অভিজিৎ মিত্র


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বিতান আর রমা দু’জনের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা হিমেল স্রোত নেমে যায়। এবার ওদের ডাক পড়বে।


বিয়ের পর ছ’বছর কেটে গেছে। প্রথমে ফিসফিস তারপর গুঞ্জন পেরিয়ে সেটা ভয়ঙ্কর রূপ নেয় দু’বছরের মাথায়। বিতানের মা রমাকে আর সহ্য করতে পারছিলেন না। প্রতি কাজে খুঁত বের করে, ‘বাঁজা’ গালাগাল দিয়ে, ‘ডাইনিটা মরেও না’ এসব বলে থেমে না থেকে রমার চুলের মুঠি ধরে একদিন মারতে শুরু করেন।


সেই প্রথমবার রমা নিজের বাঁ হাতের ভেন কেটে দেয়। অবশ্য বিতান খুব তাড়াতাড়ি নার্সিং হোমে নিয়ে যাবার জন্য বেঁচে যায়। বিতান আর বাড়িতে থাকেনি। রমাকে নিজের মায়ের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য ওকে নিয়ে ভাড়াবাড়ি চলে আসে।


বিয়ের বছর দেড়েকের মাথায় ধরা পড়ে রমার ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লক আছে, সেটা ঠিক হবার নয়। রমা বিতানকে একবার বলেছিল ‘তুমি চাইলে আমায় ডিভোর্স দিতে পার, আমার কিছু বলার নেই’। কিন্তু বিতান রমার কোন খুঁত খুঁজে পায় নি। গোটা সংসার রমা নিজের হাতে গুছিয়ে রাখে, সবার খেয়াল রাখে, প্রতিটা কাজ হাসিমুখে করে—বিতান বুঝে উঠতে পারেনি কোন অপরাধে সে রমার হাত ছেড়ে দেবে। ফলে বাড়ির অশান্তি কাটিয়ে বিতান দু’বছরের মাথায় রমাকে নিয়ে চলে আসে।


যদিও দুজনেই বুঝেছিল একটা শীতলতা ওদের ভেতর কাজ করছে। বিতানের বেশি সময় অফিসে থাকা বা রাত্রে টিভির সামনে হুইস্কির পেগ হাতে বসা, এসব বুঝিয়ে দিত। ব্যাপারটা সিরিয়াস হয় আরও দু’বছর পর, যখন বিতানের মোবাইলে ওদের অফিসের পারমিতার কিছু ছবি পাওয়া যায়। রমা সেই রাত্তিরে আবার কুড়িটা ভ্যালিয়ান ফাইভ খায়। অবশ্য খারাপ কিছু হবার আগেই বিতান ওকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে স্টমাক পাম্প করিয়ে দেয়। এরপর ওরা ইচ্ছে করেই দু’জনে দুটবছর আলাদা থাকে।


তারপর আবার, এই জানুয়ারির শুরুতে, বিতান রমাকে ওর বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। হাতে হাত রাখে।


-- আমার ওপর বিশ্বাস আছে?


-- আছে।


-- তুমি আমার বাচ্চার মা হতে চাও?


রমা অবাক হয়ে বিতানের দিকে তাকায়।


-- ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন ব্যাপারটা জান?


রমা ঘাড় নেড়ে না বলে। বিতান ওর হাতে হাত বোলায়।


-- আমি জানি না সত্যিই আমরা বাবা-মা হতে পারব কি না। কিন্তু শেষ চেষ্টা একবার করেই ছাড়ব। একটা ভাল ক্লিনিকের সন্ধান পেয়েছি যারা আই-ভি-এফ করে। চল, এখনই...


রমার এত টেনশন কোনদিন হয়নি। ও চেয়ে থাকে বন্ধ দরজাটার দিকে, যার ওপর একটা মা আর বাচ্চার ছবি রয়েছে। দরজার ওপর লেখা ‘টোকেন নং ৪১’। একটা অজানা আনন্দ, অজানা ভয়, অজানা বুক ধুকপুক। ও নিজের মুঠোয় রাখা ‘টোকেন নং ৪৩’ আরেকবার চেয়ে দেখে। নিজের অজান্তেই বিতানের হাতে হাত রেখে কেঁপে ওঠে।