নিজস্ব সংবাদদাতা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO-এর ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস আধানম ঘেব্রেইসাস সোমবার জেনেভায় WHO-এর সদর দফতরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, বিশ্বের সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি ঘটছে। ৭ জুন একদিনে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এক দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে এটা সর্বোচ্চ। এই পরিস্থিতিতে অনেক দেশেই স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

পরিকাঠামোর অভাবে হাসপাতাল থেকে রোগী ফেরানোর একাধিক ঘটনা বার বার সামনে আসছে। বিভিন্ন হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরতে ঘুরতে পরিষেবার অভাবে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে অনেকবার। কিন্তু জানেন কী পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, কোনও কোনও হাসপাতালই রোগীকে ফেরাতে পারে না! এ ক্ষেত্রে রোগীর অধিকার রক্ষায় রয়েছে নির্দিষ্ট আইনি বিধানও। পরিষেবা না দিয়ে রোগীর হয়রানির ঘটনায় হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা করারও আইনি ব্যবস্থা রয়েছে ভারতীয় সংবিধানে। আমাদের মধ্যে অনেকেই এই জনস্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। জনস্বাস্থ্য অধিকার কী? হাসপাতাল রোগীকে ফিরিয়ে দিলে কী করনীয়? জেনে নিন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সুকল্প শীল-এর মতামত...


ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের ‘রোগী অধিকারের দলিল’ (Charter of Patient Rights) রাজ্য সরকারগুলি মাধ্যমে প্রয়োগ করার বিধান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য অধিকার সংক্রান্ত নির্দেশ যা সকলেরই জেনে রাখা উচিৎ। প্রতিটি রোগীরই ধর্ম, বর্ণ, জাতি, বয়স, লিঙ্গ, ভাষাগত, ভৌগলিক ও সামাজিক বিভেদের উর্ধে অসুস্থতার ভিত্তিতে কোনও বৈষম্য ছাড়াই চিকিত্সা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।


রোগীর অধিকার সম্পর্কিত আইনী দলিল:


ভারতে রোগীর অধিকার সম্পর্কিত বিভিন্ন আইনি বিধান রয়েছে। সেগুলি হল...


১) ভারতীয় সংবিধান-এ্রর ২১ নম্বর ধারা (The Constitution of India, Article 21)।


২) ইন্ডিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল (প্রফেসনাল কনডাক্ট এটিকয়েট অ্যান্ড এথিক্স) রেগুলেশন ২০০২ [Indian Medical Council (Professional Conduct, Etiquette and Ethics) Regulations 2002]।


৩) গ্রাহক সুরক্ষা আইন ১৯৮৬ (The Consumer Protection Act 1986)।


৪) ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক অ্যাক্ট ১৯৪০ (Drugs and Cosmetic Act 1940)।


৫) ক্লিনিকাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট ২০১০ (Clinical Establishment Act 2010) ইত্যাদি।



রোগীদের ১৭টি সাধারণ স্বাস্থ্য অধিকার:


১) রোগী চিকিত্সক বা হাসপাতালের কাছে থেকে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য নিতে পারেন। এটি তাঁর অধিকার।


২) রোগী তাঁর স্বাস্থ্য এবং চিকিত্সার রেকর্ড এবং রিপোর্ট পেতে পারেন।


৩) জরুরী অবস্থায় সম্পূর্ণ বা অগ্রিম অর্থ প্রদান না করলেও কোনও হাসপাতাল রোগীর চিকিত্সা করার ক্ষেত্রে অস্বীকার করতে পারবে না।


৪) চিকিৎসক অথবা হাসপাতাল রোগীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখবে এবং সকলের সঙ্গে সুব্যবহার করবে।


৫) রোগীর সঙ্গে কোনও রকম বৈষম্য করা চলবে না।


৬) স্বাস্থ্য পরিষেবার নির্দিষ্ট গুণমান অনুযায়ী রোগীর চিকিত্সা ও সুরক্ষা পাওয়া উচিত।


৭) আপনি অন্যান্য উপলব্ধ চিকিত্সার বিকল্পগুলি নিজেই বেছে নিতে পারেন।


৮) রোগী দ্বিতীয় কোনও চিকিৎসকের মতামত (Alternative Treatment Options) নির্দ্বিধায় নিতে পারবেন।


৯) চিকিত্সার হার এবং সুবিধা সম্পর্কিত স্বচ্ছতা হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের বজায় রাখতে হবে।


১০) রোগী ওষুধ বা পরীক্ষার জন্য তাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে পারবেন।


১১) গুরুতর রোগের চিকিত্সা করার আগে, তার ঝুঁকি, পদ্ধতি এবং পরিণতিগুলি বলার জন্য রোগীর অনুমোদনের প্রয়োজন।


১২) রোগীকে অন্যত্র ট্রান্সফার বা রেফার করার আগে তার কারণ সঠিক ভাবে উল্লেখ করতে হবে।


১৩) বায়োমেডিক্যাল বা স্বাস্থ্য গবেষণাযর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কাছ থেকে রোগীর সুরক্ষা পাওয়া উচিত।


১৪) ক্লিনিকাল পরীক্ষায় সঙ্গে জড়িত রোগীদের সুরক্ষা প্রদাণ করা উচিত।


১৫) আর্থিক লেনদেন বা বিলিং সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলির কারণে রোগীর ছুটি (ডিসচার্জ) অথবা মৃতদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া কোনও হাসপাতালই স্থগিত করতে পারে না।


১৬) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রোগীর স্বাস্থ্য ও চিকিত্সা সম্পর্কে রোগীকে অথবা তাঁর পরিজনকে সহজ ভাষায় বিস্তারিত ভাবে বোঝাতে হবে।


১৭) রোগীর অভিযোগ শুনে হাসপাতাল বা চিকিৎসকে তার সমাধানের উপায় বের করতে হবে।


সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় রোগীর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে আইনি সুরক্ষার বিধান রয়েছে ভারতীয় সংবিধানে। এ ক্ষেত্রে পরিষেবা সংক্রান্ত কোনও ত্রুটি, অবহেলা, গাফিলতির বিরুদ্ধে কোনও চিকিৎসক বা হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনি অব্যবস্থা নিতে পারেন রোগী বা তাঁর পরিবার।