নিজস্ব প্রতিবেদন: রোজকার জীবনের উদ্বেগ, চিন্তা দূর করার জন্য় অনেকেই ঘুমের ওষুধ খান। কিন্তু স্ট্রেস কমাতে বাড়িতেই ভেষজ উপায়ে খান কয়েকটি ওষুধ। যেমন- চামোমাইল একটি ফুলের নির্যাস ৷ এর চা একদিকে যেমন স্বাদে অতুলনীয়, অন্যদিকে তেমনই শরীরের বিভিন্ন রোগে উপকারী ৷ দু'ধরনের চামোমাইল রয়েছে, একটি রোমান চামোমাইল (Roman chamomile) এবং আরেকটি জার্মান চামোমাইল (German chamomile) ৷ দু‘টোই ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায় ৷ জেনারালাইজড অ্যাংগজাইটি ডিসঅর্ডারের (Generalized Anxiety Disorder, GAD) ক্ষেত্রে এর প্রভাব এবং সুরক্ষা নিয়ে ২০১৬-য় একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা হয় ৷


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

চামোমাইল ১২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৯৩ জন অংশগ্রহণকারী ১ হাজার ৫০০ গ্রাম চামোমাইল নিয়েছেন ৷ ২৬ সপ্তাহ পর অর্ধেক অংশগ্রহণকারী তাঁরা চামোমাইলের বদলে প্ল্যাসিবো নিতে শুরু করেন, বাকি অর্ধেক চামোমাইল চালিয়ে যান ৷ দেখা গেল, যাঁরা প্ল্যাসিবো নিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে যাঁরা চামোমাইল নিয়েছেন, তাঁদের অবস্থার খুব একটা পার্থক্য নেই ৷ কিন্তু পরে যখন তাঁদের সমস্যা ফের বাড়ল, তখন যাঁরা চামোমাইল নিয়েছিলেন তাঁদের লক্ষণগুলি তুলনায় কম তীব্র ছিল ৷ তবে অনেকের এই ভেষজে অ্যালার্জি থাকতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবে চামোমাইল চা খেয়ে দেখতে পারেন ৷ভালেরিয়ান (Valerian, Tagara)ইউরোপ আর এশিয়ার অনেক জায়গায় এই ভেষজ গাছ পাওয়া যায় ৷ এটা একদিকে খাবারে ব্যবহার করা হয়, অন্যদিকে অনিয়মিত ঘুম, বিশেষত ইনসমনিয়া, মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা, নার্ভাস অ্যাস্থমা, হাইপোকন্ড্রিয়া, মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন, অবসাদ, মনঃসংযোগের অভাবের ক্ষেত্রেও কাজে লাগে ৷
এর প্রভাব নিয়েও গবেষণা হয়েছে ৷ তবে ন্যাশনাল সেন্টার ফর কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড ইনটিগ্রেটিভ হেলথ বা এনসিসিআইএইচ (National Center for Complementary and Integrative Health, NCCIH) এই গবেষণার ফলাফলকে পুরোপুরি সমর্থন করেনি ৷ তাদের মতে, গর্ভাবস্থায় বা সদ্য মা হয়েছেন এমন ক্ষেত্রে এবং ৩ বছরের নিচে ছোটদের এটা ব্যবহার করা উচিত নয় ৷ মদের সঙ্গে এই ভেষজ মিশিয়ে পান করলে ভয়ঙ্কর কাণ্ড হতে পারে ৷


গালফিমিয়া গ্লাউসা (Galphimia Glauca)এই ভেষজ মেক্সিকোয় পাওয়া যায় ৷ সেখানকার বাসিন্দারা দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ কমাতে এটাকে ট্র্যাঙ্কুইলাইজার (tranquilizer) হিসেবে ব্যবহার করেন ৷ ২০২১ সালে জিএডি-র চিকিৎসায় এর প্রভাব নিয়ে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয় ৷ এতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে ১২ সপ্তাহ ধরে জি গ্লাউসা দেওয়া হয় আর বাকিদের দুশ্চিন্তা কমানোর ওষুধ লোরাজেপাম ডি (lorazepam D) দেওয়া হয় চিকিসকের পরমার্শ অনুযায়ী ১৩ সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা এই গবেষণার পরেও আরও 3 সপ্তাহ ধরে তাঁদের উপর নজর রাখেন গবেষকরা ৷ ফলাফলে দেখা গেল যে সব অংশগ্রহণকারীরা প্রতিদিন ( 0.175 mg) জি গ্লাউসা নিয়েছেন, তাঁদের জিএডি-র লক্ষণ অনেক বেশি কমেছে, তাঁদের তুলনায় যাঁরা লোরাজেপাম নিয়েছেন ৷ একই সময়ে, 2018-য় প্রকাশিত একটি গবেষণার পর্যালোচনায় দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে ৷


কাভা-কাভা (Kava-Kava)প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলিতে মুড বদলানো, চাপ কমানোর জন্য এই ভেষজ দিয়ে তৈরি পানীয় খাওয়া হয় ৷ ২০১৩-য় জিএডি-র চিকিৎসায় প্ল্যাসিবো-র পাশাপাশি কাভা ব্যবহার করে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা হয় ৷ 75 জন অংশগ্রহণকারী 6 সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন ৷ তাদের একটি দলকে প্রতিদিন ১২০ এমজি, দ্বিতীয় দলকেও একই ভাবে ২৪০ এমজি কাভার রস দেওয়া হত ৷ তৃতীয় দলের সদস্যদের প্ল্যাসিবো দেওয়া হয়েছিল ৷ যাঁরা প্ল্যাসিবো নিয়েছিলেন, তাঁদের তুলনায় যাঁরা কাভার রস খেয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে দুশ্চিন্তা কমার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায় ৷ অশ্বগন্ধা, ভালেরিনা ও অন্য ভেষজ উদ্ভিদগুলি আয়ুর্বেদে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি কমাতে ব্যবহার করা হয় ৷  তবু এগুলি ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত ৷