চারা ভুল করবেই, এবং বাড়ির লোককে এই ভুলকে সহজভাবে গ্রহণ করে সেই সমস্যা থেকে শিশুকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।          


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)