অভিজিৎ মিত্র


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মেয়েটা রোজ ছাতা ভুলে যায়। বালি হল্ট ষ্টেশনের ডাউন প্লাটফর্মের পেছন দিকটায়, উল্টোদিকে তাকালেই যেখানে কেএমডিএ-র জলট্যাঙ্ক, আমরা রোজ সকাল ১০.৫৫-র লোকালটা ধরব বলে দাঁড়াই। সকালের চড়া রোদ থেকে বাঁচতে আমার একটা ছাতা, দুজনে শেয়ার করি। মেয়েটা ঠিক আমার পাশে এসে দাঁড়ায়, আমি একটু হেসে ছাতাটা ওর দিকে হেলিয়ে দিই, ও-ও হেসে আমার গা ঘেঁষে সরে আসে। ট্রেন এলে ও লেডিসে ওঠে, আমি পাশেরটায়।


একদিন তুমুল বৃষ্টি এল। মেয়েটা আমার গায়ে প্রায় মিশে গেল। ওকে বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে ডানহাতে ছাতা ধরে বাঁহাত ওর ভিজে পিঠে রাখলাম। আমিও মিশে গেলাম। সেদিন ট্রেন প্রায় ১০ মিনিট লেট। আমরা এক কামরায় উঠলাম। সেই প্রথমবার কথা হল।


--আজও আপনার নামটা জানা হয় নি। কোথায় থাকেন? কি করেন?


--মৌসুমি। বালিহল্টের কাছেই একটা ওয়ান বি-এইচ-কে তে ভাড়া থাকি। সল্টলেকে একটা মাড়োয়ারি ফার্মে টাইপিস্টের কাজ করি। আপনি?


--রাজা। সেক্টর ফাইভে একটা ক্যান্টিনে ক্যাশিয়ার। কাছেই থাকি আমার খুড়তুতো ভাইয়ের বাড়িতে। হন্যে হয়ে একটা থাকার যায়গা খুঁজছি। একা মানুষ, একটু মাথা গুঁজলেই হল।


মৌসুমি এবার চোখ তুলে তাকাল…


--আমার ফ্ল্যাটটা শেয়ার করবেন? ওটার ভাড়া বড্ড বেশি, চারহাজার টাকা। আপনি এলে বাড়িতে অসুস্থ মা-কে আরেকটু বেশি টাকা পাঠাতে পারব।


পরেরদিন এসে উঠলাম মৌসুমির ফ্ল্যাটে। আমি মাদুর পেতে ড্রয়িংরুমে শোয়া শুরু করলাম যাতে মৌসুমির কোন সমস্যা না হয়। সকালে ও দুজনের ব্রেকফাস্ট বানাতে শুরু করল, খেয়ে আমার ছাতার নিচে দুজনে ষ্টেশন অবধি, দুপুরে যে যার জায়গায় লাঞ্চ করি, রাত্রে আবার মৌসুমি দুজনের খাবার বানায়। প্রচুর গল্প হয়। জীবন হঠাৎ সুন্দরভাবে চলতে শুরু করল।


একমাস পর আমার বুকে হঠাৎ কফ, এত কাশি যে দুদিন অফিস কামাই। দ্বিতীয় রাত্রে মৌসুমি আমার বুকে গরম তেল মালিশ করে দিল।


--ঠান্ডা মেঝেয় শুয়ে আপনার বুকে কফ জমেছে। আজ থেকে আমরা বেডরুমের বিছানাটা শেয়ার করে শোব। আপনি পূবদিকে, আমি পশ্চিমে। মাঝে দুটো পাশবালিশ পেতে দেব।


--কিন্তু, সেটা কি --?


--কোন কিন্তু নয়। যে রকম বললাম, আজ থেকে সেটাই হবে।


সাতরাত আমরা এক বিছানা ভাগাভাগি করে শুলাম। কোন সমস্যা হল না। আমি ভাল হয়ে উঠলাম। কিন্তু আট নম্বর সকালে, রবিবার, সকাল নটায় দুজনেই একসঙ্গে ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারলাম যে আমাদের মাঝের পাশবালিশ গুলো মেঝেয় পড়ে আছে, আর আমরা দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি।


মৌসুমি লজ্জায় লাল হয়ে তাড়াতাড়ি উঠে পড়তে গেল, কিন্তু আমি ওকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। ও চোখ বুজে ফেলল।


-একটা কথা বলব?


-বলুন।


-উঁহু, আপনি ডাকলে বলব না, তুমি ডাকলে বলব।


-বল।


-আমরা ছাতা শেয়ার করেছি, রুম শেয়ার করেছি, ইমোশন শেয়ার করেছি, এমনকি বিছানা। আরেকটা জিনিস কি শেয়ার করতে পারি না?


-কি?


-একটা কমন সম্পর্ক। স্বামী-স্ত্রী, হাজব্যান্ড-ওয়াইফ। আমরা কি আজকেই বিয়েটা সেরে ফেলতে পারিনা?


মৌসুমির ঘন নিশ্বাস আর চুল আমায় পুরো ঢেকে ফেলল। এতদিন আমাদের মাঝে যে দু’ইঞ্চির একটা ছোট্ট ফাঁক ছিল, আজ সেটাও বুজে গেল।