সুদীপ দে: আজ বিশ্ব ট্যাটু দিবস। খোলা পিঠ জুড়ে ডানা ছড়ানো ফিনিক্স, বা গোড়ালির কাছে উড়ছে ছোট্ট প্রজাপতি। ট্যাটু শুধু এখনকার ফ্যাশনই নয়, বহু যুগ আগে থেকেই কোনও কিছু চিহ্নিত করতেও করা হত ট্যাটু। বিশ্বের বহু ইতিহাসবিদের মতে আজ থেকে প্রায় ১৪ হাজার বছর মানুষ তার শরীরে প্রথম ট্যাটু বা উল্কি করেছিল। সে যুগে উল্কি বা ট্যাটু মূলত ধর্মীয় কারণে বা গোষ্ঠী চিহ্নিতকরণের জন্য করা হত। এ যুগে যা রীতিমতো ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা যায়, ১৬৯১ সাল নাগাদ উইলিয়াম ডাম্পিয়ার নামের এক পরিব্রাজকের হাত ধরে ইংল্যান্ড-সহ ইউরোপের বিভিন্ন অংশে ট্যাটু ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই ট্যাটুর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর এক বিচিত্র সংগ্রহের ইতিহাসও। ‘মোকোমোকাই’, মৃত মানুষের কাটা মাথার আজব সংগ্রহ।


                                                
                  নিজের আজব সংগ্রহের সঙ্গে ব্রিটিশ মেজর জেনারেল হোরাশিও গর্ডন রবলে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

১৮৬৪ সালে কর্মসূত্রে নিউজিল্যান্ডে যান ব্রিটিশ মেজর জেনারেল হোরাশিও গর্ডন রবলে। সেখানে তাঁকে বেশ কয়েক বছর থাকতে হয়েছিল। এই সময় গর্ডন রবলের নজর কাড়ে মাওরি উপজাতিদের গোটা মুখ জুরে আঁকা অদ্ভুত সহ আঁকিবুকি। মূলত নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার কিছু এলাকায় আজও মাওরি উপজাতির মানুষরা বসবাস করেন। মাওরি উপজাতির মানুষেরা তাঁদের ধর্ম বিশ্বাস বা সমাজ ব্যবস্থা অনুযায়ী সারা শরীরে আর মুখে উল্কি বা ট্যাটু করেন নিজেদের বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করার জন্য। মাওরি উপজাতির এই উল্কি বা ট্যাটু শরীরে আর মুখে চিরস্থায়ী চিহ্ন তৈরি করে। এই ট্যাটুকে বলা হয় ‘টা মোকো’। মাওরি উপজাতিদের ‘টা মোকো’ জেনারেল গর্ডনকে এতটাই আকৃষ্ট করে যে, তিনি ওই ট্যাটুগুলি নিজের নোট বইতে এঁকে তা নিয়ে লেখালেখি শুরু করে দেন। কিন্তু নিজের হাতে আঁকা ছবি দিয়ে তিনি পরিষ্কার করে সবাইকে বিষয়টি বোঝাতে পারছিলেন না কিছুতেই। বিরবণেও বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছিল না। তাই কিছু একটা বিকল্প উপায় ভাবতে শুরু করেন তিনি। শেষে এক অদ্ভুত পরিকল্পনা তাঁর মাথায় আসে। গর্ডন মৃত এই উপজাতিদের উল্কি করা মাথা কেটে নিজের কাছে সংগ্রহ করে রাখবেন বলে ঠিক করেন। যেমন ভাবা, তেমনি কাজ! এর পর থেকেই মৃত মাওরি উপজাতিদের কাটা মাথা বিশেষ উপায়ে সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ শুরু করেন জেনারেল গর্ডন। জেনারেল গর্ডনের সংগৃহীত ‘টা মোকো’ আঁকা এই মাথাগুলিকেই বলা হয় ‘মোকোমোকাই’।


আরও পড়ুন: টমাস হ্যারিয়েট ও ধূমপানের ইতিকথা


কিন্তু সে কালে কী ভাবে মৃত মানুষের মাথা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি? যত দূর জানা যায়, মাথার ভেতরের পচনশীল অংশগুলিকে (যেমন, ঘিলু, চোখ ইত্যাদি) বের করে এনে তার মধ্যে বিশেষ এক ধরনের গাছের ছাল আর এক ধরনের আঠা ভরে দিয়ে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হত। মুখের উপরের চামড়াতেও মাখিয়ে দেওয়া হত বিশেষ ওই আঠা। এই ভাবে উপযুক্ত উপায়ে সংরক্ষণের ফলে বছরের পর বছর পেরিয়েও প্রায় অবিকৃত থেকে গিয়েছে এই ‘মোকোমোকাই’। অবসরের পর যখন ইংল্যান্ডে ফিরে জেনারেল গর্ডন রবলে, তখন তাঁর সংগ্রহে ছিল প্রায় ৩৫-৪০টি ‘মোকোমোকাই’ বা উল্কি করা কাটা মাথা। কিন্তু বেশির ভাগই সংরক্ষণের উপযুক্ত জায়গার অভাবে আর অযত্নে নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে গর্ডন রবলের ‘মোকোমোকাই’-এর কয়েকটি ‘আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি’তে সযত্নে সংরক্ষিত রয়েছে।