নিজস্ব প্রতিবেদন: বিগত ৫-৬ মাস ধরেই করোনার সঙ্গে বিশ্বের শতাধিক দেশের লক্ষাধিক মানুষ। করোনা সঙ্কটে সর্বত্র বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। এর পাশাপাশি অর্থ সঙ্কট, অনিশ্চয়তা পরোক্ষ ভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে অপুষ্টিজনিত নানা সমস্যা। বর্ষা শুরু হওয়ায় করোনার পাশাপাশি নানা রোগ-ব্যধির ভয় আরও বেড়েছে! এই পরিস্থিতিতে সুস্থ ও নিরাপদ থাকার উপায় জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ নাজনিন হুসেন।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

করোনার ধাক্কায় বিশ্বব্যাপী বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। এর পাশাপাশি অপুষ্টিরও একটি বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে সর্বত্র। করোনা সংকট বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষকে এই ক’মাসে ক্রমশ চরম অপুষ্টির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নাজনিন হুসেন জানান, আমাদের নিত্য দিনের ডায়েটের গুণমান এবং পুষ্টি উপাদান বিপজ্জনক ভাবে কমছে। এই অপুষ্টিজনিত সমস্যা তাঁদের মধ্যেই বেশি দেখা দেবে যাঁরা রেড কন্টেনমেন্ট জোনের বাসিন্দা।


তিনি জানান, লকডাউন বা তার পরবর্তী পরিস্থিতিতে এমন অনেকেই আছেন যাঁরা পুষ্টিবিদের পরামর্শ, অস্ত্রোপচারের বিলম্ব, সময় মতো টিকা নেওয়া ইত্যাদি জরুরি বিষয়গুলি এড়িয়ে চলেছেন। এই সব গাফিলতি তাঁদের স্বাস্থ্যের উপরেই সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। এ ছাড়া, এই অবস্থায় ক্যান্সার, রেনাল ডিজিজ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও এটি একটি জটিল সময় হয়ে উঠেছে।


পুষ্টিবিদ হুসেন জানান, ইতিমধ্যেই বর্ষার সূচনা এই সমস্যাকে আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি বছর বর্ষার সময়ে হওয়া অপ্রত্যাশিত রোগগুলি বিশেষ করে ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া এবং অন্যান্য সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে করোনার সংক্রমণের পাশাপাশি এই রোগগুলিও বর্ষার সময় পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, মহামারী সৃষ্টিকারী বিভিন্ন রোগ বর্ষায় তার প্রভাব ও সংক্রমণ ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তোলে। শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, এমন খাবারগুলি আর্থিক সঙ্কটের কারণেই অনেক পরিবারে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ডিম, দুধ, মাংস এবং ডালের মতো প্রোটিন জাতিয় খাবারগুলি।



করোনা সঙ্কট, স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়জনীয় খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্থাতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এই বর্ষার সময় এই সঙ্কট আরও বেড়েছে। কারণ, এই সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির মতো রোগ দ্রুত সংক্রমিত হয়। এই সমস্ত রোগ আমাদের হজমশক্তি বা ডাইজেসটিভ সিস্টেমকে দুর্বল করে তোলে।


ঘরে তৈরি টাটকা খাবার এবং ড্রাই ফ্রুটস-এর মতো নিরাপদ খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বাজার থেকে আনা সমস্ত ফল এবং শাক-সবজি ভাল করে ধুয়ে নিন। কেনার সময় সবুজ শাক সবজি, ফুলকপি, ব্রকোলি, বাঁধাকপি ইত্যাদি কেনার সময় তাতে কোনও পোকা-মাকড় আছে কিনা তা অবশ্যই দেখে নিন। মুগ ডাল, মুসুর ডালের মতো পুষ্টিকর খাদ্য প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন। খাবার পাতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু অবশ্যই রাখুন। গোলমরিচ, আদা, রসুন, দারচিনি এবং হিং-এর মতো ভারতীয় মশলা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই রান্নায় এগুলির ব্যবহার বাড়িয়ে দিন।


আরও পড়ুন: বাড়িতে থেকেও নিস্তার নেই করোনা থেকে! অবাক করা দাবি দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষজ্ঞদের


পুষ্টিবিদ হুসেন জানান, কাঁচা লঙ্কা, লাউ, টমেটো, বেল, মটরশুটির মতো শাক-সবজি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলি সারা সপ্তাহজুড়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খান। এছাড়া আমলকি, কাঁচা হলুন, কলা, লিচু, ডালিম, চেরির মতো মৌসুমী সাইট্রাস ফলগুলি প্রতিদিনের ডায়েটে একটু একটু করে অন্তর্ভুক্ত করুন। কারণ, করোনা ছাড়াও বর্ষাকালীন বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে শরীর সুস্থ রাখা প্রয়োজন। আর শরীর সুস্থ রাখতে হলে পুষ্টিকর খাবার খেতেই হবে। তাই এই বর্ষার সময়টায় সঠিক ডায়েট আর সতর্কতায় সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।


 


নাজনিন হুসেইন, প্রিন্সিপ্যাল কোওর্ডিনেটর প্রিন্সিপ্যাল নিউট্রিশন এন্ড ডায়েটিক্স ইওন।