সুদীপ দে: ২০২০-২১ অর্থবর্ষের বাজেট (Union Budget 2020) পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। দ্বিতীয় মোদী সরকারের এটাই প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট। ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে একাধিক কড়া পদক্ষেপের উল্লেখ করেছেন নির্মলা সীতারামন। বাজেটে মধ্যবিত্তদের জন্য আয়কর ছাড়ের কী সুবিধা থাকবে? কোন কোন জিনিসের দাম বাড়ছে? কোন কোন জিনিসের দাম কমল?


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এবারের বাজেটের পর বাড়ছে স্টিল, তামা ও চিনামাটির বাসনপত্রের দাম। কারণ, এগুলির আমদানি-রফতানি শুল্ক দ্বিগুণ হয়ে ২০ শতাংশ হচ্ছে। দাম বাড়ছে ক্যাটালাইটিক কনভার্টার, গাড়ির যন্ত্রাংশের। আমদানিকৃত আসবাবপত্র ও জুতোর দাম বাড়ছে এই বাজেটে। সিগারেট ও অন্যান্য তামাকজাত পণ্যেরও শুল্ক বাড়ছে।


এই বাজেট নিয়ে বিভিন্ন বিভি চ্যানেলে সারা দিন ধরে নানা চুল চেরা বিশ্লেষণ, আলোচনা চলবে। বাজেটের পক্ষে বা বিপক্ষে নানা মতামত, নানা ব্যাখ্যা উঠে আসবে এই আলোচনায়। কিন্তু যাঁরা প্রতিদিন হেঁসেল সামলাচ্ছেন, বাজার-হাট ঘুরে, দর-দাম করে সংসারের আয় বুঝে ব্যায়ের চাপ সামলাচ্ছেন, তাঁদের চোখে এই বাজেট কতটা আশার আলো দেখাচ্ছে। এই বাজেটকে কী ভাবে দেখছেন গৃহিনীরা, খবর নিল Zee ২৪ ঘন্টা ওয়েব।



উত্তর ২৪ পরগণার পলতার বাসিন্দা, মুনমুন দাস বলেন, “আমি একজন গৃহ বধূ, তাই স্বামীর আয়ের উপর আমাদের নির্ভর করে সংসারের খরচ। বাজেটের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ বুঝি না। যেটা বুঝি সেটা হল, আগে ১০০ টাকায় কতটা বাজার ঘরে ঢুকত আর এখন কতটা বাজার ঘরে আসে। আয়করের নতুন স্ল্যাব চালু হলে তার প্রভাব আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের উপরেও পড়তে বাধ্য। এমনিতেই জিএসটি চালু হওয়ার পর সাধ আর সাধ্যের মধ্যে অনেকটাই ফারাক হয়ে গিয়েছে। বেশির ভাগ জিনিসপত্রের দাম, বাজার দর আকাশ ছোঁয়া। এই বাজেটে আয়কর ছাড়ের ফলে সংসারের সঞ্চয় কতটা বাড়ে সেটাই এখন দেখার।”



সীতারামনের বাজেট সম্পর্কে দক্ষিণ কলকাতার কুঁদঘাটের বাসিন্দা, স্কুল শিক্ষিকা সঞ্চয়িতা রায় বলেন, “সকলের মতো শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও আজ নজর ছিল বাজেটে। সমস্ত ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ বাড়লেও শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দে সব সময় পিছিয়ে থাকে। তবু এ বার এই ক্ষেত্রে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার কোটি। দেখে ভাল লাগল। অর্থমন্ত্রী বললেন যে, দেশে নতুন শিক্ষানীতি শীঘ্রই আসতে চলেছে। তার প্রভাব বা ফলাফল ভবিষ্যতই বলবে। তবে শিক্ষিকা হলেও আমি একজন গৃহিণী। তাই বাজার অর্থনীতি আমার সংসারের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে। যে ভাবে জিনিষ পত্রের মূল্যবৃদ্ধি হয়ে চলেছে, তা নিয়ন্ত্রণ না হলে তার প্রভাব সর্বস্তরেই পড়বে। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ফারাক এখন অনেকটাই কমে এসেছে। সংসার চালাতে তাই নাভিশ্বাস উঠছে মধ্যবিত্তর।”



এই বাজেট সম্পর্কে একটি বেসরকারি কর্মসংস্থান সংস্থার কর্ণধার, দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোনীর বাসিন্দা মৌমিতা দে বলেন, “স্নাতক স্তরে আমার একটি বিষয় ছিল  অর্থনীতি। সে কারণে ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সামান্য ধারণা আমার আছে। তদারকি, নিয়োগ এবং ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পারিশ্রমিক কাঠামোতে অবশ্যই উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা থাকা জরুরি। যো কোনও ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নিশ্চয়তা ও প্রতিশ্রুতির অবলম্বন থাকা প্রয়োজন। দৈনন্দিনের খরচ যে ভাবে বেড়ে চলেছে, গ্যাসের দাম, তেলের দাম, সবজির দাম... সেই তুলনায় মানুষের আয় বাড়ছে কী? তাই এই বাজেটে আয়কর ছাড়ের ফলে সংসারের সঞ্চয় কতটা বাড়ে সেটাই এখন দেখতে হবে। এখনই এই বাজেটকে ভাল বা মন্দ— কোনওটাই বলতে পারছি না।”



দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট সম্পর্কে দক্ষিণ কলকাতার বিজয়গড়ের বাসিন্দা, স্কুল শিক্ষিকা সঙ্ঘমিত্রা চ্যাটার্জ্জী বলেন, “আমি একজন শিক্ষিকা তার সঙ্গে সঙ্গে সংসারের খুঁটিনাটির দায়িত্বও আমাকেই সামলাতে হয়। তাই আজ বাজেট ঘোষনায় ভালো লাগল আয়কর ছাড়ের বিষয়টি। বার্ষিক ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর ছাড়ের ঘোষণায় একটু স্বস্থি পেলাম। আশা করছি, এ বার হয়তো একটু সঞ্চয় করতে পারবো। এখন একটাই অপেক্ষা, আগে ২০০ টাকা বাজারে নিয়ে গেলে ব্যাগটা যতোটা ভরতো এখন কি তার থেকে বেশি ভরবে নাকি কম হবে! এরচেয়ে বেশি কিছুতেই আমার আর আগ্রহ নেই। আমি চাই, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামে লাগাম টানা হোক। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ুক বা কমুক, তবু কিনতেই হবে, খেতেই হবে, চলতেই হবে। তর্ক হবে, ঠিক-বেঠিক নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু তার পরেও বাজার চলতি দামে জিনিসপত্র আমাদের কিনতে হবেই। কারণ, আমরা সাধারণ নাগরিক।”