"যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,
মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা,
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে–
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।" -মৃত্যু মানে কেবলই একটা জীবনের ইতি, একটা শরীরে পরিসমাপ্তি। তা কখনেই সম্পর্কের শেষ নয়। বরং, মৃত্যুই এমন যা জীবিত থাকাকালীন অনেক  চেপে রাখা সত্যকে সামনে নিয়ে আসে। স্মৃতি চারণায় বিস্মৃতির সরণি বেয়ে হেঁটে আসে অনেক সুখ, দুঃখ, ভালোলাগা, অভিমান, উল্লাসের এক একটা মুহূর্ত। মৃত্যু এমনই যা মুখে কিছু না বলে চোখের জলে কথা বলিয়ে দেয়। চোখের জল আর কম্পমান ঠোঁট অনর্গল বলে দেয় মনের ভিতর চেপে থাকা এমন সব কথা যা, মানুষটি বেঁচে থাকাকালীন বলে ওঠা হয়নি। আবার এমনও হয় মানুষ কথা হারিয়ে ফেলে, খুঁজে পায় না সম্বিৎ। কখনও কখনও সমস্ত খারাপকে ভুলে গিয়ে কেবল মানুষটির ভালোলাগা, মানুষটিকে ভালোবাসার কারণ খুঁজতেও দেখা যায় স্মরণসভায়। মৃত মানুষের স্মরণে কী কী বলেন মানুষ?


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

'বীরগাথা'
"যখন আমার স্মৃতি নিয়ে বিশ্ব কথা বলবে, তখন তাঁরা বলবে, আমি দানবদের সঙ্গে লড়াই করেছ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঋতু বদলায়। পরিবর্তন হয় নামের। কিন্তু এমন কিছু নাম যা অজেয় হয়ে থাকে। নামের মৃত্যু হয় না। ওরা বলবে আমি হেক্টরের সময়কার বীর ছিলাম। আমি অ্যাকিলিস", নিজের মৃত্যুর পর নিজের স্মরণে বলে গিয়েছিলেন অ্যাকিলিস, এমনটাই মিথ। আর তাঁর মুখাগ্নিকালে সেনাপতি কেবল একটাই বাক্য বলতে পেরেছিলেন, "আমার ভাই, তুমি শান্তি খুঁজে নিও"। যারা ট্রয়ের গল্প জানেন, তাঁদের এ গল্প অজানা নয়। তবে সবাই তো বীর হয় না, তাঁদের বীরগতিও প্রাপ্তি হয় না। তবে যারা বীর তাঁদের স্মরণে যে কথা সবাই বলে থাকেন, "সব মরণ নয় সমান"। ঠিক যেমনটা শহিদ ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তের জন্য বলা হয়। যেমনটা বলা হয় শহিদ ক্ষুদিরামের জন্য। 'বিপ্লবী'। আজকের ইতিহাস পাঠ্য পুস্তকে 'সন্ত্রাসবাদী' তাঁর সম্মানের অমর্যদা।


'সমবেদনা'
মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রথম যা যা আমাদের সমাজ বলে থাকে, 'ওর মৃত্যুতে দূঃখ হচ্ছে। এই ক্ষতি পূর্ণ হবার নয়'। এরপর, 'স্বর্গদ্যানে শান্তি খুঁজে পাক ওর আত্মা' ইত্যাদি। আরও এক অনুভব যা কেবল জীবিতকালেই নয়, মৃত্যুর পরও সদা চিরসজীব, 'আমি তোমাকে ভালবাসি'।


'বাস্তব মেনে নেওয়া'
মৃত্যু রূঢ় বাস্তব। হঠাৎ এমন সত্যি সয়ে নেওয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। মৃত্যুকে তো স্বাগত জানানো যায় না, তবে স্বাগত জানাত হয় চরম সত্যিকে। স্মৃতিচারণা বা নীরবতা অথবা স্মরণে নিজেকে উপস্থিত থাকা এসবটাই নিজের মনকে স্বান্তনা আর মৃত মানুষটিকে 'উপহার'।