পুজোর ফ্যাশনে `বিভাজিকা`য় আকর্ষণ নয়, `ঢেউ` উঠছে বোটনেকে
গর্জিয়াস থেকে সাদামাটা বোটনেক ব্লাউজ, চোখে আঙুল দিয়ে সমাজকে যেন সেই বার্তা-ই দিচ্ছে...
সুদেষ্ণা পাল
নারীর অঙ্গের ভূষণ শাড়ি। শাড়ি পড়তে ভালোবাসেন না এমন নারী হাতে গোনা। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততায় যে শাড়িগুলি আলমারির তাকে সযত্নে তোলা থাকে, কোনও অনুষ্ঠান এলেই হাত পড়ে সেগুলিতে। আর সেই অনুষ্ঠান যখন হয় শারদোৎসব, তখন শাড়ি ছাড়া বঙ্গনারী? এককথায় কল্পনাতীত। আর নারী অঙ্গের ভূষণ সেই শাড়িকে পরিপূর্ণ করে তোলে ব্লাউজ।
শাড়ি কেনার পরই সবার প্রথমে যার খোঁজ পরে তা হল এই ব্লাউজ। মন মতো ব্লাউজ না পেলেই নারীর মুখ হাঁড়ি। সে একটা সময় ছিল যখন ব্লাউজ বিষয়টা নিয়ে তেমন গবেষণা হত না। শাড়ির সাথে একটা ম্যাচিং ব্লাউজ হলেই হয়ে যেত। কিন্তু সেদিন এখন অতীত। দিন যত এগিয়েছে, নারীর সুচিন্তিত নজর গিয়ে পড়েছে ব্লাউজে। শাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বা বলা ভালো টেক্কা দিয়েই মনোযোগ আদায় করে নিয়েছে ব্লাউজ।
ব্লাউজের 'বিভাজিকা'য় নিজেকে আবেদনময়ী করে তুলতে চেয়েছে নারী। আর উঁকি মারা উন্মুক্ত সে বিভাজিকায় দৃশ্যমান নারীকে 'অপ্সরা' ভেবে তাঁর প্রেমে পাগল হয়েছে এমন পুরুষকুলের সংখ্যাও কম নয়। শুধু কি ব্লাউজের 'বিভাজিকা'তেই আকর্ষণ? না একমদই নয়... গোল গলা বা চৌকো গলা ব্লাউজের পিঠের অবগুন্ঠনও ক্রমশ যেন খসে পড়ে পড়েছে নারী অঙ্গ থেকে। অনেকটা যেন রানি-যুবরানিদের দেরাজ থেকে 'চুরি' করে আনা কাঁচুলিতে নিজেকে সাজিয়ে তোলা!
কিন্তু ফ্যাশন তো জীবনের মতোই চিরন্তন নয়... ফ্যাশন বহমান। আর তাই কালের নিয়মেই বদলেছে নারীর পছন্দ। আর নারীর পছন্দের সাথেই আমূল বদলে গিয়েছে ব্লাউজের কাটও। এবার পুজোর ফ্যাশনে তাই আর 'বিভাজিকা'য় আকর্ষণ নয়, 'ঢেউ' উঠছে বোটনেকে। অষ্টাদশী থেকে মধ্যবয়সী সব নারী অঙ্গেই শোভা পেতে চলেছে বোটনেক ব্লাউজ।
বোটনেক, নামেই লুকিয়ে আছে তার নকশা বৈশিষ্ট্য। বিভাজিকাকে উন্মুক্ত করা নয়, বরং বিভাজিকাকে ঢেকে ব্লাউজ উঠে গিয়েছে নেকলাইন পর্যন্ত। দোকানে দোকানে এবার শুধুই হরেক রকমের বোটনেক ব্লাউজের ভিড়। দোকানদাররা বলছেন, "চাহিদা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ঝড়ের গতিতে শেষ হয়ে যাচ্ছে বোটনেক। যে আসছে, তার শুধু একটাই আবদার। দাদা, বোটনেক চাই।" বিক্রির নিরিখে অন্য সব ধরনের ব্লাউজকে এবার পুজোয় দশ গোল দিচ্ছে বোটনেক। কিছু এমনি ব্লাউজের বিক্রি থাকলেও, শতাংশের বিচারে তা নেহাতই কম। সেরকম চাহিদা নেই গর্জিয়াস জ্যাকেট ব্লাউজেরও।
'A টু Z' সব দোকানদাররাই বলছেন, "এবার পুজোয় প্যান্ডেল কাঁপাবে এক সে বড়কর এক বোটনেক ব্লাউজ। গতবার সে তার উপস্থিতির একটু-আধটু জানান দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এবার একেবারে সুনামির মতো আছড়ে পড়েছে। কোনওটা সামনে বোতাম দেওয়া বোটনেক তো কোনওটা পিছনে। যে যেটায় স্বচ্ছন্দ, সে সেটাই কিনছে। শাড়ি, তার সাথে মানানসই বোটনেক ব্লাউজ আর হাল্কা গয়না। এবার পুজোয় এটাই 'ইন' ফ্যাশন।" ত্রিনয়নী থেকে মায়ের কোলে ছোট্ট গণশা, ধামসা মাদল থেকে স্বস্তিকা, বোটনেক ব্লাউজের চওড়া পিঠে শোভা পাচ্ছে সব ধরনের নকশা-ই।
ট্রেন্ডিং। ক্রেজ। বিবর্তন। ফ্যাশনের অভিধানে আর যে যে শব্দ থাকতে পারে, বোটনেকের তাৎপর্য খুঁজতে গিয়ে এই সবকটা বিশেষণই পেলাম। কৌতুহলবশতই কথা বলেছিলাম দোকানে বোটনেক কিনতে আসা অপরিচিত গৃহিণী থেকে ফ্যাশনিস্তার সঙ্গেও। বোটনেক ব্লাউজকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁরা কেউ বললেন, 'স্বচ্ছন্দ। কমফরটেবল।' আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, 'সিজলিং তো নয়, অ্যাপিলিং?' উত্তর এল, 'স্মার্ট'।
'ডিপ কাট' থেকে 'বোটনেক'... 'সিজলিং' থেকে 'স্মার্ট'... কোথাও গিয়ে এ যেন নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার সাক্ষীও বটে। নারী রূপের আবেদন তাঁর বিভাজিকায় নয়, ব্যক্তিত্বে। গর্জিয়াস থেকে সাদামাটা বোটনেক ব্লাউজ, চোখে আঙুল দিয়ে সমাজকে যেন সেই বার্তা-ই দিচ্ছে। ডিজাইনার থেকে ফ্যাশনিস্তা, গৃহিণী থেকে কর্মরতা সবারই তাই এবার একযোগে একটাই স্টেটমেন্ট, 'বোটনেক'।